আপনি যদি পণ করে নেন যে, যেই পরিস্থিতিই হোক আমি মসজিদের সামনে কাতারে গিয়ে নামায পড়ব। তবে একারণে আপনাকে কোন কোন সময় মুসল্লীদের কষ্ট প্রদান করাটা বাধ্যতামূলক। আপনি যদি নিজের ছেলের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন যে তার সব দাবী মেনে নিবেন। তবে আপনাকে অবশ্যই কাণ্ডজ্ঞানহীন অভিভাবক হতে হবে। যে কিনা সন্তানের দাবীর সঙ্গতি-অসঙ্গতির ধার ধারবে না। ন্যায় অন্যায়ের বাছ রাখবে না। এমন অভিভাবককে অভিভাবক হিসেবে যেমন পূর্ণ মার্ক দেওয়া যায়, তদ্রূপ মানবতার দৃষ্টিতেও তাকে স্বাভাবিক মানুষের স্বীকৃতি দেওয়া যায় না।
গত দুদিন যাবত বাংলাদেশের সড়কপথ দেশের শিক্ষার্থীদের পদভারে ন্যুব্জ। কচিকাঁচা শিশু শিক্ষার্থী থেকে নিয়ে উচ্চপর্যায় শিক্ষার্থীগণও এই সংগ্রামে জড়িত। এই সংগ্রামের অন্যতম একটি দাবী হলো নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত করণ। লক্ষণীয় বিষয় হলো, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে কারো কোন তেমন আগ্রহ চোখে পড়ছে না। কিন্তু কেন? সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রদের জীবন কি এতই মূল্যহীন?
দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী ব্যক্তিরা ছাত্রদের নিহত হওয়া সংবাদে হেসে হেসে ইন্টারভিউ দেন। সংবাদমাধ্যমগুলো সংবাদরস খুঁজে বেড়ায় নির্বাচন নামক প্রহসনে। সবচেয়ে ব্যথিত চিত্র হলো, এমন একটা আন্দোলনেও পুলিশ শিশু ও তরুণ ছাত্রদেরকে লাঠিপেটা করে।
এদেশের আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করাটা জাতীয় চেতনায় পরিণত হয়েছে। ধর্মীয় আন্দোলন, অধিকার আদায় আন্দোলন, কোটা বিরোধী আন্দোলনসহ বর্তমানের যাতায়াতের নিরাপত্তা আন্দোলনেও পুলিশ নামক এলিয়েনদের আচরণ অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের দেশের নিরাপত্তার কর্ণধার প্রশাসন এ ববিষয়ে খুব ভালভাবেই অঙ্গীকারাবদ্ধ যে, ইস্যু যাই হোক দেশে কোন আন্দোলনই চলবে না। আন্দোলনের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে দেওয়া যাবে না!
বড় সেলুকাস এদেশের চিত্র। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে যে ছাত্র সমাজের তাজা প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার চেতনায় পাওয়া আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ। অথচ সেই ছাত্র সমাজের বুকে বুটের আঘাত হানে এদেশের পুলিশ নামক বিকৃতমনা কিছু প্রাণী। যে ছাত্র সমাজ এদেশের ভবিষ্যত তাদেরকে নায্য দাবীর বেলায়ও চোখমুখ বন্ধ করে লাঠিপেটা করতে সামান্যতম দ্বিধাবোধ করে না। কী বিচিত্র! হায় মানসিকতা!!
কী লেখা আছে বাংলাদেশ নামক এই ছোট্ট একটা ভূখণ্ডের ভাগ্যে আজ সময়ের এই মোড়ে এসে তা অনুমান করাটা অসম্ভব। এ দেশটা আজবদেশ হতে আর বেশি সময় বাকী নেই। যেখানে মানুষ জন্ম নিলেও হাসে, মরে গেলেও হাসে, সেই দেশকে আপনি কী বলবেন?