মসজিদ ভাঙ্গার রাজনীতি বন্ধ করুন। মসজিদ ভাঙ্গা নয়, গড়ার মানসিকতা তৈরী করুন। বেশকিছু দিন আগে হাতিরঝিলে মসজিদ ভাঙ্গার খবরে হৃদয়টা ভেঙ্গেছিল। মিরপুর-১৪ এর জামিউল উলূমে পড়ার সময় মাঝে মাঝে হাতিরঝিলে যেতাম। তখন অবশ্য হাতিরঝিল প্রকল্প সবেমাত্র শুরু হয়েছিল। ঝিলের ওপর বাঁশের তৈরী মসজিদটায় নামায আদায়ের সৌভাগ্য হয়েছিল। এখন হাতিরঝিলে গেলে অন্তর হু হু করে কাঁদবে। আহ! এখানে একটা মসজিদ ছিল।
হাতিরঝিলের মসজিদ কী এতটাই দৃষ্টিকটু ছিলো যে সৌন্দর্য বর্ধনের অযুহাতে ভেঙ্গে ফেলতে হবে? মসজিদকে অবশিষ্ট রেখে হাতিরঝিলকে সৌন্দর্যময় করা কি সম্ভব ছিল না? যদি বাঁশের কারণে সৌন্দর্যহীনতা হয় তবে সেখানে নতুন আঙ্গিকে দৃষ্টিনন্দন ভাসমান মসজিদ গড়া যেত। যার দ্বারা হাতিরঝিল হয়ে উঠত আরো আকর্ষণীয়।
হাতিরঝিলের মসজিদ শহীদের পর হঠাৎ একদিন ফেসবুকের নিউজ ফিডে ভেসে উঠল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত শাইখুল হাদীস মসজিদ ভাঙ্গার খবর। এবার তুচ্ছ এক এনজিও অফিস স্থাপনের বাহানায় কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই মুসলমানদের ইবাদাতগাহ মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা হল। কেন? রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কী এনজিও অফিস স্থাপনের জন্য অন্য কোন জায়গা অবশিষ্ট নেই? মসজিদ ঠিক রেখেও তো এনজিও অফিস করা যেত। তাহলে কেন এই দুঃসাহস দেখাল?
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কালো অধ্যায়ের রেশ কাটতে না কাটতেই সদরঘাটের সুপ্রাচীন বাইতুন নাজাত মসজিদকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নামে ভাঙ্গার জন্যে কর্তৃপক্ষ হানা দিয়েছিল। কিন্তু জাগ্রত জনতা ও ধর্মপ্রাণ মুসলানদের তোপের মুখে সরে আসতে বাধ্য হয়। জনগণের চলাচল ব্যবস্থার সুবিধার্থেই নাকি এই অভিযান ছিল। আরে বেকুব, মসজিদের মধ্যে দিয়ে কারা চলাচল করে? ধর্মভীরু এদেশের মুসলমান তো মসজিদের সম্মানার্থে অযুবিহীন অবস্থায় তাতে প্রবেশ করে না। ভুলক্রমে মসজিদের দেওয়ালে পা লাগলে মনের অজান্তেই সেলামী করে ফেলে। তাদের চলাচলের ক্ষেত্রে মসজিদ কীভাবে অন্তরায় হতে পারে?
সরকারের মসজিদ ভাঙ্গার উৎসবে জড়িত আমার কর্মএলাকার একটি মসজিদও। মসজিদের কিছু অংশ সরকারী জায়গায় পড়েছে। রাস্তা সম্প্রসারণ কাজে অবৈধ উচ্ছেদ অভিযানে মসজিদ ভাঙ্গা নিয়ে বেশ বিতর্ক সৃষ্টি হয়। মজার বিষয় হলো, বিতর্কের এক ফাঁকে সরকারী এক আমলা বললেন, "আপনারা যে সরকারী জায়গায় নামায পড়েন, আপনাদের তো নামাযই হয়নি!" বাহ! কী দারুণ ফতুয়া। সরকারী জায়গায় নামায পড়লে নামায সহী হয় না একথা কোথায় পেয়েছেন তিনি?
ওপরের চারটা দুঃখজনক ঘটনার প্রেক্ষাপটে আমার কাছে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়ে আসে তা হলো, আমাদের দেশের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদেরকে মধ্যে কিছু নষ্ট মানসিকতার উঁইপোকার বিস্তার ঘটেছে। ইসলাম শান-শওকত ও মুসলমানদের খোদাভিরুতা অহর্নিশি যাদের অন্তরে পীড়া দিয়ে যাচ্ছে। এরা ভুলে গেছে মুসলমানের জযবা আরর ঈমানী শক্তির কথা। ২০১৩ এর ৫ মের পর উল্লেখযোগ্য কোন ঈমানী জাগরণ ইসলাম বিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেনি, তাই ওদের আস্ফালন পূনরায় শুরু হচ্ছে। ত্বাগুতের এই দুঃসাহসকে সামনে বাড়ার সুযোগ কোনভাবেই দেয়া যাবে না। আগাছা বিস্তারের আগে যদি পরিষ্কার না করা হয় তবে তা ইসলামের বাগানকে নষ্ট করে দিবে। ইসলামী ব্যক্তিত্বদের এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব জরুরী।
পরিশেষে সরকারের উদ্দেশ্যে বলব, মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ এদেশের নামাযের কাতারে মুসল্লি যত কমই হোক। তারা কিন্তু ইসলামকে ঠিকই ভালবাসে। হয়তো শয়তানের ধোকায় পড়ে ধর্মের পথে চলতে অলসতা করে। তাই বলে আপনি তাদের ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে ছেলে খেলা করবেন তা কিন্তু কখনোই মেনে নিবে না। ধানক্ষেত সংরক্ষিত রাখতে কৃষক যেমন আগাছা নিড়ানি দেয়, ঠিক আপনার শাসন ক্ষমতা ধরে রাখতে হলে আপনিও আমলাদের মাঝে নিড়ানি দিন। যারা মুসলমানদের ঐতিহ্যের সাথে বিরোধপূর্ণ ভাব রাখে তাদের বরখাস্ত করুন। মনে রাখবেন, এদেশ কিন্তু ০.০২% নাস্তিক বা ১২% অমুসলিমদের দেশ নয়। এটা ৮৮% মুসলমানের দেশ।
১৬০৫১৮, সিরাজগঞ্জ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন