চা ওয়ালা থেকে সরকার প্রধান বনে যাওয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কথা মোটামুটি অনেকেই জানেন। হিন্দুপ্রধান দেশে হিন্দুত্ববাদের সুবিধা নিয়ে বিজেপির ব্যানারে রাতারাতি জিরো থেকে হিরো হওয়ার বিষয়টাকে অনেকেই হিন্দুদের ঐক্যের প্রামাণিকতা হিসেবে তুলে ধরেন। বিষয়টা মোটেও খাপছাড়া নয়। কিন্তু এটা কেবল হিন্দু জাতির বৈশিষ্ট্য বলাটা আমার কাছে যুক্তিগ্রাহ্য নয়। একতা আমাদের মুসলমানদের মধ্যেও আছে। যদিও আমরা পারস্পরিক অন্তর্দাহে প্রজ্বলন্ত।
ধর্মের প্রতি টান পৃথিবীর ইতিহাসে মুসলমানদেরই সবচাইতে বেশি ছিল এবং আজো আছে। এই ধর্মীয় টানকে আন্তরিকতা, মুহাব্বাত, টান বা চেতনা যে শব্দেই উপস্থাপন করুন না কেনো, এই জিনিসটা এমন শক্তিশালী বা কার্যকরী, যার সামনাসামনি করতে পারে এমন বিকল্প মানব সভ্যতার ইতিহাসে তৈরী হয়নি।
অন্যকোন মুহাব্বাত বা আকর্ষণের এমন নযির নাই যার কারণে মানবজাতি নিজের পরিবারকে অস্ত্রের নগ্ন থাবায় তুলে দিয়েও তৃপ্তি ও প্রশান্তি অনুভব করতে পারে। এটা একমাত্র ধর্মীয় চেতনাতেই সম্ভব। এই যদি হয় ধর্মীয় টানের সুপার পাওয়ার তবে এই ধর্মীয় চেতনার মুকাবেলা করার দুঃসাহস না আমেরিকার আছে, না আছে পৃথিবীর মহাশক্তিধর একতার। এই কথা আপাতত মুসলমান মুজাহিদদের ইতিহাস পড়ে পড়ে সাম্রাজ্যবাদীরা আমাদের চেয়ে অনেক ভাল বুঝেছে। যার ফলাফলে ধর্মান্ধতা ও ধর্ম বিরোধী নানা মোড়কে আবদ্ধ করে ধর্মীয় এই চেতনাকে গলা টিপে হত্যা করে যাচ্ছে একেরপর এক।
কারণ ওরা জানে, যদি মানুষের মাঝে ধর্মীয় এই টান অবিকৃত অবস্থায় বহাল থাকে তবে প্রগতিবাদীদের পেটের ভাত জুটাতে হিমশিম খেতে হবে। নিজেদের অবস্থানকে টিকিয়ে রাখতে প্রগতিশীল, প্রগতিবাদী, নারী স্বাধীনতার নামে ধর্মীয় মূল্যবোধের বিদায় ঘন্টা বাজিয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন দেশ থেকে।
উপরোক্ত কথাগুলো বলার কারণ হলো, সম্প্রতি তুরস্কের নির্বাচনে ইসলামের প্রতি উদারমনা ব্যক্তিত্ব হাফেজ রজব তায়্যিব এরদোগানের বিজয়ে সারা মুসলিম বিশ্ব নানান হতাশার মাঝে আনন্দের মুচকি হাসি হাসলো। যদিও আমাদের বাংলাদেশী মিডিয়ার তেমন উল্লেখযোগ্য আপডেটিং কর্মতৎপরতা চোখে পড়ল না। বাধ্য হয়েই আজ বিবিসি বাংলার ওয়েবে নজর দেই আর তাতে চোখ পড়ে এই নিউজে, "শরবত বিক্রেতা থেকে তুরস্কের 'নতুন সুলতান' রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ান"।
হ্যাঁ, ইসলামের অকুতোভয় এই যোদ্ধা নাকি একসময় বাড়তি উপার্জনের জন্য লেবুর শরবত এবং বিভিন্ন খাবার বিক্রি করতেন। আশ্চর্যজনক কথা?
তবে আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন এই নিউজটা। কিন্তু আমি একদমই জানতাম না। এখন আমার কথা হল, একজন শরবত বিক্রেতা কীভাবে বারবার একটা দেশের ক্ষমতাধর কার্যশীল প্রেসিডেন্ট হয়? তুরস্ক তো আর হিন্দুপ্রধান দেশ নয় যে মোদির মতো তাকেও হিন্দুজোটের জোয়ারে ভাসিয়ে পার্লামেন্টে পৌঁছে দেওয়া হবে। তুরস্ক একটি সুপ্রাচীন ঐতিহাসিক মুসলমান দেশ। তাহলে এরকম ইসলামী দেশে শরবত বিক্রেতা কেন বার বার প্রেসিডেন্ট হন?
বুঝা যায়,
ঐক্য আর সম্প্রীতির বন্ধন মুসলমানদের মধ্যে এখনও আছে। মুসলমানদের পারস্পরিক ভালবাসার সুতিকাবন্ধন এখন ছিঁড়ে যায়নি। তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ লোহিত সাগরের পানিতে ভেসে যায়নি এখনও! শুধু ভ্রান্ত ও মিথ্যা অপপ্রচার একটু বেশি হয় আমাদের মাঝে। আজ মুসলমান নিজেদের দোষগুলো প্রচারে ব্যস্ত, প্রমাণে নয়। ঝড়ো হাওয়া আসলে সবাই তৃণলতা হয়ে সাথে উড়ে চলে। কেউ বটবৃক্ষ হয়ে সামনাসামনি করে না।
হে আল্লাহ আপনি আমাদের কদমকে ইসলামের ওপর অবিচল রাখুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন