বুধবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৮

চাঁদের অবস্থান কোথায়?

এটা কোন বৈজ্ঞানিক আলোচনা নয়। শুধুমাত্র কুরআন ও হাদীসের আলোকে এ বিষয়ে কিছুটা ধারণা নেওয়া। অনেককেই বলতে শোনা যায় যে, সূর্যের অবস্থান নাকি চতুর্থ আসমানে। তারা দলীল হিসেবে বলেন, মিরাজের রজনীতে রাসূল সা. চতুর্থ আসমানে সূর্য দেখেছেন। এছাড়াও আল্লামা ইবনে কাসীর রাহ. আলাইহি "আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া" এর মধ্যে সূর্যের গতিবিধি নিয়ে আলোচনায় একটি রিওয়ায়েত তুলে ধরেন। সে রিওয়ায়েতটি হলো, "প্রথম আসমানে চাঁদ, দ্বিতীয় আসমানে বুধ, তৃতীয় আসমানে শুক্র, চতুর্থ আসমানে সূর্য, পঞ্চম আসমানে মঙ্গল, ষষ্ঠ আসমানে বৃহস্পতি এবং সপ্তম আসমানে রয়েছে শনি।

ইবনে কাসীর রাহ. এর এই রিওয়ায়েত ও মেরাজের ভূল বর্ণনার দ্বারা অনেকেই বলে থাকেন যে, সূর্যের অবস্থান চতুর্থ আসমানে। আসলেই কি তাই? আসুন প্রথমে কুরআন ও হাদীসে সূর্যের অবস্থান সম্পর্কে কী বলা হয়েছে তা জেনে নিই

মহান রাব্বুল আলামীন মানব জাতির জীবন যাপনের জন্যে তাবৎ জিনিসপত্র সৃষ্টি করে দিয়েছেন। জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং তা গাছপালা, নদীনালা ও পাহাড়-পর্বত দ্বারা স্থাপন করে দিয়েছেন। আসমানকে সৃষ্টি করেছেন। তাকে চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র দ্বারা সুসজ্জিত করেছেন। এসম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামীন বলেন,
إِنَّا زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِزِينَةٍ الْكَوَاكِبِ الصافات-   
"নিশ্চয় আমি সর্বনিম্ন আসমানকে তারকারাজির দ্বারা সুসজ্জিত করেছি।" (সূরায়ে সাফফাত, আয়াত - ৬)

অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে,
وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُومًا لِّلشَّيَاطِينِ ۖ وَأَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابَ السَّعِيرِ
অর্থঃ আমি সর্বনিম্ন আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুসজ্জিত করেছি; সেগুলোকে শয়তানদের জন্যে ক্ষেপণাস্ত্রবৎ করেছি এবং প্রস্তুত করে রেখেছি তাদের জন্যে জ্বলন্ত অগ্নির শাস্তি।" ( সূরায়ে মুলক, আয়াত নং ৫)

এই আয়াতদ্বয় দ্বারা বুঝা যায়, চন্দ্র ও সূর্যসহ যাবতীয় তারকারাজির অবস্থান সর্বনিম্ন আসমান অর্থাৎ প্রথম আসমানে। ইমাম ইবনে কাসীর রাহ. আলাইহি একথার সাপেক্ষে বলেন,
فقال: وقال آخرون: بل الكواكب كلها في السماء الدنيا،
অর্থঃ- "আরেক জামাত বলেন, বরং তারকারাজির সবকিছুই সর্বনিম্ন আকাশে অবস্থিত। (তুহফাতুন নুবালা মিন ক্বসাসিন নাবিয়্যিন, ১ম খন্ড, ৭৩ পৃষ্টা)

অপরদিকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন,
لَا الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُون
অর্থঃ না সূর্যের সাধ্য আছে সে চন্দ্রের নাগাল পাবে, না চন্দ্রের সামর্থ আছে সে সূর্যকে অতিক্রম করবে। প্রত্যেকেই তাদের কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে।" (সূরায়ে ইয়াসিন, আয়াত - ২০)

আরো ইরশাদ হচ্ছে,
وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ
অর্থঃ "আর তিনিই আল্লাহ, যিনি রাত, দিন, সূর্য ও চন্দ্রকে সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে।" (সূরা আম্বিয়া - ৩৩)

এই আয়াতদ্বয় দ্বারা বুঝা যায় সূর্য ও চন্দ্রের অবস্থান তাদের নিজস্ব "ফালাক" এর মধ্যে, যেখানে তারা ঘুর্ণায়মান। ফালাক কী? ফালাকের বিভিন্ন তাফসীর বর্ণিত হয়েছে। কেউ বলেন, ফালাক দ্বারা উদ্দেশ্য আসমান ও যমিনের মধ্যবর্তী ঐ কক্ষপথ যা দিয়ে তারকারাজি ভ্রমণ করে। কারো মতে ফালাক দ্বারা গতি ও দ্রুততার কথা উদ্দেশ্য। কেউ কেউ বলেন, ফালাক দ্বারা আসমান উদ্দেশ্য। ইত্যাদি। (দেখুন তাফসীরে তাবারী)

উপরোক্ত আয়াতসমূহ দ্বারা স্পষ্টতঃ বুঝা গেলো সূর্যের অবস্থান প্রথম আসমানের কক্ষপথে। চতুর্থ আসমানে নয়। সুতরাং এব্যাপারে সঠিক না জেনে কিছু না বলাই ভালো।

এবার আসি যারা মিরাজের ঘটনা দিয়ে প্রমাণ দেয়, তাদের উত্তরে বলবো, মিরাজের ঘটনায় সূর্য প্রত্যক্ষ করার কথা কোথাও বর্ণিত নেই। এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা। রাসূলের সা. হাদীসে এমন অবান্তর সংযোজন অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
দ্বিতীয় দলীল আল্লামা ইবনে কাসীর যে বর্ণনাটি এনেছেন তা তার নিজস্ব মত নয়। এমনি উলামায়ে কেরামেরও কোন মত নয়। বরং জ্যোতির্বিদগণ সেই মতটি পোষণ করেছেন

শায়েখ মুহাম্মাদ আল উছাইমিন রা. এ ব্যাপারে বলেন,
و أما ما اشتهر من كون القمر في السماء الدنيا ، و عطارد في الثانية ، و الزهرة في الثالثة ، و الشمس في الرابعة ، و المريخ في الخامسة ، و المشتري في السادسة ، و زحل في السابعة ، فإن هذا مما تلقي من علماء الفلك و الهيئة و ليس في حديث صحيح عن النبي صلي الله عليه و سلم .
"যে বর্ণনাটি প্রসিদ্ধ আছে যে, 'প্রথম আসমানে চাঁদ, দ্বিতীয় আসমানে বুধ, তৃতীয় আসমানে শুক্র, চতুর্থ আসমানে সূর্য, পঞ্চম আসমানে মঙ্গল, ষষ্ঠ আসমানে বৃহস্পতি এবং সপ্তম আসমানে রয়েছে শনি।' তা নিছক জ্যোতির্বিদদের কথা। রাসূলুল্লাহ সা. এর সহীহ সূত্রে কোন বর্ণনা নেই।" (কিতাবুল উসূল ইলাল ক্বমার)

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নাভীর নীচের অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা

নাভীর নীচের অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা হলো : পায়ের পাতার উপর ভর করে বসা অবস্থায় নাভী থেকে চার পাঁচ আঙ্গুল পরিমাণ নীচে যে ভাঁজ বা রেখা সৃষ্টি হয় ...