একটি লাশ
উত্তাল সারাদেশ। উত্তাল দেশের প্রতিটি মেয়ের পিতামাতার হৃদয়জগত। প্রযুক্তিগত উন্নতির এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমার মেয়েটা কি নিরাপদ?
একটি লাশ।
লক্ষ পরিবারের আদরের দুলালী মেয়ে সন্তানের ব্যাপারে জরুরী সতর্কবার্তা জারী করে। মেয়েটি পড়ে ৯ম শ্রেণীতে। ফেসবুকে মাসখানিক আগে এক ছেলের সাথে পরিচয় হয়। নিয়মিত দেখা করত। গত মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বীচে ডেটিংয়ে বের হয় সদ্য পরিচয়ের প্রেমিকের সাথে আর পরেরদিন সকালে পতেঙ্গা বীচ থেকেই লাশ উদ্ধার করা হয়। কোন পথে সমাজ?
প্রশাসন নিশ্চিত নয় কীভাবে হত্যা হলো মেয়েটা। এখানে মৌলিক পয়েন্ট কী? মেয়েটির হত্যা হওয়া? নাকি হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরী হওয়া? আপনি হয়তো বলবেন একটা কিশোরী ইনোসেন্ট মেয়ের জান চলে গেল এটাই তো মূল পয়েন্ট। কিন্তু আমি বলব, না! শুধু মেয়েটির জান চলে যাওয়া আমার কাছে মূল পয়েন্ট নয়। হত্যা হওয়ার প্রেক্ষাপটও কম গুরুত্বের বিষয় নয়। বিষয়টা ঘোলাটে লাগছে? আসুন আরো খোলাসা হই।
ইসলামী বিধান আর পার্থিব বিধানের মাঝে বড় একটা অন্তর হচ্ছে, আইন ব্যবস্থা বা প্রশাসন শুধু ঘটনার পরবর্তি ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে। পক্ষান্তরে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা ঘটনার পূর্ববর্তী ও পরবর্তি সব বিষয়েই হস্থক্ষেপ করে থাকে। যেমনঃ রোযা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করলে আমরা জানি রোযা ভেঙ্গে যায়। কেউ যদি রামাযানের রোযা রেখে স্ত্রী সহবাস করে তবে তার রোযা ভেঙ্গে যাবে। ভিকটিম যেন এই ভুল দ্বিতীয়বার করার দুঃসাহস না করে এজন্য এই এক রোযার শাস্তি বা ক্ষতিপূরণবাবদ তাকে লাগাতার ৬০ টি রোযার মাধ্যমে কাফফারা আদায় করতে হয়। এই কাফফারা হলো ঘটনার পরবর্তি ব্যবস্থা। ইসলাম যেমন ঘটনার পরবর্তি ব্যবস্থা দিয়েছে তেমনি কোন রোযাদার যেন উপরিউক্ত ঘটনায় জড়িত না হয় সেজন্যে আগে থেকেই রোজাদার ব্যক্তির জন্যে স্ত্রীকে চুম্বন বা শৃঙ্গার করতে বারণ করা হয়েছে। রোযাদারের জন্যে রোযা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস যেমন নিষিদ্ধ তেমনি সহবাস প্রাসঙ্গিক কাজকর্মও নিষিদ্ধ। এটাই হলো ঘটনার পূর্ববর্তী ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার ফলে রোযা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস থেকে বেঁচে থাকা সহজ হবে।
পর্দার বিধানও অশ্লীলতা এড়ানোর জন্যে পূর্ববর্তী ব্যবস্থা। এরকমভাবে ইসলামী প্রতিটা বিধিবিধানে দুটি অবস্থা থাকে। পবিত্র কোরআনের বাচনভঙ্গি দেখে বিষয়টা আরো স্পষ্ট হয়ে যায়। যেমন ইরশাদ হয়েছেঃ
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا ۖ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا
“তোমরা যিনা অর্থাৎ অবৈধ যৌনাচারের নিকটবর্তি হয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ” (সূরা আল ইসরা' ৩২ নং আয়াত)
আরো ইরশাদ হচ্ছে,
وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ
অর্থঃ "তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা নিকটবর্তি হয়ো না।" (সূরা আনআম, আয়াত - ১৫১)
এই আয়াতদ্বয়ে আল্লাহপাক যিনা ও গুনাহের নিকটবর্তি হতে নিষেধ করছেন। এর অর্থ ঘটনার পূর্ববর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।
উপরোক্ত আলোচনা বুঝে আসলে একথা অবুঝ থাকার কথা নয় যে, ইসলাম নির্দেশিত পূর্ববর্তী ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করে থাকলে যেকোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশংকা খুবই কম থাকে। যদি ঘটনা ঘটারই সুযোগ না দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে অঘটন ঘটার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এই হিসেবে চট্টগ্রামের তাসফিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি আলোকপাত করলে দেখা যায়, অবাধ উন্মুক্ত চলাফেরা ও পারিবারিক বন্ধনে শীতলতার বিষয়টা কোনভাবেই এড়ানো যায় না। এই ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে তাসফিয়ার অভিভাবকও মানবতা ও শরয়ী আদালতে সমান দায়বদ্ধ।
৯ম শ্রেণীর একটি ছাত্রী কিভাবে অবাধে ফোন ব্যবহার করে তাও দিন-রাত ফেসবুকে একটিভ। আর বাসা থেকে বিকেলে কিভাবে একা বের হয়? তাও বাসা থেকে ১৫ কিঃমিঃ দূরে নেভালে প্রেমিকের সাথে! এটা যদি পিতা মাতার অজ্ঞাতে হত তাও একটা ছিল ভিন্ন ব্যাপার। কিন্তু না! নবম শ্রেণীর একটা ছাত্রীর অবৈধ সম্পর্ক হয়েছে অভিভাবকের নলেজের ভিতর থেকেই! হাও সেলুকাস!
বিভিন্ন দৈনিকের ভাষ্য, "প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আদনান জানিয়েছে, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তাসফিয়া, আদনান ও তাদের এক বন্ধু সোহেল নগরীর গোলপাহাড় এলাকায় চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্টে বসে। কিছুক্ষণ পর তাসফিয়ার মা সোহেলকে ফোন করে তাসফিয়াকে দ্রুত বাসায় যেতে বলেন। এ সময় তাসফিয়া আদনানের কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে সিএনজি অটোরিকশায় ওঠে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাসফিয়ার মা আবার আদনানকে ফোন করে তাসফিয়া কোথায় জানতে চান। আদনান তার কথামতো তাসফিয়ার বাসায় যায়। রাত ১২টা পর্যন্ত আদনান ও তাসফিয়ার পরিবারের সদস্যরা তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। এরপর বুধবার সকালে তাসফিয়ার লাশ পাওয়া যায়।"
দেখা গেলো তাসফিয়ার পুরো ঘটনাটা ঘটেছে তার মায়ের জানাশোনা থেকেই। তাহলে ঘটনায় দায় অভিভাবক কীভাবে এড়াবেন? বিবাহপূর্বক প্রেম আধুনিক যুগের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। মিডিয়ার কল্যাণে নিরাপদ প্রেম, নিরাপদ যৌনাচারসহ আরো কী কী নিরাপদ ব্যবস্থা প্রচারণা চলছে তার ইয়ত্তা নেই। তাই বলে আপনার ৯ম শ্রেণি মেয়ে প্রেম করে বেড়াবে, প্রেমিকের সাথে ডেটিং করবে আর আপনি অভিভাবক হিসেবে সম্মতি জানাবেন; এটাকে কোনভাবেই অভিভাবকত্ব বলা যায় না। কিছুক্ষণের আনন্দ উপভোগ করে শুধু সন্তান জন্ম দিলেই তাকে "বাবা মা" বলা হয় না। গতানুগতিক এমন সন্তান প্রতিটি জানোয়ারই প্রসব করে থাকে। সন্তানের জন্যে সুশিক্ষা ও সঠিকভাবে লালনপালনই পারে আসল বাবা মাকে মার্ক করে দিতে। এই ঘটনায় তাসফিয়ার অভিভাবকের উপরেও চার্জশিট দাখিল করে তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনা হোক। সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক তার মায়ের ক্ষেত্রেও। তবেই নামধারী এসব অভিভাবক চেতনায় ফিরে আসবে।
সিরাজগঞ্জ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন