মুসলমান যতদিন দিবস পূঁজোয় লিপ্ত থাকবে ততদিন নিজেদের সাফল্য থেকে যোজন মাইল দূরে থাকবে। বরাবরের মতো নির্দিষ্ট দিনেই কেবল স্মরণ করা হয় ৫ই মের কালো রাতকে। অবস্থাদৃষ্টে এখন মনে হয় ৫ই মের নাস্তিক মুরতাদ বিরোধী আন্দোলন ছিলো পরবর্তি প্রজন্মের কাছে কেচ্ছা গাওয়ার রসদস্বরূপ। যে উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে রাজপথে রক্ত ঢেলে শহীদী প্রতিক আঁকিয়েছিল মুসলিম উম্মাহের বীর সেনানীরা, আজ পাঁচ বছর পর সে উদ্দেশ্য পূরণে কতটুকু সফল?
২০১৩ সালে স্মার্টফোনের বিস্তার তখনো এত হয়নি। ফেসবুক অঙ্গনে কওমী বন্ধুদের পদচারণা ততটা শক্ত ছিল না। ব্লগ বলতে কী বোঝাতো তা তখন বেশিরভাগ আলেমই জানতেন না। প্রযুক্তির নাব্যতায় আর বাতিলের অগ্রযাত্রায় তখন যেভাবে আল্লাহ ও রাসূলের দুশমনেরা ইসলাম বিরোধী তৎপরতায় সিদ্ধহস্ত ছিলো। আজো তারা সেই পথেই সেই অবয়বেই সক্রিয়। বরং আরো বেশি পরিপক্ব। এখন আরো সুদূরপ্রসারী হয়ে ইসলামী বিভিন্ন বিধিবিধান ও স্পর্শকাতর অধ্যায় নিয়ে সংশয়ী পরিবেশ গড়ে তুলছে।
বড় দুঃখজনক সত্য বাস্তবতা আর অতিসূক্ষ্ম কলাকৌশলের মধ্যে কিছু বিষয় আমি যা লক্ষ করছি তা হলো- আগে সাধারণ মনের সাদামাটা মানুষগুলো হুজুরদের কাছে গিয়ে বলতেন, ইশার নামায মোট কয় রাকাত? (অর্থাৎ ফরজ সুন্নাত বিতর নফল মিলিয়ে কত রাকাত পড়তে হয়)
আর এখন প্রশ্ন হয়, বিতর নামায কয় রাকাত? (অর্থাৎ এক রাকাত না দুই রাকাত? সহীহ হাদীস চাই)
এই বিষয়টাকে দুঃখজনক বললাম একারণে যে, একজন খেটে খাওয়া দিনমজুর বা জ্যামের পথে পাড়ি দিয়ে ৮ ঘণ্টা কর্মব্যস্ত চাকরীজীবী ভাইয়ের পক্ষে লক্ষ লক্ষ হাদীসের মাঝে সহীহ হাদীস তালাশের নামে অযথা পরিশ্রম দেওয়ার কী মানে আছে? একাজটা আপনি তাদের উপরেই ছেড়ে দেন না কেন, যাদের কৈশোর তারুণ্য যৌবন আর বার্ধক্য কাটে হাদীসের দূর্বলতা আর সবলতা বাছাইয়ের কাজে। যারা মৃত্যুশয্যায় নিথর পড়ে থেকেও ভাবে "এই হাদীসের সিহহাত নিয়ে কেন মতপার্থক্য হলো!
আগে মাহাত্ম্যপূর্ণ দিন বা রজনী আসলে পাশের দোকানের কর্মচারী ছেলেটাকে বলতাম, "শুধু কাজ করলে হবে না। চলো নামায পড়তে যাই। মুচকি হেসে সে বলত, "যান হুজুর! আমি আসতেছি।" আসুক বা না আসুক। প্রতিশ্রুতি তো দিত। দিলে শান্তি লাগত কিছুটা। এখন সেই ছেলেটাকে দাওয়াত দিলে অবজ্ঞার হাসি হেসে বিদয়াত শব্দের চাপে ফেলে মহিমান্বিত রাতকে মটুপাতলু দেখে কাটায়। আহ!
কোন পথে মুসলমানের ভবিষ্যত? কোন হুজুরকে যদি ১ বছরের অভিজ্ঞতায় ভবনের কন্ট্রাকশনের কাজ দেওয়া হয়, আমি নিশ্চিত, ছয় মাসের মাথায় রানা প্লাজার মতো ভবন ধ্বসে হাজারো মানুষের মৃত্যু হবে। কোন মসজিদের মুয়াজ্জিনকে যদি পদ্মাসেতুর প্ল্যান তৈরীর দায়িত্ব সঁপা হয় তাহলে সেতুর ভবিষ্যৎ কী হবে তা সহজেই অনুমেয়। তাহলে ধর্মীয় বিষয়ে কেন আমরা এই বিষয়টা বুঝি না। যারা ধর্মকে বুকের সাথে আগলে রেখে তাবৎ ঝড়ঝাপটার মুকাবিলায় প্রাণ বিলিয়ে দেয় তাদেরকে ডাকি কাঠ মোল্লা করে আর পিতৃপরিচয়হীন গরুর দালালদের অভিহিত করি ইসলামী স্কলার হিসেবে। (আফওয়ান)
ইসলামের কুৎসা রটিয়ে মক্কার কাফিররা যতখানি ক্ষতি করতে পারেনি তার কয়েকগুণ বেশী ক্ষতি করেছে বিকৃতমনা নামধারী মুসলমানরা। একথা আমরা সকলেই জানি। ইসলামের সোনালীযুগের এত বছর পর আজও ঠিক সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। ইসলামের বর্তমান মুনাফিকী দুশমনের মোকাবেলায় ৫ই এপ্রিল ও ৬ই মের মতো ঐতিহাসিক পদক্ষেপ কেন হবে না? দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠছে বহুরূপী একটা গোষ্ঠি। অল্প থাকতেই যদি কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে তারা একসময় নাস্তিকদের থেকে বেশি ভয়ঙ্কর হতে পারে। সামনে থেকে আক্রমণ করলে প্রতিহত করা যায় কিন্তু পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করলে রক্ষা পাওয়া বেশ কঠিন।
৫ই মে কেবল শহীদ ভাইদের স্মরণে দুফোঁটা অশ্রুবিসর্জনের দিন নয়। ৫ই মে কেবল ফেসবুক স্ট্যাটাস দেওয়া দিন নয়। ৫ই মে হলো ইসলামের সকল প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য শত্রুর অপতৎপরতাকে ধূলিসাৎ করে দেওয়া প্রত্যয়। ৫ই মের উদ্দীপনাকে কাজে লাগিয়ে সমস্ত ফেতনাকে দমন করাটাই হল আসল মাকসাদ। তাই আসুন, যার যার অবস্থান থেকে সমস্ত বাতিলের ফেতনাকে দমন করার মধ্য দিয়ে ৫ই মের শহীদ ভাইদের রূহের মাগফিরাত ও দারাজাত বুলন্দির দোয়া করি।
০৫০৫১৮, সিরাজগঞ্জ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন