চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে একশোর বেশি লোক কথিত বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। সোস্যাল নেটওয়ার্ক মাদক বিরোধী অভিযানের আলোচনা সমালোচনায় জ্যাম লেগে যাওয়া অবস্থা। আসলে এই অভিযান নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। মাদকমুক্ত সমাজ ও মাদকমুক্ত দেশ আমাদের সকলেরই কাম্য। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যদি মাদকাসক্ত হয় তবে সেই দেশ খুব নিকটবর্তী কালেই মুখ থুবড়ে পড়বে। সফল রাষ্ট্র পেতে হলে চাই মাদকমুক্ত সমাজ। সরকার এই কলঙ্কময় অধ্যায়কে নিঃশেষ করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন সেজন্য সকলের পক্ষ থেকেই বাহবা পাওয়ার কথা। কিন্তু বাহবা পাওয়ার পরিবর্তে ছি ছি-ই বেশি পাচ্ছেন। কেন?
কথায় আছে, চক চক করলেই যেমন সোনা হয় না, ঠিক আজ মাদক বিরোধী অভিযান মানেই জনকল্যাণকর পদক্ষেপ তা কিন্তু মোটেও না। রাজনীতির জল অনেক ঘোলা। সভ্যতার মোড়কে পেঁচিয়ে অসভ্যতার আমদানি বাঙ্গালী জাতি অনেক আগে থেকেই করে আসছে। ইহুদি এই কূটচাল আজ রাজনীতির অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চোখ কান খোলা রেখে যারা চলাফেরা করেন তারা সহজেই অনুধাবন করছেন যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কী হচ্ছে এই সময়ে। যাক সে কথা। মূল কথায় ফিরি। আজকের রোযা আমার কাছে অন্যতম কষ্টের একটি রোযা ছিল। কারণ গত রাতে ভয়ঙ্করতম একটি অডিও ক্লীপ শুনেছিলাম। আপনারা অনেকেই হয়ত শুনেছেন।
কমিশনার ইকরামুলের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে আমি আগ থেকে অবগত নই। সে মাদক ব্যবসায়ী ছিল কী না তাও জানি না। তার স্ত্রী আর মেয়ের অডিও ক্লীপটা এডিট করা কী না তাও জানি না। সেসব জেনে আমার মতো সাধারণ নাগরিকের তেমন ফায়দা হবে বলে আমি মনেও করি না। এই কথা ভেবে মনকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তারপরও অশান্ত ছিল মন।
বিবিসির নিউজ পোর্টালে দেখলাম, বিচারবহির্ভূত ক্রসফায়ারে একশোর বেশি লোক নিহত হয়েছে। হঠাৎ কেন এই বিচারবহির্ভূত ক্রসফায়ারের প্রয়োজন হলো? মাদকবিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে মাদকমুক্ত দেশ গড়তে দেশের বিচারবিভাগের কী যথেষ্ট সাধ্য নেই। নাকি বিচারবিভাগের ওপর সরকারেরও আস্থা নেই। মাননীয় সরকারের আদেশেই পরিচালিত হচ্ছে এই অভিযান একথা যদি মেনেও নিই তবে কি মাননীয় সরকার র্যাব-পুলিশকে শাস্তিরও অনুমতি প্রদান করেছেন? তাহলে শাস্তি বা মুক্তির বাণী শোনানোর এতগুলো বিচারালয়ের কী প্রয়োজনীয়তা? এই প্রশ্নগুলো আজ সমাজের সর্বসাধারণের। সাধারণ জনতা মাদক বিরোধী অভিযানে যতটুকু না খুশি হচ্ছে, তারচেয়ে কয়েকগুণ বেশী বিচলিত হচ্ছে বিচারবহির্ভূত ক্রসফায়ারে। সরকার কী এ বিষয়গুলো লক্ষ করছেন? নাকি রূহ আফজার স্বাদে ইফতারি নিয়ে ব্যস্ত?
উৎকণ্ঠার এই সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের জন্যে আশ্বস্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া বদলে উল্টো উপহাস করা হচ্ছে। সরকারের সেতু মন্ত্রীর কথায় একরাশ চাপা আর্তনাদ ছাড়া আর কিছু প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। গতকাল তার বক্তৃতা ছিল, "মাদক বিরোধী এই বৃহৎ অভিযানে ছোটখাটো ভুলে দুএক জনের প্রাণ নাশ হতেই পারে।" কী কাণ্ডজ্ঞানহীন বক্তব্য! সেরকম ছোট্ট একটা ভুল যদি তার ক্ষেত্রে হয় তখনও কী তিনি আপন বক্তব্যে অবিচল থাকবেন? যে ভুলে একটা পরিবারের মাথায় আসমান ভেঙ্গে পড়ে, তাকে সাধারণ ভুল বলে অভিহিত করে কোন জ্ঞানে? এরাই আবার দেশের মাথা!
পরিশেষে একটা কথা বলবো, মাদকমুক্ত দেশ আমাদের প্রাণের দাবী। মাদকমুক্ত দেশের জন্যে মাদকবিরোধী অভিযান নিশ্চয় প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তাই বলে মাদক বিরোধী অভিযানের নামে ভিন্ন কিছু কখনোই কাম্য নয়। দোষীরা শাস্তি পাক এটা সবাই চায়। এর জন্যে বিচারালয় আছে। গডফাদারদের বিচারের আওতায় এনে প্রকাশ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দেওয়া হোক। হোক সে শাস্তি ক্রসফায়ারে বা প্রকাশ্যে দিবালোকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে। কিন্তু অবশ্যই তা বিচারের পর। বিচারবহির্ভূত শাস্তি কখনোই ভাল কিছুর ইঙ্গিত বহন করে না।
০২০৬১৮, সিরাজগঞ্জ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন