কিছু আমল রয়েছে যেগুলো যথাযথভাবে করার মাধ্যমে আমরা রমযানকে ফলপ্রসূ করতে পারি।
১. রমযান মাসের সর্বোত্তম আমল যে রোযা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ রোযার ব্যাপারেই আল্লাহ তাআলা বলেছেন স্বয়ং আমি এর প্রতিদান দিব। রোযা ঢাল; এ ঢাল যেন অক্ষুণ্ন থাকে হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রোযা ঢাল স্বরূপ।-সহীহ মুসলিম হাদীস : ১১৫১; ইবনে মাজাহ হাদীস : ১৬৩৯
অন্য হাদীসে আছে, যুদ্ধে ব্যবহৃত ঢালের মতো রোযা জাহান্নাম থেকে ঢাল। রোযা যেহেতু জাহান্নাম থেকে ঢাল সুতরাং তা আমাকে অক্ষুণ্ন রাখতে হবে এবং কী করলে তা ভেঙ্গে যায় তাও জানতে হবে। এক হাদীসে এসেছে, রোযা ঢাল যতক্ষণ না তা বিদীর্ণ করে ফেলা হয়।-মুসনাদে আহমদ হাদীস : ১৬৯০
কীভাবে এই ঢালকে বিদীর্ণ হওয়া থেকে রক্ষা করা যায়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রোযা হচ্ছে ঢাল। যখন তোমাদের কেউ রোযা থাকে সে যেন অশ্লীল কথাবার্তা না বলে এবং মূর্খের ন্যায় কাজ না করে। কেউ যদি তাকে গালি দেয় বা ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয় তাহলে সে যেন বলে, আমি রোযাদার, আমি রোযাদার।-সহীহ বুখারী হাদীস : ১৯০৪; সহীহ মুসলিম হাদীস : ১১৫১
অন্য হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও মন্দ কাজ বর্জন করল না তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।-সহীহ বুখারী হাদীস : ১৯০৩
২. নিয়মিত তারাবীহ পড়া। এ মাসের বিশেষ আমলের মধ্যে তারাবী নামায অন্যতম। এ নামায সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে ছওয়াবের আশায় রমানের রাতে দণ্ডায়মান হয় তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।-সহীহ বুখারী হাদীস : ২০০৯
৩. বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, "রমযান মাস, মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে। যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ এবং হক বাতিলের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী।" -সূরা বাকারা : ১৮৫
হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত জিবরীল আ. রমযানের প্রতি রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসতেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কুরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন।-সহীহ বুখারী হাদীস : ১৯০২
৪. যথাসাধ্য দান করা। দান করার অর্থ অন্যকে দেওয়া নয়, নিজের জন্য আখিরাতের সঞ্চয় করা। সুতরাং দান করি আর হিসাব করি যে, আখেরাতের জন্য কী পরিমাণ সংরক্ষণ করলাম। আর এর জন্য সর্বোত্তম সময় হল রমযান মাস। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ার সকল মানুষ অপেক্ষা অধিক দাতা ছিলেন। রমযানে তাঁর দানের হাত আরো প্রসারিত হত।-সহীহ বুখারী হাদীস : ১৯০২
৫. তাহাজ্জুদের সুযোগকে কাজে লাগান এবং তা অভ্যাসে পরিণত করুন হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘ফরয নামাযের পরে সর্বোত্তম নামায হল রাতের নামায (অর্থাৎ তাহাজ্জুদ)।’-সহীহ মুসলিম হাদীস : ১১৬৩; মুসনাদে আহমদ হাদীস : ৮৫৩৪; জামে তিরমিযী হাদীস : ৪৩৮
রমযান মাসে যেহেতু সেহরীর জন্য ওঠা হয়। তাই একটু আগে উঠে দুই চার রাকাত তাহাজ্জুদ পড়া খুবই সহজ। এজন্য এই বিষয়ে মনোযোগী হওয়া উচিত। পাশাপাশি ফিকির করা উচিত যে, এটাকে যেন আগামীর জন্য অভ্যাসে পরিণত করতে পারি। পরিবারের লোকদেরকেও উঠিয়ে দিই। বেশি বেশি দুআ ও ইস্তেগফার করুন এক হাদীসে এসেছে, ‘রোযাদারের দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।’
অন্য রেওয়ায়েতে আছে, রমযানে রোযাদারকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। বিশেষ করে শেষ রাত দুআ ও ইস্তেগফারের সবচেয়ে উপযোগী সময়। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকি থাকে তখন আল্লাহ তাআলা নিকটবর্তী আসমানে নেমে আসেন এবং ঘোষণা করতে থাকেন, কে আমাকে ডাকছ আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে প্রার্থনা করছ আমি তাকে দান করব। কে আছ ক্ষমাপ্রার্থী আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।-সহীহ বুখারী হাদীস : ১১৪৫; সহীহ মুসলিম হাদীস : ৭৫৮
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন