১. হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বনী আদমের প্রতিটি আমলের প্রতিদান বহু গুণে বৃদ্ধি হতে থাকে, ১০ গুণ থেকে ৭০০গুণ, এমনকি আল্লাহ চাইলে তার চেয়েও বেশি দেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, তবে রোযার বিষয়টি ভিন্ন। কেননা, রোযা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি স্বয়ং এর প্রতিদান দিব। বান্দা একমাত্র আমার জন্য পানাহার ও প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ থেকে বিরত থাকে। রোযাদারের জন্য দু’টি আনন্দ : এক. ইফতারের মুহূর্তে দুই. রবের সঙ্গে সাক্ষাতের মুহূর্তে। আর রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়েও উত্তম।-সহীহ মুসলিম হাদীস : ১১৫১
২. রোযাদারের জন্য জান্নাতের বিশেষ দরজা। হযরত সাহ্ল ইবনে সাদ থেকে বর্ণিত, জান্নাতে রাইয়ান নামে একটি দরজা আছে। এই দরজা দিয়ে শুধু রোযাদাররা প্রবেশ করবে। ঘোষণা করা হবে, রোযাদাররা কোথায়? তখন তারা উঠে দাঁড়াবে। যখন তাঁরা প্রবেশ করবে তখন ঐ দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং তা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করবে না।-সহীহ বুখারী হাদীস : ১৮৯৬
অন্য রেওয়াতে আছে, জান্নাতে একটি দরজা আছে, যার নাম রাইয়ান। শুধু রোযাদারগণ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। আর যে তাতে প্রবেশ করবে সে কখনো পিপাসার্ত হবে না।-জামে তিরমিযী ৭৬৫; ইবনে মাজাহ : ১৬৪০
৩. রোযা রোযাদারের জন্য সুপারিশ করবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রোযা এবং কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও প্রবৃত্তির চাহিদা মেটানো থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং আমার সুপারিশ কবুল করুন। তখন দু’জনের সুপারিশই গ্রহণ করা হবে।-মুসনাদে আহমদ হাদীস : ৬৫৮৯; তবারানী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/৪১৯
৪. রোযাদারের দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তিন ব্যক্তির দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না : ১. রোযাদারের দুআ ইফতার করা পর্যন- ২. ন্যায়পরায়ণ বাদশাহের দুআ ও ৩. মাজলুমের দুআ। আল্লাহ তাআলা তাদের দুআ মেঘমালার উপরে উঠিয়ে নেন এবং এর জন্য আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। আর আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার ইজ্জতের কসম! বিলম্বে হলেও আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করব।- মুসনাদে আহমদ হাদীস : ৯৭৪৩; জামে তিরমিযী হাদীস : ৩৫৯৮; ইবনে হিব্বান হাদীস : ৩৪২৮; ইবনে মাজাহ হাদীস : ১৭৫২
৫. রোযাদারের জন্য মাগফিরাতের পুরষ্কার। পূর্ণ এক মাস বান্দা রোযা রাখল। প্রতিদিন ঘোষণা হচ্ছিল, ‘কে আছ ক্ষমাপ্রার্থী, আমার কাছে ক্ষমা চাও। আমি ক্ষমা করে দিব।’ মাস শেষ। বান্দা তার মালিকের হুকুম পালন করেছে। এবার তাঁর পক্ষ থেকে আসছে ক্ষমার ঘোষণা। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ছওয়াবের আশায় রমযানের রোযা রাখবে আল্লাহ তাআলা তার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।’-সহীহ বুখারী হাদীস : ১৯০১; জামে তিরমিযী হাদীস : ৬৮৩; ইবনে মাজাহ হাদীস : ১৩২৬
৬. সেহরী ও ইফতার। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সেহরী খাও, সেহরীতে বরকত রয়েছে।-সহীহ বুখারী হাদীস : ১৯২৩; সহীহ মুসলিম হাদীস : ১০৯৫ অন্য হাদীসে আছে, আমাদের রোযা ও আহলে কিতাবীদের রোযার মাঝে পার্থক্য হল সেহরী খাওয়া (আমরা সেহরী খাই তারা খায় না)।-সহীহ মুসলিম হাদীস : ১০৯৬
৭. শেষ ওয়াক্তে সেহরী খাওয়া সুন্নত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উম্মত কল্যাণের মাঝে থাকবে যতদিন তারা সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করবে ও শেষ ওয়াক্তে সেহরী খাবে।-মুসনাদে আহমদ ৫/১৭৪ হাদীস : অন্য হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সেহরী খাওয়া ও আযানের মাঝের সময়ের ব্যবধান ছিল পঞ্চাশ আয়াত তেলাওয়াত পরিমাণ।-সহীহ বুখারী হাদীস : ১৯২১; সহীহ মুসলিম হাদীস : ১০৯৬
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন