মঙ্গলবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

হেফাজত এসেছিল ঝড়ের বেগে, উল্কার গতিতে

হঠাৎ করেই দেশবাসী দেখল রাজধানীতে শুধু টুপি আর টুপি। পত্র পত্রিকার পাতায় শুধু হুজুরদের ছবি।

টেলিভিশনের পর্দায় দুলতে থাকে এক বৃদ্ধের সফেদ চেহারা, তিনি আল্লামা আহমদ শফি। এইসব দেখে নড়েচড়ে উঠলেন রাজনৈতিক ব্যাক্তিরা।প্রমাদ গুনল নাস্তিক মুরতাদরা। বিশ্লেষকরা বসলেন নতুন ছক কষতে। বাম ঘরানার বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহার লিখলেন, নষ্ট শহরে হেফাজতের গনবিস্ফোরণ। মানব জমিন লিড নিউজ করল, রাজনীতিতে নতুন শক্তি। বিএনপি এই শক্তিকে ইউজ করতে চাইল। হেফাজতের ভেতরের কেউ কেউ গোপনে অভিসারে লিপ্ত হয়ে পড়লেন বিএনপির সাথে। তার পরের ইতিহাস সবাই জানেন।

আওয়ামীলীগ চিন্তা করল এই শক্তিকে শাপলায় যেভাবে রাতের অন্ধকারে শেষ কর‍তে চেয়েছি তা ভুল হয়েছে। আমরাও পজিটিভলি ইউজ করি। শেখ হাসিনা কওমি আলেমদেরকে ডেকে স্বীকৃতির ঘোষণা দিলেন এবং প্রতিশ্রুতি পুরনও করলেন। হেফাজতের সবাই যে আওয়ামীলীগকে ভোট দিবেনা সেটা আওয়ামীলীগ জানে, তারপরও কেন বামদেরকে পেছনে ঠেলে এই কাজ করতে গেলো? এইখানেই আওয়ামীলীগের দুরদর্শীতার প্রমাণ পাওয়া যায়। আর যাই হোক তাতে বিএনপির একক প্রভাব ধর্মপ্রান মানুষের উপর যেভাবে আছে তা কমবে বৈ কি।

ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল আর আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক চিন্তার পার্থক্য কতটুকু আকাশ পাতাল ব্যাবধান আরেকটি ঘটনা বললে বুঝা যাবে। বিগত বিএনপির আমলে একটি ইসলামী দলের মন্ত্রীকে চট্টগ্রামের একটি বড় কওমি মাদ্রাসায় দাওয়াত করা হয়েছিল। তিনি সেখানে গিয়ে আক্রান্ত হলেন এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে। এই রোগের নাম আসাবিয়াত। তিনি সেই মাদ্রাসায় এতীমদের জন্য সরকারি বরাদ্দ কমিয়ে অর্ধেক করে এলেন! অথচ তার উচিত ছিল একে আরো বাড়ানো। ফলশ্রুতিতে কওমি মাদ্রাসা পর্যায়ে নিউজ চলে গেল এই ইসলামী দল কওমি বিরোধী। এই ঘটনার কয়েকদিন পর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসে। সেখানকার আওয়ামী এমপি ওই মাদ্রাসায় গিয়ে জানলেন আগের জনৈক ইসলামী মন্ত্রীর বরাদ্দ কমানোর ঘটনা। আওয়ামীলীগের এই এমপি মাদ্রাসার এতীম বাচ্চাদের জন্য সরকারি বরাদ্দ তো বাড়ালেনই এমনকি আগের চেয়ে দিগুন করে দিলেন।

ভাইলোগ, আওয়ামীলীগ থেকে আপনাদের রাজনীতি শেখার মত অনেক কিছু আছে। আগে রাজনীতি শিখুন তারপর মাঠে নামুন। সাতার না শিখে পানিতে নামলে নিজে তো ডুববেন এমনকি কর্মীদেরকেও ডুবাবেন।

কি দু;সময় গিয়েছে শাহবাগের দিনগুলোয়। ইসলামী প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার জন্য রীতিমত তালিকা চুড়ান্ত করা হয়েছিল। শাহবাগ সফল হলে আর যাই বলেন ইসলামী তামাদ্দুন ধ্বংস হয়ে যেত অটোমেটিকালি। কিন্তু শাহবাগের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়ানোর সাহস করছিলেননা। সেই সময় একাকী বুকটান করে এগিয়ে এসেছিল কতিপয় মোল্লা মওলভি, যাদের প্লাটফরমের নাম হেফাজতে ইসলাম। হেফাজত যেভাবে একাকী একটা স্রোতকে থামিয়ে দিয়েছে তাতে তাদের আগামী কয়েক টার্ম রাজনীতি না করলেও চলবে।

আজকের জাতিয়তাবাদী এবং ইসলামপন্থী রাজনীতিবিদদের তাই হেফাজতের উপর কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। কোন অবস্থায়ই গালাগালি নয়।

©  সাইমুম সাদী

বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১৮

আজব দেশ

আপনি যদি পণ করে নেন যে, যেই পরিস্থিতিই হোক আমি মসজিদের সামনে কাতারে গিয়ে নামায পড়ব। তবে একারণে আপনাকে কোন কোন সময় মুসল্লীদের কষ্ট প্রদান করাটা বাধ্যতামূলক। আপনি যদি নিজের ছেলের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন যে তার সব দাবী মেনে নিবেন। তবে আপনাকে অবশ্যই কাণ্ডজ্ঞানহীন অভিভাবক হতে হবে। যে কিনা সন্তানের দাবীর সঙ্গতি-অসঙ্গতির ধার ধারবে না। ন্যায় অন্যায়ের বাছ রাখবে না। এমন অভিভাবককে অভিভাবক হিসেবে যেমন পূর্ণ মার্ক দেওয়া যায়, তদ্রূপ মানবতার দৃষ্টিতেও তাকে স্বাভাবিক মানুষের স্বীকৃতি দেওয়া যায় না।

গত দুদিন যাবত বাংলাদেশের সড়কপথ দেশের শিক্ষার্থীদের পদভারে ন্যুব্জ। কচিকাঁচা শিশু শিক্ষার্থী থেকে নিয়ে উচ্চপর্যায় শিক্ষার্থীগণও এই সংগ্রামে জড়িত। এই সংগ্রামের অন্যতম একটি দাবী হলো নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত করণ। লক্ষণীয় বিষয় হলো, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে কারো কোন তেমন আগ্রহ চোখে পড়ছে না। কিন্তু কেন? সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রদের জীবন কি এতই মূল্যহীন?
দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী ব্যক্তিরা ছাত্রদের নিহত হওয়া সংবাদে হেসে হেসে ইন্টারভিউ দেন। সংবাদমাধ্যমগুলো সংবাদরস খুঁজে বেড়ায় নির্বাচন নামক প্রহসনে। সবচেয়ে ব্যথিত চিত্র হলো, এমন একটা আন্দোলনেও পুলিশ শিশু ও তরুণ ছাত্রদেরকে লাঠিপেটা করে।

এদেশের আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করাটা জাতীয় চেতনায় পরিণত হয়েছে। ধর্মীয় আন্দোলন, অধিকার আদায় আন্দোলন, কোটা বিরোধী আন্দোলনসহ বর্তমানের যাতায়াতের নিরাপত্তা আন্দোলনেও পুলিশ নামক এলিয়েনদের আচরণ অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের দেশের নিরাপত্তার কর্ণধার প্রশাসন এ ববিষয়ে খুব ভালভাবেই অঙ্গীকারাবদ্ধ যে, ইস্যু যাই হোক দেশে কোন আন্দোলনই চলবে না। আন্দোলনের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে দেওয়া যাবে না!

বড় সেলুকাস এদেশের চিত্র। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে যে ছাত্র সমাজের তাজা প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার চেতনায় পাওয়া আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ। অথচ সেই ছাত্র সমাজের বুকে বুটের আঘাত হানে এদেশের পুলিশ নামক বিকৃতমনা কিছু প্রাণী। যে ছাত্র সমাজ এদেশের ভবিষ্যত তাদেরকে নায্য দাবীর বেলায়ও চোখমুখ বন্ধ করে লাঠিপেটা করতে সামান্যতম দ্বিধাবোধ করে না। কী বিচিত্র! হায় মানসিকতা!!
কী লেখা আছে বাংলাদেশ নামক এই ছোট্ট একটা ভূখণ্ডের ভাগ্যে আজ সময়ের এই মোড়ে এসে তা অনুমান করাটা অসম্ভব। এ দেশটা আজবদেশ হতে আর বেশি সময় বাকী নেই। যেখানে মানুষ জন্ম নিলেও হাসে, মরে গেলেও হাসে, সেই দেশকে আপনি কী বলবেন?

সোমবার, ২৩ জুলাই, ২০১৮

নবদম্পতির জন্যে প্রয়োজনীয় কিছু কথা

বিয়ে রাসুল সা. এর একটি সুন্নত। রাসুল সা. বলেছেন, যে আমার সুন্নতকে অবজ্ঞা করলো সে আমাকে অবজ্ঞা করলো। যারা বিয়ে করলো আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য আল্লাহ তায়ালা তাদের জীবন আলোকিত করে দিবেন।

নতুন বিবাহিত মুসলিম দম্পতিরা তাদের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে ইসলাম যা বলে তা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায় অনেক সময়। কারণ তারা এ বিষয়ে কথা বলতে লজ্জা পায়।

অনেক সময় তারা বিভ্রান্তও হয়। তাই আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাই।

১. বিয়ে প্রথম রাত

প্রথম রাতেই যে শারীরিক সম্পর্ক করতে হবে ইসলামে এর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আগে একে অপরকে বুঝা উচিত। যদি পরিস্থিতি এমন হয় যে শারীরিক সম্পর্ক উপভোগের মাধ্যমে হবে, তাহলে তো ঠিক আছে।

কিন্তু জোড়পূর্বক কোনোভাবেই উচিত নয়। এতে শুরুতেই সম্পর্কের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব শুরু হয়। তাই এ ব্যপারে সতর্ক থাকা উচিত।

২. শারীরিক সম্পর্ক

নববধূর জন্য আল্লাহ শারীরিক সম্পর্ক হালাল করেছেন কিন্তু এটি শুধুই শারীরিক সম্পর্ক নয় আল্লাহর বিধান ও ইবাদতও। সেটি মনে রাখতে হবে। বিয়েটা শুধু যেনো যৌন চাহিদার জন্য না হয়। আল্লাহর বিধান মানার জন্যও যেনো হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে।

ইসলাম আমাদের যৌন আকাঙ্ক্ষা পরণের জন্য বিধান দিয়েছেন। রাসুল সা. বাসর রাত বা শারীরিক সম্পর্কের জন্য দোয়াও শিখিয়ে দিয়েছেন।

ইসলাম বলে মানুষ যেনো পশুদের মত যৌন চাহিদা পূরণ না করে। তাই অনেকগুলো নির্দেশনা আছে এ ক্ষেত্রে। সঙ্গিনীর চাহিদা, ভালো লাগা খারাপ লাগার প্রতি গুরুত্ব দেয়া জরুরি। তার কষ্ট হয় এমন কিছু করা উচিত নয়।

আল্লাহ তায়ালা পায়ু পথে সম্পর্ক করাও হারাম করেছেন। তাই ইসলামের বিধান মানাটা অপরিহার্য।

৩. ভার্জিনিটি

অনেকের ধারণা থাকে শারীরিক প্রথম সম্পর্কের ক্ষেত্রে রক্তপাত না হলে তার ভার্জিনিটি আগেই ছিন্ন হয়ে গেছে। ইসলাম এমন ধারণাকে সমর্থন করে না। কেনা অনেক সময় লাফালাফি বা এ জাতীয় খেলাধুলার কারণেও ছিন্ন হতে পারে। সুতরাং এ বিষয় নিয়ে বাড়বাড়ির কোনো সুযোগ নেই ইসলামে।

৪. সঙ্গিনী

আল্লাহ তায়ালা মানুষের মর্যাদার ক্ষেত্রে নারীদের মর্যাদা দিয়েছেন অনেক বেশি। তাই স্বামীরাও  তাদের মর্যাদা দেবে। তাদের পছন্দ অপছন্দের দিকে লক্ষ্য রাখবে। শারীরিক সুখ দেয়ার পুরোপুরি চেষ্টা করবে।

৫. সঙ্গিনীর বিষয়ে আলোচনা

শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো নিয়ে কারো কাছে বলা ইসলাম নিষেধ করেছেন। এগুলোর বিষয়ে আলোচনা হারাম।

সঙ্গিনীর শারীরিক কোনো বিষয়ে অন্যের কাছে বলা ইসলাম সমর্থন করে না। হ্যাঁ শারীরিক সম্পর্কে যদি কোনো সমস্যা থাকে তাহলে অবহেলা না করে ডাক্তার দেখানো উচিত।

সঙ্গিনীর হক আদায়ে যদি কমতি হয় আর আপনি লজ্জায় ডাক্তার না দেখান তাহলে মারাত্মক গোনাহগার হবেন।

তাই এ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করা ও গুরুত্ব দেয়া খুবই প্রয়োজন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বুঝার তাওফিক দান করুন।

সূত্র: দ্যা ইসলামিক ইনফরমেশন 

এবং আওয়ার ইসলাম২৪

রবিবার, ৮ জুলাই, ২০১৮

রাগকে নিয়ন্ত্রণ করা

বেশ কিছুদিন হলো একটা বিষয় অনেক ভাবাচ্ছে আমায়। কথায় আছে, সুখের দিন কেটে যায় চোখের পলকে। অতি সত্য একটি প্রবাদ। কবর জগতের হাজার কোটি বছর মুমিন বান্দার এক ঘুমের মাঝে অতিবাহিত হয়ে যাবে। সুখের মোহ যাকে আচ্ছন্ন করে রাখে সে অনেক সময় বুঝতেই পারে না মাস কয় দিনে হয়!

কিন্তু বিপদ ঘটে যখন উল্টোরথ ছুটে। অসময়ের এক পলক তখন হাজার ক্ষণের  সুখময় স্মৃতিসৌধকে ভেঙ্গে তছনছ করে দেয়। আবার বড় আশ্চর্য লাগে যে,  তখন এই সুখের স্মৃতিপ্রাসাদ ভাঙ্গাকে যুক্তিগত বলে মনে হয়। কেউ আবার না বুঝেই কেবল ক্রোধান্ধ হয়ে সবকিছুই উপড়ে ফেলে। অনেকেই এমন আছে, যারা জীবন সঙ্গীর সাথে হাজার আনন্দক্ষণ আর সুখময় সময়কে খুব সহজেই ভুলে যায়। বিচ্ছিন্ন কিছু ভুল আর অসংগতি দেখে পদদলিত করে ফেলে ইতিবাচক দিককে। হুঁশে-বেহুঁশে এমন কাণ্ড করে বসে যার জন্যে পরে আক্ষেপের অন্ত থাকে না। তালাকের ফাতাওয়ার প্রেক্ষাপট শুনে শুনে কিছুটা আন্দায তো হয়েই গেছে।

অপরিপক্ব রাগ মানুষকে বরাবরই অপদস্থ আর অসম্মানের অতলগহবরে নিমজ্জিত করে দেয়। এজন্য বিজ্ঞজনেরা অপরিপক্ব রাগ থেকে মানুষকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। অপরিপক্ব রাগ কোনটা? এর উত্তর হলো, যে রাগ মানুষকে কন্ট্রোল করে। তার অনুযায়ী মানুষকে হতে বাধ্য করে তাই অপরিপক্ব রাগ। এই রাগের বেলায় মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশুন্য হয়ে যায়। এর একটা উদাহরণ, ধরুন- আমার সহযোগী আমাকে ৯৯টা কাজে সঠিকভাবে সহযোগিতা করেছে। কিন্তু একটা কাজের বেলায় সে সঠিক সহযোগিতা দিতে পারেনি। এখন আমি যদি তাকে রাগের বশীভূত হয়ে সামান্যতম বকাঝকা করি তবে আমি অপরিপক্ব রাগাক্রান্ত এবং সহযোগীর দীর্ঘ সময়ের সহযোগিতার প্রতি আমি অকৃতজ্ঞ। এই রাগ অবশ্যই দমনীয়। এক্ষেত্রে ভাল সময়গুলোর প্রতি বেশি বেশি নযর দেওয়া ও রাগ দমনের উপায়গুলো অবলম্বন করতে থাকা।

পক্ষান্তরে পরিপক্ব রাগ হলো ঠিক এর উল্টো। যা মানুষের কন্ট্রোলে পরিচালিত হয়। ব্যক্তি রাগের কন্ট্রোলে থাকে না বরং রাগই ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং তা যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনায় আসে না বরং সময়ের তাগিদেই তার বহির্প্রকাশ ঘটে।

উপরোক্ত আলোচনাটি আমি আমার এক সুপ্রিয় বন্ধুর বিচ্ছেদে ব্যথাতুর হয়ে করলাম। খিদমতের দীর্ঘ তিন বছরের সুখস্মৃতি নিমিষেই ভ্যানিশ হয়ে গেল। একরাশ চাপা কষ্ট আজ নিত্যসঙ্গী।
আল্লাহ তাঁর মর্যাদা আরো বৃদ্ধি করে দিন।
আমাদেরকে রাগের নিয়ন্ত্রণকারী বানিয়ে দিন।

সোমবার, ২৫ জুন, ২০১৮

রজব তায়্যিব এরদোগান কেন প্রেসিডেন্ট হন বারবার?

চা ওয়ালা থেকে সরকার প্রধান বনে যাওয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কথা মোটামুটি অনেকেই জানেন। হিন্দুপ্রধান দেশে হিন্দুত্ববাদের সুবিধা নিয়ে বিজেপির ব্যানারে রাতারাতি জিরো থেকে হিরো হওয়ার বিষয়টাকে অনেকেই হিন্দুদের ঐক্যের প্রামাণিকতা হিসেবে তুলে ধরেন। বিষয়টা মোটেও খাপছাড়া নয়। কিন্তু এটা কেবল হিন্দু জাতির বৈশিষ্ট্য বলাটা আমার কাছে যুক্তিগ্রাহ্য নয়। একতা আমাদের মুসলমানদের মধ্যেও আছে। যদিও আমরা পারস্পরিক অন্তর্দাহে প্রজ্বলন্ত।

ধর্মের প্রতি টান পৃথিবীর ইতিহাসে মুসলমানদেরই সবচাইতে বেশি ছিল এবং আজো আছে। এই ধর্মীয় টানকে  আন্তরিকতা, মুহাব্বাত, টান বা চেতনা যে শব্দেই উপস্থাপন করুন না কেনো, এই জিনিসটা এমন শক্তিশালী বা কার্যকরী, যার সামনাসামনি করতে পারে এমন বিকল্প মানব সভ্যতার ইতিহাসে তৈরী হয়নি।

অন্যকোন মুহাব্বাত বা আকর্ষণের এমন নযির নাই যার কারণে মানবজাতি নিজের পরিবারকে অস্ত্রের নগ্ন থাবায় তুলে দিয়েও তৃপ্তি ও প্রশান্তি অনুভব করতে পারে। এটা একমাত্র ধর্মীয় চেতনাতেই সম্ভব। এই যদি হয় ধর্মীয় টানের সুপার পাওয়ার তবে এই ধর্মীয় চেতনার মুকাবেলা করার দুঃসাহস না আমেরিকার আছে, না আছে পৃথিবীর মহাশক্তিধর একতার। এই কথা আপাতত মুসলমান মুজাহিদদের ইতিহাস পড়ে পড়ে সাম্রাজ্যবাদীরা আমাদের চেয়ে অনেক ভাল বুঝেছে। যার ফলাফলে ধর্মান্ধতা ও ধর্ম বিরোধী নানা মোড়কে আবদ্ধ করে ধর্মীয় এই চেতনাকে গলা টিপে হত্যা করে যাচ্ছে একেরপর এক।

কারণ ওরা জানে, যদি মানুষের মাঝে ধর্মীয় এই টান অবিকৃত অবস্থায় বহাল থাকে তবে প্রগতিবাদীদের পেটের ভাত জুটাতে হিমশিম খেতে হবে। নিজেদের অবস্থানকে টিকিয়ে রাখতে প্রগতিশীল, প্রগতিবাদী, নারী স্বাধীনতার নামে ধর্মীয় মূল্যবোধের বিদায় ঘন্টা বাজিয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন দেশ থেকে।

উপরোক্ত কথাগুলো বলার কারণ হলো, সম্প্রতি তুরস্কের নির্বাচনে ইসলামের প্রতি উদারমনা ব্যক্তিত্ব হাফেজ রজব তায়্যিব এরদোগানের বিজয়ে সারা মুসলিম বিশ্ব নানান হতাশার মাঝে আনন্দের মুচকি হাসি হাসলো। যদিও আমাদের বাংলাদেশী মিডিয়ার তেমন উল্লেখযোগ্য আপডেটিং কর্মতৎপরতা চোখে পড়ল না। বাধ্য হয়েই আজ বিবিসি বাংলার ওয়েবে নজর দেই আর তাতে চোখ পড়ে এই নিউজে, "শরবত বিক্রেতা থেকে তুরস্কের 'নতুন সুলতান' রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ান"।

হ্যাঁ, ইসলামের অকুতোভয় এই যোদ্ধা নাকি একসময় বাড়তি উপার্জনের জন্য লেবুর শরবত এবং বিভিন্ন খাবার বিক্রি করতেন। আশ্চর্যজনক কথা?

তবে আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন এই নিউজটা। কিন্তু আমি একদমই জানতাম না। এখন আমার কথা হল,  একজন শরবত বিক্রেতা কীভাবে বারবার একটা দেশের ক্ষমতাধর কার্যশীল প্রেসিডেন্ট হয়? তুরস্ক তো আর হিন্দুপ্রধান দেশ নয় যে মোদির মতো তাকেও হিন্দুজোটের জোয়ারে ভাসিয়ে পার্লামেন্টে পৌঁছে দেওয়া হবে। তুরস্ক একটি সুপ্রাচীন ঐতিহাসিক মুসলমান দেশ। তাহলে এরকম ইসলামী দেশে শরবত বিক্রেতা কেন বার বার প্রেসিডেন্ট হন?

বুঝা যায়,

ঐক্য আর সম্প্রীতির বন্ধন মুসলমানদের মধ্যে এখনও আছে। মুসলমানদের পারস্পরিক ভালবাসার সুতিকাবন্ধন এখন ছিঁড়ে যায়নি। তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ লোহিত সাগরের পানিতে ভেসে যায়নি এখনও! শুধু ভ্রান্ত ও মিথ্যা অপপ্রচার একটু বেশি হয় আমাদের মাঝে। আজ মুসলমান নিজেদের দোষগুলো প্রচারে ব্যস্ত, প্রমাণে নয়। ঝড়ো হাওয়া আসলে সবাই তৃণলতা হয়ে সাথে উড়ে চলে। কেউ বটবৃক্ষ হয়ে সামনাসামনি করে না।

হে আল্লাহ আপনি আমাদের কদমকে ইসলামের ওপর অবিচল রাখুন।

রবিবার, ২৪ জুন, ২০১৮

জুমার খুতবার বিধি বিধান


খুতবার শাব্দিক অর্থ বক্তৃতা বা বক্তৃতা করা। আর শরিয়তের পরিভাষায় খুতবা বলা হয় এমন বক্তৃতা যাতে আল্লাহর প্রশংসা, তাঁর একাত্মবাদের ঘোষণা, রাসূলের প্রতি দরূদ এবং উপস্থিত সাধারণের প্রতি উপদেশ বিদ্যমান থাকে। (মোজাহেরে হক-১/১০১৯)

খুতবা জুমার নামাজের শর্ত বা ফরজ। খুতবা ব্যতীত জুমার নামাজ হয় না। মুসল্লীদের জন্য খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। তাই খুতবা চলাকালে নিরর্থক কর্মে লিপ্ত হওয়া শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়।
হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিন খুতবা প্রদানের সময় যদি তুমি তোমার সাথীকে বলো, ‘চুপ করো’ তখন তুমি অনর্থক কথাই বললে।’ (বোখারি শরীফ-১/১২৮)

এ হাদিস দ্বারা সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয়, খুতবার সময় নিশ্চুপ হয়ে খুতবা শ্রবণ করা ওয়জিব এবং কথাবার্তা বলা হারাম। অনুরূপ খুতবার সময় সুন্নত-নফল নামাজ পড়াও বৈধ হবে না।

এ প্রসঙ্গে অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন ইমাম খুতবার জন্য বের হবেন তখন না নামাজ পড়বে, না কথা বলবে।’ (মেরকাত-৩/৪৩২)

তাই মুসল্লীদের উচিত, খুতবার সময় সর্ব প্রকার কথাবার্তা থেকে বিরত থেকে অত্যন্ত মনোযোগী হয়ে খুতবা শ্রবণ করা এবং যে সকল কাজ নামাজে নিষিদ্ধ তা থেকে বিরত থাকা অতীব জরুরি।

এ প্রসঙ্গে ফিকাহ শাস্ত্রের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ ‘ফাতাওয়ায়ে শামী’ গ্রন্থে একটি মূলনীতি উল্লেখ হয়েছে তা হলো- যে সকল কর্ম নামাজের মধ্যে হারাম তা খুতবার মধ্যেও হারাম। যেমন- কথাবার্তা বলা, পানাহার করা ইত্যাদি। (ফাতাওয়ায়ে শামী-৩/৩৫)

বর্তমানে অনেক মসজিদে লক্ষ করা যায়, খুতবা চলাকালে অনেক মুসল্লীরা নামাজবিরোধী কর্মে লিপ্ত হয় যা সম্পূর্ণ শরিয়ত পরিপন্থি এবং হারাম। এছাড়া অনেক মসজিদে খুতবা চলাকালে চাঁদার বাক্স/থলে চালানো হয়ে থাকে, এটি শরিয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ নাজায়েজ। খুতবার সময় এ সমস্ত না জায়েজ কর্ম পরিহার করে মনোযোগী হয়ে খুতবা শ্রবণ করা অত্যন্ত জরুরি।
জুমার খুতবা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আরবি ভাষায় হওয়া আবশ্যক। অন্য কোনো ভাষায় খুতবা দেয়া বৈধ হবে না। (উমদাতুর রে‘য়ায়াহ-পৃ.২০০)

কারণ, রাসূল (সা.)-এর যুগ থেকে নিয়ে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহ সর্বযুগে এ অনুযায়ী আমল করেছেন। তাছাড়া  সাহাবায়ে কেরাম অনেক অনারব দেশ বিজয় লাভ করেছিলেন কিন্তু তারপরও ওই সমস্ত দেশে সাহাবায়ে কেরাম আরবি ভাষায় খুতবা প্রদান করতেন। (ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া-১২/৩৬১)

এ প্রসঙ্গে শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ. বলেন, জুমার খুতবা আরবি ভাষায় দিতে হবে। কেননা, মুসলিম জাহানের অনেক অঞ্চলের ভাষা অনারবী হওয়া সত্ত্বেও সমগ্র পৃথিবীতে জুমার খুতবা আরবি ভাষায় প্রদান করা হতো। (মুসাফফা-পৃ.২৪৪)

খুতবার কিছু সুন্নত রয়েছে, খতিবদের সে সমস্ত সুন্নত অনুসরণ-অনুকরণ করা প্রয়োজন। ফিকাহ শাস্ত্রের অন্যতম গ্রন্থ ‘ফাতাওয়ায়ে আলমগীরি’ গ্রন্থে খুতবার ১৫টি সুন্নত উল্লেখ করা হয়েছে। তা হলো,

এক. পবিত্রতার সাথে খুতবা প্রদান করা। ওজু ছাড়া বা নাপাক অবস্থায় খুতবা দেয়া মাকরূহ।

দুই. দাঁড়িয়ে খুতবা দেয়া। হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত জাবের ইবনে সামুরা রাযি. বলেন, ‘রাসূল (সা.) দাঁড়িয়ে খুতবা দান করতেন।’ (মুসলিম শরীফ-১/২৮৩)

তিন. মুসল্লীদের দিকে মুখ করে খুতবা পাঠ করা। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মিম্বারে দাঁড়াতেন তখন আমরা তাঁর সম্মুখ হয়ে বসতাম। (তিরমিজি-১/১১৪)

চার. খুতবার পূর্বে অন্তরে ‘আউযুবিল্লাহ’ পাঠ করা।

পাঁচ. মুসল্লীদেরকে খুতবা শ্রবণ করানো, অর্থাৎ, খুতবাকে উচ্চস্বরে পাঠ করা, যাতে করে মুসল্লীরা খুতবা শ্রবণ করতে পারেন।

ছয়. আল্লাহর প্রশংসার মাধ্যমে খুতবা শুরু করা।

সাত. খুতবায় আল্লাহ পাকের এমন প্রশংসা করা, যার উপযুক্ত একমাত্র তিনিই।

আট. খুতবায় কালেমায়ে শাহাদত পাঠ করা।

নয়. রাসূল (সা.) এর ওপর দরূদ পাঠ করা।

দশ. ওয়াজ-নছিহত করা।

এগার. ছোট তিন আয়াত বা বড় এক আয়াত পরিমাণ কোরআন তিলাওয়াত করা।

বার. দ্বিতীয় খুতবায় আল্লাহ পাকের প্রশংসা এবং নবী কারীম (সা.) এর ওপর দরূদ পাঠ করা।

তের. সমগ্র পৃথিবীর মুসলিম নর-নারীর জন্য বেশি বেশি দোয়া করা।

চৌদ্দ. খুতবা সংক্ষিপ্ত হওয়া অর্থাৎ যে সমস্ত তিওয়ালে মুফাসসল সূরা রয়েছে খুতবা সেগুলোর মধ্যে থেকে যে কোনো একটি সূরার পরিমাণ হওয়া। হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে হযরত আম্মার রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, ‘কোনো ব্যক্তির নামাজের দীর্ঘতা এবং খুতবার সংক্ষিপ্ততা তার সূক্ষ্ম জ্ঞানের পরিচায়ক। সুতরাং তোমরা নামাজকে দীর্ঘ করবে এবং খুতবাকে সংক্ষেপ করবে।’ (মুসলিম শরীফ-১/২৮৬)

পনের. দুই খুতবার মাঝে ছোট তিন আয়াত পড়া যায়, এ পরিমাণ সময় বসা। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরি-১/১৪৬)

আলামা কাসানি রহ. উল্লেখ করেন, জুমার খুতবা দু’টি হওয়া সুন্নত এবং খুতবা মিম্বারে দেয়া সুন্নত। কেননা, রাসূল (সা.) মিম্বারের ওপর দাঁড়িয়ে খুতবা প্রদান করতেন। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত জাবের ইবনে সামুরা রাযি. বলেন, ‘রাসূল (সা.) দু’টি খুতবা পাঠ করতেন এবং উভয় খুতবার মাঝখানে বসতেন। তিনি কোরআন তিলাওয়াত করতেন এবং লোকদের উপদেশ দিতেন।’ (মুসলিম শরিফ-১/২৮৩)

রবিবার, ১৭ জুন, ২০১৮

সারাবিশ্বে একদিনে রোযা ও ঈদ; সম্ভাব্যতা ও বাস্তব একটি সমীক্ষা

তারেকুয যামানের কলাম থেকে
-------------------
বর্তমান সময়ের অন্যতম একটি আলোচিত বিষয় হলো, সমগ্র বিশ্বে একই দিনে রোযা ও ঈদ। বিষয়টি যেমনই জটিল তেমনই স্পর্শকাতর। এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে অনেক আলোচনা-পর্যালোচনা হয়েছে। কেউ শুধু ধর্মীয় দিকটি প্রাধান্য দিয়েছেন আর কেউ শুধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দিকটি প্রাধান্য দিয়েছেন। অথচ বর্তমানের আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক মানুষকে যেমন শুধু ধর্মের বাণীতে সন্তুষ্ট করা যায় না, তেমনি আধুনিকতাপ্রবণ লোকদের শুধু আবেগ ও চাহিদার ভিত্তিতেও ধর্ম চলতে পারে না। তাই উপরোক্ত বিষয়টির ক্ষেত্রে যেমন আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তি অস্বীকার করার সুযোগ নেই, তেমনি বিজ্ঞানের নামে ধর্মকে পরিবর্তন ও বিকৃতি সাধনেরও কারো অধিকার নেই। বক্ষ্যমান প্রবন্ধটিতে সংক্ষিপ্তাকারে আমরা গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে কুরআন ও সহীহ হাদীসের পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞানের দাবি ও শরীয়তের সাথে এর সমন্বয় নিয়েও আলোচনা করার প্রয়াস পাবো, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা তাওফীকদাতা।

শরীয়তের আলোকে একদিনে রোযা ও ঈদ করার সম্ভাব্যতা:
প্রথমেই আমাদের এ ব্যাপারে দেখতে হবে, কুরআন-সুন্নাহ এবং সালফে সালেহীনের আমল কী বলে? যেহেতু শরীয়তের মাসআলা জানার জন্য এর বাহিরে যাওয়ার আমাদের কোনো অনুমতি নেই। তাই আমরা এ ব্যাপারে প্রথমত সংক্ষিপ্তাকারে কুরআন, হাদীস, সাহাবা ও সালফে সালেহীনের কর্মপন্থা এবং চার মাযহাবের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করবো।

১. কুরআনের ভাষ্য:
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
يَسْئَلُونَكَ عَنِ الْأَهِلَّةِ قُلْ هِيَ مَواقِيتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ.
অর্থাৎ তারা আপনাকে নতুন চাদঁসমূহের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলে দিন, তা হলো হজ এবং মানুষের জন্য সময় নির্ণয়ক। (সূরা বাকারা: ১৮৯)
লক্ষণীয় যে, আয়াতে الْأَهِلَّةُ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা اَلْهِلَالُ এর বহুবচন। এখন প্রশ্ন হলো, চাঁদ তো একটা তাহলে এখানে বহুবচন ব্যবহার করা হলো কেনো? এর দু’টি উত্তর হতে পারে। এক: বারো মাসে যেহেতু বারোবার নতুন করে চাঁদ উদিত হয় তাই এদিকে লক্ষ্য করে এখানে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। দুই: চাদঁ যেহেতু সমগ্র বিশ্বে একসাথে উদিত হয় না; বরং পর্যায়ক্রমে পশ্চিম দিক থেকে ধীরে ধীরে পূর্ব দিকে দৃষ্টিগোচর হতে থাকে, তাই প্রত্যেক এলাকার জন্য চাঁদের উদয়স্থল ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় এখানে বহুবচন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তবে উপরোক্ত দু’টি উত্তর হতে এখানে প্রথম উত্তরটি গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, আরবী ভাষায় الْأَهِلَّةِ শব্দটি جمع قلة (স্বল্পতার বহুবচন), যা শুধুমাত্র তিন থেকে দশ পর্যন্ত সংখ্যাকে অন্তর্ভুক্ত করে। অথচ চান্দ্র মাসের সংখ্যা বারোটি, যা এ বহুবচনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এক্ষেত্রে বারো মাসের বারো চাঁদ বুঝানো উদ্দেশ্য হলে এখানে جمع كثرة (আধিক্যের বহুবচন) হিসেবে اَلْأَهَالِيْلُ শব্দ ব্যবহার করা হতো, যা দশের অধিক সংখ্যাকে অর্ন্তভুক্ত করে। অতএব এ আয়াতে চাঁদসমূহ বলতে বারো মাসের চাঁদ উদ্দেশ্য নয়; বরং পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন উদয়স্থলের চাঁদসমূহ উদ্দেশ্য হবে। আর পৃথিবীতে চাঁদের উদয়স্থল জ্যোর্তিবিজ্ঞানীদের মতানুযায়ী সর্বোচ্চ সাতটি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
সুতরাং উক্ত আয়াত থেকে প্রতীয়মান হলো যে, প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য চাঁদ ভিন্ন ভিন্ন। অতএব যে অঞ্চলের লোক চাঁদ দেখবে তারাই রোযা রাখবে। এ ব্যাপারে ইমাম হাকিম রহ. স্বীয় মুস্তাদরাকে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন-
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: إِنَّ اللَّهَ قَدْ جَعَلَ الْأَهِلَّةَ مَوَاقِيتَ، فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَصُومُوا، وَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَأَفْطِرُوا، فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَاقْدُرُوا لَهُ، وَاعْلَمُوا أَنَّ الْأَشْهُرَ لَا تَزِيدُ عَلَى ثَلَاثِينَ. هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ عَلَى شَرْطِهِمَا، وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ. 
অর্থাৎ ইবনে উমার রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা নতুন চাঁদসমূহকে সময় নির্ণয়ক করে বানিয়েছেন। অতএব তোমরা যখন নতুন চাঁদ দেখবে তখন রোযা রাখবে। আবার যখন (দ্বিতীয়বার) নতুন চাঁদ দেখবে তখন ঈদ করবে। যদি তোমাদের নিকট আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয় তাহলে মাস গণনা করবে তথা ত্রিশদিন পূর্ণ করবে। আর জেনে রেখো যে, মাস ত্রিশদিনের বেশী হয় না। (মুস্তাদরাকে হাকিম: ১/৫৮৪, হা. নং ১৫৩৯ প্র. দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরূত)
এ হাদীসে প্রথমে الْأَهِلَّةُ বহুবচন শব্দ আনা হয়েছে, যা ইঙ্গিত করে উদয়স্থল হিসেবে পৃথিবীতে নতুন চাঁদ অনেক হয়। এরপর فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ (অর্থাৎ তোমরা যখন নতুন চাঁদ দেখবে তখন রোযা রাখো।) এ বাক্যটিতে একবচন সর্বনাম هُ ব্যবহার করা হয়েছে, যা ইঙ্গিত করে একসাথে সব উদয়স্থলের চাঁদ দেখা সবার পক্ষে সম্ভব নয় এবং এটাও প্রমাণ করে যে, এক উদয়স্থলের অঞ্চলের লোকেরা যখন চাঁদ দেখবে তখন শুধু তারাই রোযা রাখবে, অন্য অঞ্চলের লোকেরা নয়।
সুতরাং কুরআনের বাচনিক ভঙ্গি এবং তার ব্যাখ্যা সম্বিলত হাদীসের ইঙ্গিত থেকে প্রতীয়মান হলো যে, রোযা ও ঈদ প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য নিজ অঞ্চলের চাঁদ হিসেবে পালন করাই শরীয়তের কাম্য। তাই কুরআনের এ চাহিদার বিপরীত আমাদের জন্য সারাবিশ্বে একদিনে রোযা ও ঈদ করার প্রবণতা পরিত্যাগ করা উচিত।

২. হাদীসের ভাষ্য:
সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَكَرَ رَمَضَانَ فَقَالَ: لاَ تَصُومُوا حَتَّى تَرَوُا الْهِلَالَ، وَلاَ تُفْطِرُوا حَتَّى تَرَوْهُ، فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَاقْدُرُوا لَهُ.
অর্থাৎ আব্দুল্লাহ বিন উমার রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. রমযানের আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, তোমরা নতুন চাঁদ না দেখে রোযা রেখো না এবং নতুন চাঁদ না দেখে ঈদ করো না। আর যদি তোমাদের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয় তাহলে মাস মাস গণনা করো তথা ত্রিশদিন পূর্ণ করো। (সহীহ বুখারী: ৩/২৭, হা. নং ১৯০৬ প্র. দারু তাওকিন নাজাত, বৈরূত)
সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا رَأَيْتُمُ الْهِلَالَ فَصُومُوا، وَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَأَفْطِرُوا، فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَصُومُوا ثَلَاثِينَ يَوْمًا.
অর্থাৎ আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, যখন তোমরা নতুন চাঁদ দেখো তখন রোযা রাখো। আবার যখন নতুন চাঁদ দেখো তখন ঈদ করো। যদি তোমাদের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয় তাহলে ত্রিশদিন পূর্ণ রোযা রাখো। (সহীহ মুসলিম: ২/৭৬২, হা. নং ১০৮১ প্র. দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরূত)
উল্লেখিত হাদীসদ্বয় দ্বারা একদিনে রোযা ও ঈদ করার পক্ষ-বিপক্ষ উভয় দলই নিজেদের পক্ষে প্রমাণ পেশ করে। পক্ষপন্থীরা বলেন, إِذَا رَأَيْتُمُ الْهِلَالَ (যখন তোমরা নতুন চাঁদ দেখো) এখানে “তোমরা” বলতে সমগ্র বিশ্ববাসীতে সম্বোধন করা হয়েছে, বিধায় সমগ্র বিশ্বে একইদিনে রোযা ও ঈদ করতে হবে।
আমি বলবো, এখানে সমগ্র বিশ্ববাসী উদ্দেশ্য- এটা সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে ঠিক আছে, কিন্তু তাই বলে এদ্বারা সবার একসাথে রোযা ও ঈদ করার সাব্যস্ত হয় না। কেননা, এ ধরনের সম্বোধন কুরআন-সুন্নাহয় অসংখ্য রয়েছে, কিন্তু কেউ-ই সেখানে একসাথে বিধান পালন করার কথা বলেনেনি। যেমন কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, أَقِيْمُوا الصَّلَاةَ “তোমরা নামায কায়েম করো।” এখানে সমগ্র বিশ্ববাসী উদ্দেশ্য হলেও কেউ-ই একথা বলে না যে, এদ্বারা প্রমাণ হয়, বিশ্ববাসী সবাইকে নামায একসাথে পড়তে হবে। কারণ, সবারই জানা যে, এখানে সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে সবাইকে সম্বোধন করা হলেও প্রত্যেক এলাকায় যখন নামাযের সময় হবে তখনই নামায পড়তে হবে। এভাবে রোযা ও ঈদের বিষয়টিও অনুরূপ যে, উক্ত হাদীসে সবাইকে ব্যাপকভাবে সম্বোধন করা হলেও তদ্বারা একসাথে সবার রোযা ও ঈদ পালন করা সাব্যস্ত হয় না। বরং প্রত্যেক এলাকায় যখন সময় হবে তথা নতুন চাঁদ উঠবে তখনই রোযা ও ঈদ পালিত হবে।
এছাড়াও উভয় হাদীসের শেষাংশের উক্তি তথা فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَصُومُوا ثَلَاثِينَ يَوْمًا (যদি তোমাদের নিকট আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয় তাহলে ত্রিশদিন রোযা পূর্ণ করো।) এটা অনেকটা নিশ্চিত করে দেয় যে, এখানে সমগ্র বিশ্ববাসী একসাথে উদ্দেশ্য করে সম্বোধন করা হয়নি; বরং তা প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য আলাদ আলাদা সম্বোধন। কারণ, এতে বলা হয়েছে, “যদি তোমাদের নিকট আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয় তাহলে মাস ত্রিশদিন পূর্ণ করো।” আর এটা সবার জানা যে, সমগ্র বিশ্বে আকাশ একসাথে মেঘাচ্ছন্ন হয় না। অতএব হাদীসে যদি সবাইকে একসাথে সম্বোধন উদ্দেশ্য হতো তাহলে এ শেষাংশটি অনর্থক বলে বিবেচিত হতো। (নাঊযুবিল্লাহ!)

৩. সাহাবীদের কর্মপন্থা:
সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ كُرَيْبٍ، أَنَّ أُمَّ الْفَضْلِ بِنْتَ الْحَارِثِ، بَعَثَتْهُ إِلَى مُعَاوِيَةَ بِالشَّامِ، قَالَ: فَقَدِمْتُ الشَّامَ، فَقَضَيْتُ حَاجَتَهَا، وَاسْتُهِلَّ عَلَيَّ رَمَضَانُ وَأَنَا بِالشَّامِ، فَرَأَيْتُ الْهِلَالَ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ، ثُمَّ قَدِمْتُ الْمَدِينَةَ فِي آخِرِ الشَّهْرِ، فَسَأَلَنِي عَبْدُ اللهِ بْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، ثُمَّ ذَكَرَ الْهِلَالَ فَقَالَ: مَتَى رَأَيْتُمُ الْهِلَالَ؟ فَقُلْتُ: رَأَيْنَاهُ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ، فَقَالَ: أَنْتَ رَأَيْتَهُ؟ فَقُلْتُ: نَعَمْ، وَرَآهُ النَّاسُ، وَصَامُوا وَصَامَ مُعَاوِيَةُ، فَقَالَ: لَكِنَّا رَأَيْنَاهُ لَيْلَةَ السَّبْتِ، فَلَا نَزَالُ نَصُومُ حَتَّى نُكْمِلَ ثَلَاثِينَ، أَوْ نَرَاهُ، فَقُلْتُ: أَوَ لَا تَكْتَفِي بِرُؤْيَةِ مُعَاوِيَةَ وَصِيَامِهِ؟ فَقَالَ: لَا، هَكَذَا أَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থাৎ কুরাইব রাযি. থেকে বর্ণিত যে, উম্মে ফযল রাযি. তাকে মুআবিয়া রাযি.-এর নিকট শামে পাঠালেন। তিনি বলেন, অতপর আমি শামে এসে তার প্রয়োজন পূরণ করলাম। ইতিমধ্যে শামদেশে থাকাবস্থায় চাঁদ দেখা গেলো এবং শুক্রবার রাতে আমি চাঁদ দেখতে পেলাম। তারপর রমযান মাসের শেষদিকে আমি মদীনায় ফিরে আসলে ইবনে আব্বাস রাযি. আমার অবস্থা জিজ্ঞাসা করে চাঁদের আলোচনা তুললেন। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কবে চাঁদ দেখেছো? আমি বললাম, আমরা শুক্রবার রাতে দেখেছি। তিনি বললেন, তুমি কি নিজে দেখেছো? আমি বললাম, হ্যা, আমি দেখেছি এবং সব মানুষও দেখেছে। সবাই রোযা রেখেছে এবং মুআবিয়া রাযি.ও রোযা রেখেছেন। ইবনে আব্বাস রাযি. বললেন, কিন্তু আমরা তো (রমযানের) চাঁদ শনিবার রাতে দেখেছি। সুতরাং আমরা শাওয়ালের চাঁদ না দেখা বা রমযান ত্রিশ পূর্ণ না করা পর্যন্ত রোযা রাখতেই থাকবো। তখন আমি বললাম, মুআবিয়া রাযি.-এর চাঁদ দেখা ও রোযা রাখা কি আপনার জন্য যথেষ্ঠ নয়? তিনি বললেন, না। রাসুলুল্লাহ সা. আমাদেরকে এভাবেই (রোযা-ঈদ ইত্যাদি পালন) করতে নির্দেশ দিয়েছেন। (সহীহ মুসলিম: ২/৭৬৫, হা. নং ১০৮৭, প্র. দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরূত)
এ হাদীস থেকে স্পষ্টভাবে বুঝে আসে যে, এক অঞ্চলের চাঁদ দেখা অন্য অঞ্চলের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে না। প্রত্যেক অঞ্চলের লোক নিজ অঞ্চলের চাঁদ দেখার উপরই নির্ভর করবে। নতুবা সিরিয়াতে মুআবিয়া রাযি.-এর মতো মান্যবর সাহাবীর চাঁদ দেখাকে ইবনে আব্বাস রাযি. মদীনাতে কিছুতেই অগ্রাহ্য করতেন না। এ থেকে বুঝা যায়, সাহাবায়ে কেরাম রাযি. এক অঞ্চলের চাঁদ অন্য অঞ্চলের জন্য গ্রহণযোগ্য মনে করতেন না। অতএব সারাবিশ্বে একদিনে রোযা ও ঈদ করার চিন্তা সাহাবীদের চিন্তা-চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক।

৪. সালফে সালেহীনের কর্মপন্থা:
ইমাম তিরমিযী রহ. স্বীয় সুনানে একটি অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়েছেন- بَابُ مَا جَاءَ لِكُلِّ أَهْلِ بَلَدٍ رُؤْيَتُهُمْ অর্থাৎ প্রত্যেক শহরবাসীর জন্য নিজেদের চাঁদ দেখা সংক্রান্ত অধ্যায়। এ অধ্যায়ে কুরাইব রহ.-এর ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন-
وَالعَمَلُ عَلَى هَذَا الحَدِيثِ عِنْدَ أَهْلِ العِلْمِ أَنَّ لِكُلِّ أَهْلِ بَلَدٍ رُؤْيَتَهُمْ.
অর্থাৎ উলামায়ে কেরামের নিকট এ হাদীস অনুযায়ীই আমল চলে আসছে যে, প্রত্যেক শহরবাসীর জন্য নিজেদের চাঁদ দেখাই গ্রহণযোগ্য। (সুনানে তিরমিযী: ২/৬৯, হা. নং ৬৯৩ সংক্রান্ত, প্র. দারুল গারবিল ইসলামী, বৈরূত)
ইমাম তিরমিযী রহ.-এর এ বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তাঁর পূর্ববর্তী উলামায়ে কেরাম এবং সালফে সালেহীন এভাবেই রোযা ও ঈদ পালন করে আসছেন যে, প্রত্যেক এলাকার চাঁদ অনুযায়ীই রোযা ও ঈদ পালিত হবে, অন্য এলাকার চাঁদ অনুযায়ী নয়। সুতরাং সারাবিশ্বে একদিনে রোযা ও ঈদ করা সালফে সালেহীনের কর্মপন্থারও পরিপন্থী।

৫. চার মাযহাবের দৃষ্টিভঙ্গি:
হানাফী মাযহাবে “চাঁদের উদয়স্থলের ভিন্নতার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই” বলে একটি কথা প্রসিদ্ধ আছে। বাস্তবতা হলো, এ ব্যাপারে একাধিক কিতাবে এরূপ বর্ণনা থাকলেও হানাফী মাযহাবের অন্যান্য ফকীহ ইমামগণ এর ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এটা শুধুমাত্র নিকটবতী অঞ্চলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেসব অঞ্চলে এক চাঁদ মানার দ্বারা চাঁদের উদয়স্থল ভিন্ন হয় না। হানাফী মাযহাবের অন্যতম নির্ভরযোগ্য কিতাব বাদায়েউস সানায়ে গ্রন্থে ইমাম কাসানী রহ. বলেন-
هَذَا إذَا كَانَتْ الْمَسَافَةُ بَيْنَ الْبَلَدَيْنِ قَرِيبَةً لَا تَخْتَلِفُ فِيهَا الْمَطَالِعُ، فَأَمَّا إذَا كَانَتْ بَعِيدَةً فَلَا يَلْزَمُ أَحَدَ الْبَلَدَيْنِ حُكْمُ الْآخَرِ لِأَنَّ مَطَالِعَ الْبِلَادِ عِنْدَ الْمَسَافَةِ الْفَاحِشَةِ تَخْتَلِفُ فَيُعْتَبَرُ فِي أَهْلِ كُلِّ بَلَدٍ مَطَالِعُ بَلَدِهِمْ دُونَ الْبَلَدِ الْآخَرِ. 
অর্থাৎ একদেশের চাঁদ দেখা অন্যদেশের জন্য গ্রহণযোগ্য তখনই হবে, যখন দু’দেশের মধ্যকার দূরত্ব নিকটবর্তী হবে, যার দরুন উভয় দেশের চাঁদের উদয়স্থল ভিন্ন না হয়ে যায়। আর যদি উভয়দেশের মধ্যকার ব্যবধান ও দূরত্ব অধিক হয় তাহলে একদেশের চাঁদ দেখা অন্যদেশের জন্য কার্যকর হবে না। কেননা, অত্যাধিক দূরত্বের কারণে চাঁদের উদয়স্থল ভিন্ন হয়ে যায়। সুতরাং এক্ষেত্রে প্রত্যেক শহর আপন উদয়স্থল অনুযায়ী চাঁদ দেখার বিষয়টি গ্রহণ করবে, অন্য দেশের হিসেবে নয়। (বাদায়েউস সানায়ে:২/৮৩, প্র. দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরূত)
মোটকথা, হানাফী মাযহাবের গ্রহণযোগ্য মতানুসারে সমগ্র বিশ্বে একদিনে রোযা ও ঈদ করার কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে শাফেয়ী মাযহাবও হানাফী মাযহাবের অনুরূপ। ইমাম নববী রহ. বলেন-
وَالصَّحِيحُ عِنْدَ أَصْحَابِنَا أَنَّ الرُّؤْيَةَ لَا تَعُمُّ النَّاسَ بَلْ تَخْتَصُّ بِمَنْ قَرُبَ عَلَى مَسَافَةٍ لَا تُقْصَرُ فِيهَا الصَّلَاةُ.
অর্থাৎ আমাদের শাফেয়ী মাযহাবের আলেমদের নিকট বিশুদ্ধ মত হলো, চাঁদ দেখা সকল মানুষের জন্য ব্যাপক নয়; বরং তা শুধু শরয়ী সফরের দূরত্বের অভ্যন্তরে যারা অবস্থানরত তাদের জন্যই নির্ধারিত। (শরহে মুসলিম, নববী: ৭/১৯৭ প্র. দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরূত)
বোঝা গেলো, শাফেয়ী মাযহাবে এ ব্যাপারে মতানৈক্য থাকলেও তাদের বিশুদ্ধ মত হলো, চাঁদ নিকটবর্তী অঞ্চলগুলোর জন্য ধর্তব্য হবে, দূরবর্তী অঞ্চলগুলোর জন্য নয়। আর নিকটবর্তী ও দূরবর্তী অঞ্চলের নির্ণয়ক হলো সফরের দূরত্ব। সুতরাং চাঁদ দেখার অঞ্চল থেকে যেসব অঞ্চল শরয়ী সফরের দূরত্বে অবস্থিত সেসব অঞ্চল দূরবর্তী অঞ্চল। আর যেসব অঞ্চল শরয়ী সফরের দূরত্বে নয় সেসব অঞ্চল নিকটবর্তী অঞ্চল।
মালেকী মাযহাবে এ সংক্রান্ত দু’রকম বর্ণনা পাওয়া যায়। এক: এক স্থানের চাঁদ দেখা বিশ্বস্তসূত্রে অন্য অঞ্চলে পৌঁছলে তা গ্রহণযোগ্য। দুই: প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য শুধু নিজ অধিবাসীদের চাঁদ দেখাই গ্রহণযোগ্য, অন্য অঞ্চলের নয়। ইমাম ইবনে আ. বার রহ. বলেন-
وَاخْتَلَفَ الْعُلَمَاءُ فِي حُكْمِ هِلَالِ رَمَضَانَ أَوْ شَوَّالٍ يَرَاهُ أَهْلُ بَلَدٍ دُونَ غَيْرِهِمْ. فَكَانَ مَالِكٌ فِيمَا رَوَاهُ عنه بن الْقَاسِمِ وَالْمِصْرِيُّونَ إِذَا ثَبَتَ عِنْدَ النَّاسِ أَنَّ أَهْلَ بَلَدٍ رَأَوْهُ فَعَلَيْهِمُ الْقَضَاءُ لِذَلِكَ الْيَوْمِ الذي أفطروه... وَرَوَى الْمَدَنِيُّونَ عَنْ مَالِكٍ... إِنَّ الرُّؤْيَةَ لَا تَلْزَمُ غَيْرَ أَهْلِ الْبَلَدِ الَّذِي وَقَعَتْ فِيهِ.
অর্থাৎ রমযান বা শাওয়ালের চাঁদ এক অঞ্চলের লোকেরা দেখলে এবং অন্যান্য অঞ্চলের লোকেরা না দেখলে সে ব্যাপারে উলামায়ে কেরাম মতভেদ করেছেন। সুতরাং ইমাম ইবনে কাসেম রহ. এবং মিসরবাসীদের বর্ণনানুসারে ইমাম মালেক রহ.-এর মত হলো, যখন লোকদের নিকট প্রমাণ হবে যে, এক অঞ্চলের অধিবাসীরা চাঁদ দেখেছে তাহলে তাদের জন্য ঐদিনের রোযার কাযা করা আবশ্যক হবে, যেদিনে তারা রোযা রাখেনি। ...আর মদীনাবাসীগণ ইমাম মালেক রহ. থেকে বর্ণনা করেন... যে অঞ্চলে চাঁদ দেখা গেছে সে অঞ্চল ছাড়া অন্য অঞ্চলের জন্য তা আবশ্যক হবে না। (আল ইস্তেযকার: ৩/২৮২, প্র. দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরূত)
তিনি আরো বলেন-
قَدْ أَجْمَعُوا أَنَّهُ لَا تُرَاعَى الرُّؤْيَةُ فِيمَا أُخِّرَ مِنَ الْبُلْدَانِ كَالْأَنْدَلُسِ مِنْ خُرَاسَانَ.
অর্থাৎ এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষন করেছেন যে, অনেক দূরবর্তী অঞ্চলের ক্ষেত্রে চাঁদ দেখা ধর্তব্য হবে না। যেমন আফগানিস্তান থেকে স্পেন। (প্রাগুক্ত: ৩/২৮৩)
এ থেকে প্রমাণ হয়, মালেকী মাযহাবে উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য হওয়া নিয়ে দু’ধরনের মত পাওয়া গেলেও অত্যাধিক দূরবতী অঞ্চলসমূহে যে অন্য অঞ্চলের চাঁদ দেখা ধর্তব্য নয় সে ব্যাপারে ইজমা রয়েছে। সুতরাং মালেকী মাযহাবও সমগ্র বিশ্বে একইদিনে রোযা ও ঈদ করার পক্ষে নয়।
শুধুমাত্র হাম্বলী মাযহাবে এ ব্যাপারে মতানৈক্য ছাড়া একটি মতই পাওয়া যায়। তাদের নিকট এক অঞ্চলে চাঁদ দেখা গেলে তা অন্য অঞ্চলের জন্যও আবশ্যক হয়ে যায়। যেমন ইমাম ইবনে কুদামা রহ. বলেন-
وَإِذَا رَأَى الْهِلَالَ أَهْلُ بَلَدٍ، لَزِمَ جَمِيعَ الْبِلَادِ الصَّوْمُ.
অর্থাৎ যখন কোনো শহরের অধিবাসীরা চাঁদ দেখবে তখন অন্যান্য সকল শহরবাসীদের জন্য রোযা রাখা আবশ্যক হয়ে পড়বে। (আল মুগনী: ৩/১০৭, প্র. মাকতাবাতুল কাহেরা, মিসর)
আমরা বলবো, হাম্বলী মাযহাবের এ বক্তব্যটি নিকটবর্তী বা অল্প দূরবর্তী অঞ্চলগুলোর জন্যই কেবল প্রযোজ্য। নচেৎ অত্যাধিক দূরবর্তী অঞ্চল হলে সেক্ষেত্রে কারো নিকটই অন্য অঞ্চলের চাঁদ দেখা গ্রহণযোগ্য হবে না; যেমনটি ইমাম ইবনে আ. বার রহ. বর্ণনা করেছেন।
সুতরাং চার মাযহাবের সারকথা দাঁড়ালো- অত্যাধিক দূরবর্তী অঞ্চলের ক্ষেত্রে কোনো মাযহাবেই ভিন্ন অঞ্চলের চাঁদ দেখা গ্রহণযোগ্য নয়। আর সাধারণ দূরবর্তী অঞ্চল হলে সেক্ষেত্রে শুধু হাম্বলী মাযহাব অনুযায়ী ভিন্ন অঞ্চলের চাঁদ দেখা গ্রহণযোগ্য, অন্য মাযহাব অনুসারে নয়। এ ব্যাপারে মালেকী মাযহাবে দু’টি মত পাওয়া যায়। আর হানাফী ও শাফেয়ী মাযহাবের বিশুদ্ধতম মতানুসারে শুধুমাত্র নিকটবর্তী অঞ্চলের ক্ষেত্রে ভিন্ন অঞ্চলের চাঁদ দেখা গ্রহণযোগ্য, দূরবর্তী অঞ্চলের চাঁদ দেখা কোনোভাইে গ্রহণযোগ্য নয়। এ থেকে সারনির্যাস বের হয় যে, চার মাযহাব অনুসারে সমগ্র বিশ্বে একইদিনে রোযা ও ঈদ করা বৈধ নয়।

বাস্তবতার আলোকে একদিনে রোযা ও ঈদ করার সম্ভাব্যতা:
রাসূল সা.-এর যুগ হতে আজ অবধি সমগ্র মুসলিম জাহানে নিজ নিজ দেশের চাঁদ দেখা অনুযায়ী রোযা ও ঈদ পালনের আমল নিরবচ্ছিন্নধারায় চলে আসছে। সাহাবা রাযি., তাবেয়ীন রহ. ও সালফে সালেহীন কেউ-ই কোনোদিন এ চিন্তাভাবনা বা পরিকল্পনা করেননি যে, সমগ্রবিশ্বে একইদিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করা উচিত। এতে যদি কোনো লাভ, সওয়াব বা মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ নিহিত থাকতো তাহলে আমাদের চেয়ে তাঁরাই এর বেশি হকদার হতেন। কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের আমল তো দূরের কথা, কোনো কিতাবে সম্ভাব্য মাসআলা হিসাবে এর কোনো আলোচনাই আসেনি। এতে বুঝা যায়, বিষয়টি তাদের কাছে একেবারেই গুরুত্বহীন ছিলো।
অনেকে ভাবতে পারে যে, সে যুগে যেহেতু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ছিলো না তাই এ বিষয়ে কখনো কোনো চিন্তা কারো মাথায় আসেনি। কিন্তু বর্তমান আধুনিক যুগে সারাবিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। যে কোনো খবর এখন এক মূহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে পৌঁছে দেয়া যায়। তাই বর্তমান যুগে তাঁরা থাকলে অবশ্যই তাঁরা এ নিয়ে নতুন করে ভাবতেন এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে সারাবিশ্বে একইদিনে রোযা ও ঈদ করার ব্যাপারে ফয়সালা দিতেন। এমনটাই অনেকের দাবি।
তাদের উদ্দেশ্যে প্রথমে বলতে চাই, বিষয়টি যদি এমনই হতো তাহলে তাঁরা সারাবিশ্বে একসাথে রোযা ও ঈদ করতে না পারলেও কমপক্ষে দ্রুতগামী বাহনের মাধ্যমে চাঁদের খবর যথেষ্ঠ দূরাঞ্চলের এলাকাগুলোতে পৌঁছে দেয়ার সামর্থ রাখতেন। আর এভাবে মুসলিম বিশ্বের বৃহৎ একাংশ এক চাঁদ দেখায় রোযা ও ঈদ করতে পারতেন। কিন্তু দীর্ঘ চৌদ্দশ বছরের ইতিহাসে এর নূন্যতম কোনো নজির দেখা যায়নি।
দ্বিতীয়ত, বাস্তবতার আলোকে এক চাঁদে সারাবিশ্বে একইদিনে রোযা ও ঈদ করা সম্ভব কিনা এটাও দেখতে হবে। এ বিষয়টি একটু গভীর মনোযোগ সহকারে পর্যালোচনা করা উচিত। আমরা এ দৃষ্টিকোণ থেকে সমগ্রবিশ্বে একইদিনে ঈদ ও রোযা শুরু করার সম্ভাব্যতা কতটুকু এবং এর বাস্থবতা কী- তা নিয়ে কয়েকটি পয়েন্টে কিছু আলোচনা করছি।

এক: একটি বিষয় আমাদের জানা থাকা দরকার যে, সূর্য আর চাঁদের উদয়স্থল ভিন্নমূখী। যদিও অস্ত যাওয়ার দিক থেকে উভয়ে পশ্চিমগামী। কিন্তু এ উদয়স্থলের ভিন্নমূখিতাই হিসেবের ক্ষেত্রে বিপরীত এক নীতি মেনে চলতে আমাদের বাধ্য করছে। আর তা হলো, সূর্যের উদয়স্থল পূর্বদিকে হওয়ায় পূর্বাঞ্চলে দিন আগে শুরু হয়। এজন্য পৃথিবীতে সর্বপ্রথম দিন অবলোকন করে জাপান আর সর্বশেষ অবলোকন করে আলাস্কা। এ হিসেবে পশ্চিমাঞ্চল পূর্বাঞ্চলের চেয়ে সময়ের দিক থেকে পিছিয়ে। কিন্তু চাঁদের হিসাব সম্পূর্ণ এর উল্টো। কেননা, চাঁদের উদয়স্থল সর্বপ্রথম পশ্চিমাকাশে হয়। আর তাই চান্দ্রমাস হিসেবে পশ্চিমাঞ্চল পূর্বাঞ্চলের চেয়ে অগ্রগামী।

দুই: দিনরাত আবর্তিত হয় সৌর কেন্দ্রিক। এখানে চাঁদের কোনো কর্তত্ব নেই। কিন্তু মাস ও বছর সৌর এবং চান্দ্র উভয় কেন্দ্রিক হয়। বিষয়টি এখন আরো জটিল আকার ধারণ করলো। যেহেতু রোযা দিনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় যেমন এখানে সৌর সময়ের প্রভাব রয়েছে, ঠিক তেমনি রমযান চান্দ্র মাস হওয়ায় এতে চাঁদেরও যথেষ্ঠ সম্পৃক্ততা আছে। অথচ উভয়ের হিসাব সম্পূর্ণ বিপরীতমূখী!

তিন: আমরা যদি সারাবিশ্বে একদিনে রোযা ও ঈদ করতে চাই তাহলে আলাস্কাতে যখন চাঁদ উদিত হবে তখন জাপানে পরের দিনের সকাল শুরু হয়ে যাবে। উদাহরণস্বরূপ জানুয়ারি মাসের দশ তারিখের সন্ধ্যায় আলাস্কাতে চাঁদ দেখা গেলো। ঠিক ঔ সময় জাপানে জানুয়ারির এগারো তারিখের সকাল শুরু হয়ে গেছে। তাহলে আলাস্কার চাঁদ জাপানের জন্য প্রযোজ্য করলে রোযা, তারাবীহ, সাহরী ও ইফতারের কী অবস্থা হবে- একটু কি ভেবে দেখেছেন?

চার: যদি আমরা আলাস্কাকে মূল না ধরে সৌদিআরবকে মূল কেন্দ্র বিবেচনা করি তাহলে সমস্যা আরো বাড়বে বৈ কমবে না। বিষয়টি একটু খুলে বলি। সৌদিআরব পৃথিবীর মধ্যভাগে অবস্থিত হলেও আমরা পূর্বে বলে এসেছি যে, চাঁদের উদয়স্থল সর্বপ্রথম পশ্চিমাকাশে হয়। এখন সৌদিআরবকে যদি মূল কেন্দ্র ভাবা হয় তাহলে কখনো যদি এমন হয় যে, আলাস্কাতে চাঁদ দেখা গেছে, কিন্তু সৌদিআরবে চাঁদ দেখা যায়নি তখন মূল কেন্দ্র সৌদিআরবে চাঁদ না দেখা যাওয়াতে কি আলাস্কাবাসী রোযা-তারাবীহ শুরু করবে না? ব্যাপারটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

পাঁচ: বর্তমানে অনেকে সৌদিআরবের সাথে মিলে রোযা ও ঈদ করলেও অধিকাংশ লোকের জানা নেই যে, সৌদিআরবের চাঁদ দেখার নীতিমালা বিশ্বের অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতের সাথে সাংঘর্ষিক। এ ব্যাপারে আল্লামা সাঈদ আহমাদ পালনপুরী দা. বা. বলেন, প্রায় চল্লিশ বছর পূর্বে ‘রাবেতা আলমে ইসলামী সৌদিআরব’-এর উদ্যোগে ‘সমগ্র বিশ্বে এক চাঁদ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ভারত উপমহাদেশ থেকে আল্লামা মনযূর আহমাদ নোমানী রহ. ঐ সেমিনারে আমন্ত্রিত ছিলেন। সেমিনারে প্রস্তাব পেশ করা হয়, সমগ্র বিশ্বের মুসলমানরা যেহেতু একই দিনে হজ করে; বিধায় রোযা ও ঈদ পালনও একদিনে হওয়া উচিত। তাদের প্ল্যান এ রকম ছিলো যে, মাস শুরু ও শেষ হওয়ার ভিত্তি ‘নিউ মুন’ القمر الجديد এর উপর রাখা হলে সমগ্র বিশ্বে একইদিনে রোযা ও ঈদ পালন করা সম্ভব। কিন্তু আমন্ত্রিত উলামায়ে কিরাম এ প্রস্তাবকে নাকচ করে দেন। কেননা, নিউমুনকে শরীয়ত স্বীকৃতি দেয় না। তথাপি সৌদি কর্তৃপক্ষ এটাকেই মূলভিত্তি মেনে চাঁদ দেখার নীতিমালা তৈরি করেছে, যা শরীয়াহর সাথে সামঞ্জস্যশীল নয়।

নিউমুন: নতুন এক ফেতনার অশনি সংকেত 
বর্তমানে চাঁদ দেখা নিয়ে অন্যতম আলোচিত একটি নাম হলো, ‘নিউমুন’ তথা নতুন চাঁদ। নিউমুনের বাস্তবতা হলো, চাঁদ মূলত তার আপন কক্ষপথে চলতে চলতে একপর্যায়ে ঠিক সূর্যের সমান্তরাল অবস্থানে চলে আসে। একে চাঁদ-সূর্যের মিলনাবস্থা বলা হয়। এ অবস্থায় সূর্যের তীব্র আলোর বিকিরণে চাঁদ তার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে। কেমন যেনো সে সূর্যের অভ্যন্তরে বিলীন হয়ে যায়। এ অবস্থা সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন মিনিট স্থায়ী হয়। তারপর চাঁদ ধীরে ধীরে সূর্যের বলয় থেকে বের হয়ে আসে এবং তার অস্তিত্ব ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে থাকে। প্রায় বিশ ঘন্টা (কারো মতে আঠারো ঘন্টা) পর তা পৃথিবী থেকে দেখার উপযুক্ত হয়। সৌরবিজ্ঞানীরা এ সময়ের পূর্বে চাঁদ দেখাকে সম্পূর্ণ অসম্ভব বলে থাকেন। 
সুতরাং বুঝা গেলো, ‘নিউমুন’ অর্থ নতুন চাঁদ, যা সূর্যের মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়ার পরে জন্ম হয় এবং তখন থেকে প্রায় আঠারো বা বিশ ঘন্টা পর্যন্ত তা দেখা সম্ভব হয় না। 
এখন জানা দরকার, শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে তা কতটুকু গুরুত্ব বহন করে? এ ব্যাপারে আল্লামা সাঈদ আহমাদ পালনপুরী দা. বা. আল্লামা মানযুর নুমানী রহ.-এর বক্তব্য উল্লেখ করে বলেন, আমি কুরআন-হাদীসের বেশ কিছু দলীল দ্বারা এ কথা প্রমাণ করেছি যে, ‘তাওহীদে আহিল্লাহ’ তথা ‘সমগ্র বিশ্বের জন্য এক চাঁদ’ অসম্ভব একটি বিষয়। আর নিউমুনের উপর ভিত্তি করে রোযা-ঈদ একইদিনে করা উল্লিখিত আয়াত তথা- يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْأَهِلَّةِ قُلْ هِيَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ এর দৃষ্টিকোন থেকে সম্পূর্ণ ভুল।
মুফতী আব্দুর রহীম লাজপুরী রহ. লিখেন-
চাঁদের জন্ম থেকে দেখার পূর্ব মুহর্ত পর্যন্ত উল্লিখিত অবস্থাদি শরয়ী দৃষ্টিকোণে সম্পূর্ণ গুরুত্বহীন। (ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়া: ৭/২২৪) 
এতে বুঝা যায়, শুধু বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণে চাঁদের জন্মের খবর জেনেই চাঁদ উঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ অত্যন্ত অযৌক্তিক ও কুরআন-হাদীস পরিপন্থী। তাই নিউমুনের ভিত্তিতে চাঁদ দেখার সিদ্ধান্ত কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

আরো যেসব কারণে সারাবিশ্বে একদিনে রোযা-ঈদ পালন সম্ভব নয়:
১. ইসলাম মানুষের জন্য স্বভাবজাত একটি জীবন বিধান। এর সব আহকাম ও বিধিবিধান স্বাভাবিক। অযথা কষ্ট-ক্লেশ বিবর্জিত। সঙ্গত কারণেই সমগ্র বিশ্বে একদিনে রোযা-ঈদ পালন করতে পৃথিবীর সব দেশের সাথে লাইন ও যোগাযোগ করা, সাক্ষীদেরকে জোগাড় করা, অসংখ্য মোবাইল-ফোন ও যোগাযোগব্যবস্থার মাধ্যমে চাঁদ দেখার খবর ছড়িয়ে দেয়াসহ আরো কতো আয়োজনের প্রয়োজন হবে! এসব কিছু ইসলাম ও শরীয়তের মেযাজের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। 
২. প্রয়োজন ছাড়া যে কোনো কাজে অঢেল টাকা ব্যয় করা অপচয়। আর তা যদি বাইতুল মাল তথা জনগনের টাকা হয় তাহলে তো গুনাহের মাত্রা আরো তীব্র হবে। সুতরাং যে কাজ চৌদ্দশ বছর পর্যন্ত কেউ প্রয়োজন মনে করলো না; তেমন একটি নবআবিষ্কৃত অপ্রয়োজনীয় কাজে প্রচুর অর্থ খরচ অপচয় বলেই বিবেচিত হবে, যা ইসলাম কখনো পছন্দ করে না।
৩. শর্তযুক্ত বিষয় অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয়। বিষয়গুলো মৌলিকভাবে বৈধ হলেও গৌণভাবে অবৈধ গণ্য করা হয়। সমগ্র বিশ্বে একদিনে রোযা ও ঈদ করার বিষয়ে শাহাদাত, খবরে মুস্তাফীয, শাহাদাতের শর্তাবলী, আকাশ পরিষ্কার ও অপরিষ্কার হওয়াসহ বহু জরুরী বিষয় রয়েছে, যা একদেশের হেলাল কমিটির পক্ষেই পালন করা দুস্কর! তাহলে সারাবিশ্বের ক্ষেত্রে কী অবস্থা হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। 
৪. এই বিশাল কাজ আঞ্জাম দেয়ার জন্য স্বাভাবিকভাবে সৌদিআরবকে মূলকেন্দ্র বানানো হয়। অথচ তাদের চাঁদ দেখার উক্ত নীতিমালা শরয়ী বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। যেমন, নিউমুনের ভিত্তিতে চাঁদ উঠা প্রমাণ করা এবং সৌরবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে চাঁদ উঠা অসম্ভব হলেও ভুয়া সাক্ষ্যের মাধ্যমে চাঁদ উঠা প্রমাণ করা ইত্যাদি।
৫. বিশ্বের অনেক মুসলিমই সালাফী ঘরানার এবং শাফেয়ী মাযহাব অনুসারী, যারা একসাথে রোযা ও ঈদের পক্ষে নন। সিংহভাগ হানাফী উলামা হযরতও ইমাম কুদুরী রহ.-সহ পরবর্তী ফকীহদের মত গ্রহণ করায় সমগ্র বিশ্বে একইদিনে রোযা-ঈদ পালন করার বিষয়ে সবাইকে একমত করা সম্ভব নয়। তাই এ ধরনের আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা করলে তা সাম্য ও ঐক্যের বদলে আরো বিভেদ ও সমস্যার সৃষ্টি করবে।

একটি সংশয় ও তার নিরসন:
সারাবিশ্বে একদিনে রোযা ও ঈদ করার পক্ষালম্বীরা সবচে বড় দলীল যেটা পেশ করে তাহলো- যদি সারাবিশ্বের হিজরী তারিখে কমবেশ হয় তাহলে শরীয়তের যেসব দিবস সুনির্ধারিত সেসব দিবস কিভাবে নির্ণয় হবে? যেমন শবে বরাত, শবে কদর, আরাফা দিবস, আশূরা দিবস, কিয়ামতের নির্ধারিত শুক্রবার দিবস ইত্যাদি।
আমার বুঝে আসে না, অনেক বড় বড় পণ্ডিতরা কীভাবে এমন একটি হাস্যকর দলীল দিয়ে সারাবিশ্বে একদিনে রোযা ও ঈদ করার কথা বলেন? বিষয়টি খুবই অবাক লাগে! এ বিষয়ে আমাদের কথা হলো-

এক: শরীয়তের নির্ধারিত দিবসগুলো বাস্তবিকতার আলোকে নির্ধারিত দিবসই হতে হবে এমনটা আবশ্যক নয়। বরং মানুষকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার প্রবল ধারণা অনুযায়ী কাজ করতে আদেশ করা হয়েছে। যেমন কিবলা সম্বন্ধে অজ্ঞ ব্যক্তি তার প্রবল ধারণা অনুসারে একদিক ফিরে নামায পড়লেই তা আদায় হয়ে যায়। যদিও বাস্তবতার আলোকে সেটা আসল কিবলার দিক না হয়ে থাকুক। অনুরূপ নামাযের রাকআত সংখ্যার ব্যাপারে সন্দেহ হলে তার প্রবল ধারণা অনুসারে রাকআত সংখ্যা নির্ধারিত করে নামায শেষ করতে আদেশ দেয়া হয়েছে। যদিও বাস্তবে তার রাকআত সংখ্যা তার ধারণার বিপরীত হয়। মোটকথা, শরীয়ত অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার প্রবল ধারণাকেই গণ্য করেছে, বাস্তবতার আলোকে সঠিক হওয়াকে বাধ্য করে দেয়নি।

দুই: সওয়াব ও ফযীলতপূর্ণ বিষয়গুলো আল্লাহর একান্ত বিশেষ দান। এক্ষেত্রে আল্লাহ বান্দার চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও নিষ্ঠা দেখেন। অজ্ঞতাবশত এক্ষেত্রে কারো কোনো শর্ত ছুটে গেলেও আল্লাহ তার বান্দার নিয়ত অনুসারে ফলাফল দান করেন। রাসূলুল্লাহ সা.-এর যুগে এর অনেক প্রমাণ আছে। তাই এ বিষয়ে কে ফযীলতপূর্ণ দিবস পেয়েছে আর কে পায়নি তা নির্ধারণ করার দায়িত্ব আমাদের নয়।

তিন: যদি সারাবিশ্বে একদিনে রোযা ও ঈদ শুরু করাও হয় তাহলে যদি কখনো এমন হয় যে, চাঁদ দেখা গেলো মার্চের ২১ তারিখে, কিন্তু বাস্তবে চাঁদ উঠেছে ২০ তারিখে, তাহলে সেক্ষেত্রে কি একথা বলা হবে যে, সে বছর সবাই শরীয়াহ নির্ধারিত দিবসগুলো থেকে বঞ্চিত হয়েছে? এমনটা কেউই বলবে না। কারণ, এখানে মূল বিষয় হলো, শরীয়তের মূলনীতিকে সামনে রেখে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা বাস্তবতার আলোকে ভুল হলেও উক্ত সিদ্ধান্ত ভুল বলে সাব্যস্ত হবে না। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সা.-এর যুগেও এমন ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিলো। শাবানের ২৯ তারিখে মদীনায় কেউ চাঁদ না দেখায় পরদিন রাসূলুল্লাহ সা. এবং সাহাবীদের কেউই রোযা ছিলেন না। পরেরদিন মদীনার পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে এক বেদুইন এসে চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিলে তারপর সেদিনকে রমযানের ১ম তারিখ ঘোষণা করা হয়। এখানে এ বেদুইনের সাক্ষ্য না পাওয়া গেলে কিন্তু ঠিকই বাস্তবতার বিপরীত সেদিন শাবানের ৩০ হতো। আর এ কারণে শরীয়তের দৃষ্টিতে নির্ধারিত দিবসগুলোর ফযীলত পাওয়ার ক্ষেত্রে কারো কোনো সমস্যাও হতো না। অনুরূপ ইবনে আব্বাস রাযি.-এর ঘটনা আরো বেশী স্পষ্ট যে, এখানে বাস্তবতার আলোকে দিবস হওয়া জরুরী নয়; বরং শরীয়তের মূলনীতি মেনে চলাই আসল কথা। এ কারণে তাঁর একদিন পূর্বে মুআবিয়া রাযি.-এর চাঁদ দেখার খবর পাওয়া সত্ত্বেও তিনি শরীয়তের এ মূলনীতি থেকে ফিরে আসেননি যে, “তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখো এবং চাঁদ দেখে ঈদ করো।” এখানে কি কারো একথা বলার স্পর্ধা হবে যে, সে বছর মদীনাবাসীরা শরীয়তের নির্ধারিত দিবসগুলোর ফযীলত থেকে বঞ্চিত হয়েছিলো?

চার: শরীয়তের একটি অন্যতম মূলনীতি হলো- “মতভেদপূর্ণ বিষয়গুলোতে কোনো মতের ব্যাপারে কটাক্ষ করা যাবে না।” এর কারণ হলো, মতানৈক্যপূর্ণ বিষয়গুলোতে কারো মতই চুড়ান্ত ও অকাট্য নয়। যে কারো মতই সঠিক হতে পারে। এজন্য আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অনুসারীদের আকীদা হলো, এ ধরনের মাসআলাগুলোতে উভয় মতের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে হবে এবং কোনো মতকে চুড়ান্ত বলে ভিন্ন মতকে বাতিল বলা যাবে না। আর এ কারণেই তো চার মাযহাবের মতানৈক্যপূর্ণ মাসআলাগুলোতে কেউ অপরটাকে বাতিল বলে না। হানাফী মাযহাবে রক্ত বের হলে অযু ভেঙ্গে যায়, কিন্তু শাফেয়ী মাযহাবে ভাঙ্গে না। এখন শাফেয়ী মাযহাবের কারো রক্ত বের হওয়ার পর সে যদি নতুন অযু না করে আগের অযু দিয়েই নামায পড়ে তাহলে হানাফী মাযহাবের কারো একথা বলার অধিকার নেই যে, তার নামায হয়নি। কেননা, এখানে বাস্তবতার আলোকে কোনটি সঠিক কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারে না।

পাঁচ: সবচে বড় কথা হলো, আমরা শরীয়তের যাহের তথা বাহ্যিকের পাবন্দ। অভ্যন্তরে কী আছে না আছে সেটা তালাশ করার দায়িত্ব আমাদের দেয়া হয়নি। তাই এ নিয়ে মাথা ঘামানো আল্লাহর কাজে হস্তক্ষেপের শামিল, যা থেকে আমাদের অবশ্য অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে। যদি কারো কাছে শরীয়তের দলীলের আলোকে মনে হয়, সারাবিশ্বে একদিনে রোযা ও ঈদ করা উচিত তাহলে তাদের সে বিষয়ে কথা বলা, দলীল দেয়া ও আলোচনা-পর্যালোচনা করার অধিকার অবশ্যই আছে। কিন্তু তাই বলে এক্ষেত্রে শরীয়তের বাহিরে গিয়ে আভ্যন্তরীন বিষয় নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা আমরা কিছুতেই অনুমোদিত বলতে পারি না। এটাকে আমরা আল্লাহর কাজে বান্দার হস্তক্ষেপের মতো ধৃষ্টতা বলে মনে করি।

ছয়: সবচে জঘণ্য দৃষ্টান্ত হলো, কিয়ামতের বিষয় এখানে টেনে আনা। কারণ, কিয়ামত এমন একটি লুক্কায়িত বিষয়, যে ব্যাপারে আম্বিয়ায়ে কেরামকে পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। বরং এর শুধু কিছু আলামত বা নিদর্শন বলেই ক্ষান্ত করা হয়েছে। শুক্রবারে কিয়ামত শুরু হলেও তা এক মূহুর্তেই শেষ হয়ে যাবে নাকি ধীরে ধীরে সমগ্র জগতকে গ্রাস করবে তা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। তাছাড়া এটা তাকবীনী তথা সৃষ্টি সংক্রান্ত একটি বিষয়, যা শরীয়ত থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই এর সাথে শরীয়তকে জড়িয়ে গোলমাল পাঁকানো বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের কাজ হতে পারে না।

সারাংশ
আমাদের পূর্বের আলোচনা ও পর্যালোচনা থেকে দিবালোকের ন্যায় এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সমগ্র বিশ্বে একইদিনে রোযা ও ঈদ করার প্ল্যান নতুন একটি চিন্তা, যা এ আধুনিককালে সৃষ্টি হয়েছে। পূর্বে এ বিষয়ে যেমন কেউ চিন্তা করেনি, তদ্রুপ এ বিষয়ে কেউ সম্ভাব্য মাসআলাও লেখেনি। বিষয়টি মূলত এতোই গুরুত্বহীন ও অপ্রয়োজনীয় ছিলো যে, কেউ তা নিয়ে মাথাই ঘামায়নি। এক্ষেত্রে ইমাম মালেক রহ.-এর অমর বাণী স্মরণ রাখা দরকার- “আল্লাহর শপথ! পূর্ববর্তী আকাবির ও আসলাফের অনুসরণ ব্যতীরেকে পরবর্তী উম্মত কিছুতেই সফল হবে না।” 
আল্লাহ তাআলা সবাইকে হেদায়াত দান করুন। আমীন ॥

নাভীর নীচের অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা

নাভীর নীচের অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা হলো : পায়ের পাতার উপর ভর করে বসা অবস্থায় নাভী থেকে চার পাঁচ আঙ্গুল পরিমাণ নীচে যে ভাঁজ বা রেখা সৃষ্টি হয় ...