শনিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৮

আসানসোলের দাঙ্গায় অসাম্প্রদায়িক মুসলিম


সৌম্যের প্রতীক, ইমাম ইমদাদুল্লাহ 
আসানসোলের যে অঞ্চলে মঙ্গলবার সন্ধ্যে থেকে দাঙ্গা শুরু হয়েছিল সেই চাঁদমারি আর কুরেশী মহল্লা পেরিয়ে অনেকটা ভেতরে নূরানী মসজিদ। বৃহস্পতিবার খবর এলো, মসজিদের ইমাম মুহাম্মদ ইমদাদুল্লাহর নিখোঁজ ছেলের লাশ পড়ে আছে স্থানীয় হাসপাতালে। তাঁকে বলা হলো হাসপাতালে গিয়ে লাশ সনাক্ত করতে।

আসানসোলের পরিস্থিতি তখনো দুদিনের হিন্দু-মুসলিম সংঘাতের জের ধরে থমথমে। সবকিছু বন্ধ। চারিদিকে ভেসে বেড়াচ্ছে নানা গুজব।

ইমাম মুহাম্মদ ইমদাদুল্লাহ হাসপাতালে গেলেন। সনাক্ত করলেন নিজের ছেলের ক্ষত-বিক্ষত লাশ। নখ উপড়ে নেয়া হয়েছে। ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের কোপ। লাশটি আধপোড়া, মনে হচ্ছে কেউ পুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।

আগের দুদিন ধরে নিখোঁজ ছেলেকে খুঁজেছেন ইমদাদুল্লাহ। সেই সঙ্গে মহল্লার সব মানুষ। কোথাও পাওয়া যায়নি তাকে।

ক্ষত-বিক্ষত লাশটি যখন মহল্লায় আনা হলো, পরিস্থিতি হয়ে উঠলো আরও অগ্নিগর্ভ।

"ইমাম সাহেবের ছেলের মৃত্যুর ঘটনাটা শুনে প্রথমে সবারই মাথায় রক্ত চড়ে গিয়েছিল" বলছিলেন মহল্লার বাসিন্দা মুহম্মদ ফারহাদ মালিক। "এটা তো রক্ত গরম করে দেওয়ার মতোই ঘটনা।"

পুত্রশোকে কাতর ইমাম ইমদাদুল্লাহ। আসানসোলকে আরও সহিংসতার কবল থেকে বাঁচিয়েছেন তিনি।

ইমাম মুহাম্মদ ইমদাদুল্লাহ বুঝতে পারলেন, এই প্রতিহিংসার রাশ টানতে হবে এখনই। নইলে আরও রক্ত ঝরবে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চলে যাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। প্রাণ যাবে আরও মানুষের।

একটা মাইক হাতে বেরিয়ে পড়লেন তিনি। মহল্লায় মহল্লায় ঘুরে সবার প্রতি আবেদন জানালেন, আপনারা শান্ত হোন।

পুত্র হারানোর কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে গেল ইমামের। তবে তার মধ্যেও বলছিলেন, "এই অবস্থাতেও আমি সবার কাছে আবেদন করতে রাস্তায় বেরিয়েছিলাম - সবাইকে বুঝিয়েছি যে আমার যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা যেন আর কোনও বাপ-মায়ের না হয় - কেউ যেন দাঙ্গা না বাধায় ছেলের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে।"

পুত্রশোকের মধ্যেও এলাকায় ঘুরে ছেলের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অশান্তি না ছড়ানোর জন্য তার এই আবেদনে কাজ হলো। লোকজন ঘরে ফিরে গেল।

আমাদের দেশের তথাকথিত যে সমস্ত অসাম্প্রদায়িক বাঙালি বাবুরা যারা মুসলিম ও ইসলামের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার আওয়াজ দিতে দিতে রক্তবমি করেন তাদের কাছে প্রশ্ন...

আজ আপনাদের কী মন্তব্য?  নিজের তরুণ ছেলের লাশ দাফন করে সম্প্রীতি আর সাম্যের যে ডাক দিয়ে যাচ্ছেন অসহায় পিতা, আপনি সেই মুসলিমকে কীভাবে সাম্প্রদায়িক বলে গালি দেন? এমন অবান্তর কথা বলার সময় আপনাদের বুদ্ধি কি অণ্ডকোষের মাঝে লুকিয়ে থাকে?
যদি কোন হিন্দু পুরোহিতের সন্তান মুসলমানদের হাতে নিহত হত তবে তো মৌলবাদ আর সাম্প্রদায়িকতার ধুঁয়া তুলে কম্পিউটার কীবোর্ড ভেঙ্গে ফেলতেন। আজ কেন আপনাদের মুখে কুলুপ আঁটা? পৃথিবীর ইতিহাসে এক ইমাম ইমদাদুল্লাহ এর আত্মত্যাগের এমন আরেকটি নযির অন্যান্য মতালম্বীদের মাঝে কি দেখাতে পারবেন?

তারপরও যদি বলেন মুসলমানগণ  সাম্প্রদায়িক। ইসলাম সাম্প্রদায়িকতা শিখায়, তবে বুঝবো আপনাদের মাথার মধ্যে শুধু গোমূত্র আর গোবরগঙ্গাই বহে। অন্যকিছু না।

মঙ্গলবার, ২৭ মার্চ, ২০১৮

কোন মুসলমানকে কাফের বলা যাবে?

মুশাররফ করিমকে নাস্তিক বলা যাবে?

এই প্রশ্নের উত্তরের আগে জানতে কিছু কথা আবশ্যক। সর্বপ্রথম জানতে হবে নাস্তিক কাকে বলে। আজকাল তো নাস্তিক শব্দটা খুব পরিচিত একটা ধর্মীয় পরিভাষা। এই শব্দটার বহুল ব্যবহারের মাত্রা অতিরঞ্জনের পর্যায় পৌঁছে গেছে। তিল পরিমাণে ধর্মীয় অপরাধেও নাস্তিক শব্দ প্রয়োগ করা হচ্ছে যা মারাত্মক অন্যায় ও গুনাহের কাজ। আসলে অতিউৎসাহী এক শ্রেণীর বাঙ্গালী আছে যাদের দ্বারা সর্বক্ষেত্রে শুধুই অস্থিরত্ব তৈরী হয়। হাজার হাজার লোকের শান্তিপূর্ণভাবে মিছিলে দু চারজন গিয়ে একটা গাড়িতে আগুন দিবে আর এই সহস্র লোকের শ্রম পন্ড করে দিবে। ধর্মীয় ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনি। তরমুজের গায়ে "আল্লাহু" অংকন করার মাধ্যমে  ইসলাম সত্যিকার ধর্মের প্রমাণ দিয়ে মুক্তমনাদের ট্যাগ করবে আর ইসলামকে হাসির পাত্রে পরিণত করবে। বড় দুঃখ লাগে এসব ভোদর মার্কা ইসলামী সৈনিকদের কাণ্ড দেখে। আসি মূল কথায়।
নাস্তিক কাকে বলে?
নাস্তিকতা বা এথিজম হল স্রষ্টার অস্তিত্বহীনতা। তথা একথার বিশ্বাস করা যে, স্রষ্টা বলতে কিছু নেই। আসমান, জমিন, গ্রহ-তারা সবই এমনিতেই প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে। এগুলোর কোন স্রষ্টা নেই। এক কথায় স্রষ্টার অস্তিত্বহীনতার বিশ্বাসের নাম নাস্তিক্যতা।

নাস্তিকতার অর্থ বুঝলে আমাদের অনেক বিষয় বুঝে আসবে।
নাস্তিক মানেই কাফের। কারণ কাফের হওয়ার জন্য  ইসলামের জরুরি বিষয়ের যে কোন একটি আবশ্যকীয় বিষয় অস্বিকার করলেই হয়। আর সেখানে নাস্তিক সেতো কোন কিছুই মানে না, তাই সে যে কাফের এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এবার আসি মুশাররফ করিম কি মুসলমান? আমি যতদূর জানি সে একজন মুসলমান ঘরের সন্তান। পিতা মাতা ও তার ধর্মীয় বিশ্বাস হিসেবে সে একজন মুসলমান। যদিও সে টিভি মিডিয়ায় নাটকের কাজ করার কারণে গুনাহগার। সে হিসেবে সে একজন গুনাহগার মুসলমান। সম্প্রতি নারীদের পোশাক নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় নিন্দার তোপে পড়েছেন। অতিউৎসাহী কেউ কেউ তাকে নাস্তিক বলে আখ্যায়িত করে ফেসবুকে বিভিন্ন পোষ্ট দিচ্ছেন। তিনি কি আসলেই নাস্তিক হওয়ার মত কিছু বলেছেন? তার বক্তব্য পুরোটা আমি শুনেছি। তাতে তিনি নারীদের পোশাক স্বাধীনতায় বলতে গিয়ে যদিও পর্দার বিধানের বিপরীত কিছু বলে ফেলেছেন কিন্তু একজন মুসলমানকে নাস্তিক বা কাফের বলার জন্যে কি এইটুকু কারণই যথেষ্ট? কখনোই না।

এখানে দুইটি জিনিষ লক্ষণীয়। ১. মুশাররফ করিম পর্দার বিধানকে অস্বীকার করেননি। কথার সত্যতা যাচাইয়ে ভিডিও ক্লিপটি দেখুন। ২. তিনি পর্দার নারীদের পোশাক স্বাধীনতা নিয়ে যাকিছু বলেছেন সে ব্যাপারে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চেয়েছেন।

এবার ফলাফলে আসি। উপরোক্ত তথ্যানুযায়ী মোশাররফ করিমকে কখনোই নাস্তিক বা কাফের বলা যায় না। কারণ তিনি ধর্মের জরুরি কোন বিধানকে অস্বীকার করেননি। আবার এথিজম নাস্তিকতার কোন কারণও বিদ্যমান নেই। আমরা বড়জোর তাকে গুনাহগার মুসলমান বলতে পারি। এখন একজন গুনাহগার মুসলমানকে কাফের বলা যাবে কি?  উত্তর হবে - কোন মুসলমানকে কাফের বলা জায়েজ নয়। বরং যে বলবে তার মারাত্মক গুনাহ হবে। এই কাজটা হারাম। কুরআন ও হাদীসে এ ব্যাপারে কড়া ধমকী এসেছে।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا ضَرَبْتُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَتَبَيَّنُوا وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ أَلْقَىٰ إِلَيْكُمُ السَّلَامَ لَسْتَ مُؤْمِنًا تَبْتَغُونَ عَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فَعِنْدَ اللَّهِ مَغَانِمُ كَثِيرَةٌ ۚ كَذَٰلِكَ كُنْتُمْ مِنْ قَبْلُ فَمَنَّ اللَّهُ عَلَيْكُمْ فَتَبَيَّنُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا [٤:٩٤]
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন আল্লাহর পথে সফর কর,তখন যাচাই করে নিও এবং যে,তোমাদেরকে সালাম করে তাকে বলো না যে, তুমি মুসলমান নও। তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদ অন্বেষণ কর,বস্তুতঃ আল্লাহর কাছে অনেক সম্পদ রয়েছে। তোমরা ও তো এমনি ছিলে ইতিপূর্বে; অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। অতএব, এখন অনুসন্ধান করে নিও। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কাজ কর্মের খবর রাখেন। {সূরা নিসা-৯৪}

হাদীসে রাসূল সাঃ যে ব্যক্তি কাফের না তাকে কাফের বললে, সেই কুফরী তার দিকে প্রত্যাবর্তন করে মর্মে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন-

عن أبي ذر رضي الله عنه أنه سمع النبي صلى الله عليه و سلم يقول ( لا يرمي رجل رجلا بالفسوق ولا يرميه بالكفر إلا ارتدت عليه إن لم يكن صاحبه كذلك

হযরত আবু জর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসুল সাঃ বলেছেন যে, তোমাদের কেউ যদি কাউকে ফাসেক বলে, কিংবা কাফের বলে অথচ লোকটি এমন নয়,তাহলে তা যিনি বলেছেন তার দিকে ফিরে আসবে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৬৯৮}

কত মারাত্মক হুশিয়ারী, তাই কাউকে কাফের, মুশরিক, নাস্তিক বলার ক্ষেত্রে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

কাউকে কাফের বলার ক্ষেত্রে সতঃসিদ্ধ নিয়ম সম্পর্কে  আল্লামা মোল্লা আলী কারী রহঃ শরহে ফিক্বহুল আকবারে বলেন-

ان المسئلة المتعلقة بالكفر اذا كان له تسع وتسعون احتمالا للكفر واحتمال واحد فى نفيه فالاولى للمفتى والقاضى ان يعمل بالاحتمال النافى، لان الخطا فى ابقاء الف كافر اهون من الخطاء فى افناء مسلم واحد، (شرح الفقه الاكبر-199

কুফরী সম্পর্কিত বিষয়ে, যখন কোন বিষয়ে ৯৯ ভাগ সম্ভাবনা থাকে কুফরীর, আর এক ভাগ সম্ভাবনা থাকে, কুফরী না হওয়ার। তাহলে মুফতী ও বিচারকের জন্য উচিত হল কুফরী না হওয়ার উপর আমল করা।

কেননা ভুলের কারণে এক হাজার কাফের বেচে থাকার চেয়ে ভুলে একজন মুসলমান ধ্বংস হওয়া জঘন্য। {শরহু ফিক্বহুল আকবার-১৯৯}

সুতরাং কারো কোন কাজে সন্দেহ হলেই বা সামান্যতম গুনাহের কাজ করলেই তাকে কাফের, মুরতাদ, নাস্তিক ইত্যাদি বলে প্রচার করা জায়েজ নয়। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। মনে রাখা উচিৎ অন্যকে কাফের বা নাস্তিক বললে কিন্তু নিজের কোন লাভ নেই। পক্ষান্তরে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই এসব জিনিস থেকে বেঁচে থাকাই শ্রেয়।

রবিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৮

পোশাক সম্পর্কে ইসলামী মূল্যবোধ


ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ আদর্শ। জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের দিক-নির্দেশনা রয়েছে। পোশাক-পরিচ্ছদের বিষয়েও ইসলামের মৌলিক দিক নির্দেশনা  রয়েছে। এ নিবন্ধে পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা করতে চাই। এ সম্পর্কে সমাজে যেসব ভুলভ্রান্তি ও শিথিলতা লক্ষ করা যায় তার পিছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় এই :

১. অজ্ঞতা ও অবহেলা

এ বিষয়ে শরীয়তের কী কী মূলনীতি ও বিধান রয়েছে সে সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জানাশোনা নেই। উপরন্তু অনেকের এই ধারণাই নেই যে, পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কেও শরীয়তের বিধিবিধান থাকতে পারে। একে তারা পুরোপুরিই ইচ্ছা-স্বাধীনতার বিষয় মনে করে। এই ধারণা ঠিক নয়। শরীয়ত এ বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। কুরআন কারীম এবং হাদীস শরীফে এ সম্পর্কিত উসূল ও আহকাম তথা নীতি ও বিধান রয়েছে। একই সঙ্গে মানুষের রুচি ও স্বভাবের প্রতিও একটা পর্যায় পর্যন্ত শরীয়ত অনুমোদন দিয়েছে।  সুতরাং এ বিষয়ে একেবারে উদাসীন থাকা, মনমতো চলা ভুল।

২. বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ ও ফ্যাশন-আসক্তি

পোশাক-আশাক ও সাজসজ্জার বিষয়ে সমাজে বিজাতীয় সংস্কৃতি ও ফ্যাশনের বড় প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। যখন যে ফ্যাশন বের হচ্ছে তখন নির্বিচারে অনুকরণকেই‘আধুনিকতা’ মনে করা হচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে অমুসলিম বা ফাসেক লোকদের রীতি-নীতিই অধিক অনুকরণীয় হতে দেখা যায়। এসবই ভুল। বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ শরীয়তের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ঘৃণিত। হাদীস শরীফে এসেছে-‘যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখে সে তাদের দলভুক্ত।’ (সুনানে আবু দাউদ ২/৫৫৯)

‘মন ভালো হওয়াই যথেষ্ট’

যারা পোশাক ও সাজসজ্জার বিষয়ে মনমতো চলতে চায় কিংবা বিজাতীয়দের অনুকরণ করতে পছন্দ করে তারা তাদের দুর্বলতা ঢাকতে গিয়ে বলে থাকেন, ‘মন ভালো হওয়াই যথেষ্ট। বাইরের লেবাস-পোশাকে কী আসে যায়?’ এভাবে তারা ইসলামের শিক্ষাকে খাটো করতে চায়। অনেক সময় দেখা যায়, ইসলামী পোশাকধারী কোনো ব্যক্তির কোনো ভুল হয়ে গেলে তখন তারা এই সব কথা বড় গলায় বলতে থাকে। এসব ভুল।

ভিতর ও বাহির দু’টোর প্রতিই ইসলামে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কুরআন মজীদে এসেছে, ‘তোমরা প্রকাশ্য গুনাহ ছাড় এবং আভ্যন্তরীণ গুনাহ ছাড়।’ (সূরা আনআম : ১২০)

কারো মধ্যে যদি কোনো দোষ থাকে তাহলে অবশ্যই তা দোষ, কিন্তু একে ছুতো বানিয়ে তার গুণটাকে অস্বীকার করা তো ভালো নয়।

মোটকথা, ইসলামে লেবাস-পোশাকের গুরুত্ব কম নয়। পোশাক-পরিচ্ছদ যদিও বাহ্যিক বিষয়, মানুষের সকল ভালো-মন্দের দলীল এটা নয়, কিন্তু একথাও তো অনস্বীকার্য যে, লেবাস-পোশাকেরও একটি বড় প্রভাব মানুষের স্বভাব ও আচরণের উপর পড়ে থাকে। এটা কি অস্বীকার করা যাবে যে, কিছু পোশাক অন্তরে অহংকার ও আত্মগরিমা সৃষ্টি করে, অন্যদিকে কিছু পোশাক বিনয় ও নম্রতা জাগ্রত করে? কিছু পোশাক ভালো কাজে ও ভালো ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে, অন্যদিকে কিছু পোশাক মন্দ ও অকল্যাণের দিকে আকর্ষণ করে?

দ্বীনদার শ্রেণীর পোশাককে ‘সম্প্রদায়িক’ পোশাক মনে করা

অনেকে ইসলামী পোশাককে সৌদী, পাকিস্তানী বা হুজুরদের ইউনিফর্ম মনে করে থাকে। ফলে নামায-রোযা ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগী করলেও তারা এই পোশাক গ্রহণ করতে পারেন না। তাদের এ ধারণা ভুল। সামান্য চিন্তা করলেই দেখা যাবে যে, ইসলামসম্মত পোশাক মানে কোনো সাম্প্রদায়িক বা আঞ্চলিক পোশাক নয়। হ্যাঁ, তা মুসলমানের পোশাক বটে।

পোশাক সম্পর্কে ইসলামী নীতিমালা

এই জ্ঞানের অভাবে অনেকে সঠিক পোশাক অবলম্বন করতে পারেন না। এ প্রসঙ্গে কিছু নীতি ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা নারী-পুরুষ সকলের জন্য প্রযোজ্য। আবার কিছু স্বতন্ত্র বিষয়ও রয়েছে। প্রথমে সাধারণ কিছু নীতি উল্লেখ করছি।

১. সতর আবৃত করা

পোশাক এমন হতে হবে যা পুরোপুরি সতর আবৃত করে। পুরুষের জন্য নাভি থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত আর নারীর পুরো শরীর সতর। পোশাকের প্রধান উদ্দেশ্যই হল সতর ঢাকা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বনী আদম! আমি তোমাদের জন্য অবতীর্ণ করেছি পোশাক, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং সৌন্দর্য দান করে।’ (সূরা আ’রাফ ২৬)

সুতরাং যে পোশাক এই উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ তা যেন শরীয়তের দৃষ্টিতে পোশাকই নয়। তা নাজায়েয পোশাক। এটা পরিত্যাগ করে পূর্ণরূপে সতর আবৃত করে এমন পোশাক গ্রহণ করা জরুরি। যেমন পুরুষের জন্য হাফ প্যান্ট পরা। মহিলাদের পেট-পিঠ উন্মুক্ত থাকে এমন পোশাক পরিধান করা।

২. অধিক পাতলা বা আঁটশাট না হওয়া

যে পোশাক পরিধানের পরও সতর দেখা যায় কিংবা সতরের আকৃতি পোশাকের উপরে ফুটে উঠে তা-ও সতর আবৃত না করার কারণে নাজায়েয পোশাকের     অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের পোশাক পরিধান করা  হারাম।

৩. বিধর্মীদের পোশাক না হওয়া

বিধর্মীদের অনুকরণে পোশাক পরিধান করা নাজায়েয। যেমন ইহুদী-খৃষ্টান পুরোহিতদের পোশাক। হিন্দুদের ধুতি-লেংটি, মাজার পূজারীদের লালশালু এবং শিয়াদের অনুকরণে পূর্ণ কালো পোশাক ইত্যাদি। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই এটি কাফেরদের পোশাক। তোমরা তা পরিধান করো না।’ (সহীহ মুসলিম ৬/১৪৪; মুসতাদরাকে হাকেম ৪/১৯০)

অন্য এক হাদীসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি তাদের পোশাক পরবে সে আমার দলভুক্ত নয়। (তবারানী আওসাত ৩৯২১; ফাতহুল বারী ১০/২৮৪)

৪. অহংকার-বড়ত্ব-রিয়া সৃষ্টিকারী পোশাক না হওয়া

এমন পোশাক পরিধান করা নিষিদ্ধ,  যেগুলোকে শরীয়ত অহংকারীদের নিদর্শন সাব্যস্ত করেছে এবং তা পরিধান করতে নিষেধ করেছে। যেমন পুরুষের জন্য রেশমী কাপড় ব্যবহার করা। হযরত আবু মুসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-আমার উম্মতের পুরুষের জন্য রেশম এবং স্বর্ণ হারাম করা হয়েছে। আর মহিলাদের জন্য এগুলো হালাল করা হয়েছে। (জামে তিরমিযী ১/৩০২ হাদীস ২৭৯) তদ্রূপ টাখনু গিরার নিচে কাপড় পরিধান করা।

হযরত আবু জুরাই থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, টাখনু গিরার নিচে কাপড় পরিধান থেকে বিরত থাক। কেননা এটা অহংকারবশত হয়ে থাকে। আর আল্লাহ তাআলা অহংকারীকে ভালবাসেন না। (সুনানে আবু দাউদ ২/৫৬৪ হাদীস ২৭৫; মুসনাদে আহমদ ৫/৬৩ হাদীস ২৪১৯)

৬. প্রসিদ্ধির পোশাক না হওয়া

মানুষের মধ্যে প্রসিদ্ধি পাওয়ার লক্ষ্যে পোশাক নির্বাচন করা, পোশাকের ভিন্নতা ও চাকচিক্য এজন্য বেছে নেওয়া যেন লোকসমাজে সে প্রসিদ্ধি পায়। এককথায় মানুষের নিকট আলোচিত ও প্রসিদ্ধ হওয়ার নিয়তে পোশাক গ্রহণ করা জায়েয নয়। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে কঠিন ধমকি এসেছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধির পোশাক পরবে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন। অতঃপর তাকে অগ্নিদগ্ধ করা হবে। (সুনানে আবু দাউদ ৪০২৯; আততারগীব ৩/১১২)

পুরুষের পোশাকের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য

ক) নারীর পোশাক বা নারীর পোশকের মতো পোশাক না হওয়া।

হাদীস শরীফে এসেছে-রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন ঐ পুরুষকে যে মহিলার পোশাক পরে এবং ঐ মহিলাকে যে পুরুষের পোশাক পরে। (সুনানে আবু দাউদ ৪০৯৮; মুসনাদে আহমদ ২/৩২৫)

সুতরাং পুরুষের জন্য মেয়েদের পোশাক পরিধান করা হারাম।

খ) রেশমের কাপড় পরিধান না করা। কেননা রেশমের কাপড় পুরুষের জন্য হারাম।

গ) জাফরানী রংয়ের কাপড় না হওয়া। এটা পুরুষের জন্য নাজায়েয।

ঘ) কুসুম রং কিংবা গাঢ় লাল রং না হওয়া। কেননা কুসুম রং মাকরূহ তাহরীমী। আর লাল রং মাকরূহ।

নারীর পোশাকের কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য

ক) পুরুষের পোশাক বা পুরুষের সদৃশ পোশাক না হওয়া। হাদীস শরীফে এসেছে,‘তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না। একজন ঐ মহিলা, যে পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে।’

নারীর জন্য পুরুষের মতো পোশাক পরিধান করা হারাম। কিন্তু আজকাল এটি ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হচ্ছে। মেয়েরাও প্যান্ট-শার্ট পরছে!

খ) পুরো শরীর ঢাকা পোশাক হওয়া।

মহিলাদের পোশাক এমন হওয়া চাই যাতে গোটা দেহ আবৃত থাকে। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততই এমন এমন স্টাইলের পোশাক বের হচ্ছে যাতে শরীরের বিভিন্ন অংশ খোলা থাকে। অর্থাৎ সতর আবৃত করার পরিবর্তে তা আরো প্রকাশিত করে তোলাই যেন পোশাকের উদ্দেশ্য। যেমন শাড়ি, নারীর জন্য ওড়না ছাড়া দুই পোশাক প্যান্ট-শার্ট বা প্যান্ট-গেঞ্জি। এগুলো ফ্যাশনের নামে নোংরামি। এ ধরনের ফ্যাশনে গা ভাসিয়ে দেওয়া স্বকীয়তা ও আত্মমর্যাদা বোধ না থাকারই দলীল। অনেক বিধর্মীও এমন রয়েছে যারা শালীন পোশাক পরিধান করে। ফ্যাশনের নামে যেসব কুরুচিপূর্ণ পোশাক তৈরি করা হয় তা তারা পরিহার করে চলে। অথচ আমাদের ধর্মে এত সুন্দর দিক-নির্দেশনা থাকার পরও ওইসব অশালীন ফ্যাশনের অনুগামী হয়ে যাওয়া কি দুঃখজনক নয়?

পুরুষের জন্য প্যান্ট-শার্ট

প্রথমে এটি ইংরেজদের পোশাক থাকলেও এখন তাদের বিশেষ পোশাক থাকেনি। তাই  বিজাতীয় অনুকরণের উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি এই পোশাক পরবে তার জন্য নাজায়েয হবে। কিন্তু যদি তাদের অনুকরণের নিয়ত না থাকে তবে তার ক্ষেত্রে এই পোশাক পরলে বিজাতীয় পোশাক পরার গুনাহ হবে না বটে, কিন্তু এরপরও কিছু কারণে এটি অবৈধ পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। যেমন-১. টাখনু গিরার নিচে হওয়া। ২. স্কিন টাইট অর্থাৎ এত আঁটশাট হওয়া যে, সতরের আকৃতি কাপড়ের উপর ফুটে উঠে। হ্যাঁ, প্যান্ট-শার্ট যদি উপরোক্ত খারাবী থেকে মুক্ত হয় এবং বিজাতীয় অনুকরণের উদ্দেশ্য না থাকে তাহলে তা পরিধান করা নাজায়েয হবে না। অবশ্য এরপরও তা পরিধান করা মাকরূহ এবং তা ব্যবহার নাক করাই বাঞ্ছনীয়।-দরসে তিরমিযী ৫/৩৩২; ইসলাহী খুতবাত ৫/২৭৮, ফাতাওয়া নিযামিয়া ১/৪২৩; কেফায়াতুল মুফতী ৯/১৬৮; আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৬৪

টাই

টাই যদিও আজকাল মিশ্র পোশাকের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে, কিন্তু এর সূচনা ইহুদীদের শূলের প্রতীক হিসাবে হয়েছে বলে বেশ জনশ্রুতি আছে। যেহেতু এ বিষয়টি তথ্যপ্রমাণপুষ্ট নয় আর মিশ্র পোশাক হিসাবেও এর প্রচলন হয়ে পড়েছে তাই মুফতীগণ বলেন, এটা পরা একেবারে নাজায়েয তো হবে না; বরং মাকরূহ হবে। তাই এর ব্যবহার এড়িয়ে চলা কর্তব্য। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১২/৪০৮)

মহিলাদের জন্য শাড়ি

শাড়ি একসময় হিন্দু নারীর পোশাক ছিল, কিন্তু এখন আর তাদের বিশেষ পোশাক থাকেনি। এখন এটা মিশ্র পোশাকের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। সুতরাং শাড়ি পরলে এবং অনুকরণের নিয়ত না করলে বিধর্মীদের সাদৃশ্যের গুনাহ হবে না বটে কিন্তু যেহেতু শাড়ি পরিধান করলে সাধারণত শরীরের বিভিন্ন জায়গা খোলা থাকে যেমন-পেট, পিঠ, বুক হাতের বাহু ইত্যাদি, তাই এভাবে শাড়ি পরিধান করা বৈধ হবে না। হ্যাঁ, কেউ যদি ব্লাউজ এমনভাবে বানায় যদ্দারা উপরোক্ত অংশগুলোও পুরোপুরি ঢেকে যায় এবং শাড়ির উপর থেকে পেট-পিঠ ও বুকের আকৃতি ফুটে না উঠে তাহলে তা পরিধান করা নাজায়েয নয়। (কেফায়াতুল মুফতী ৯/১৭০; আপকে মাসায়িল আওর উনকা হল্ ৭/১৬৩)

শর্টকামিজ, ধুতি থ্রি-পিস

এগুলো অপসংস্কৃতি ও বিজাতীয় অনুকরণের অন্যতম দৃষ্টান্ত। শরীয়ত মেয়েদের সৌন্দর্য যথাসম্ভব ঢেকে থাকে এমন পোশাকে উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু বিজাতীয় নীতি এর উল্টো। তারা চায় এমন পোশাক, যার দ্বারা নারীর সৌন্দর্য আরো প্রকাশ পায়। তাই কামিজ থেকে শর্টকামিজ এবং যতই দিন যাচ্ছে তা আরো ছোট হচ্ছে এবং আঁটশাট হচ্ছে। হাদীস শরীফে এসেছে-দুই শ্রেণীর লোক জাহান্নামী। ১. ঐ সকল নারী, যারা কাপড় পরিধান করা সত্ত্বেও বিবস্ত্র থাকে ... তারা জান্নাতে যেতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।-সহীহ মুসলিম হাদীস ২১২৮

কিছুদিন আগে মেয়েদের ধুতি থ্রি-পিস বের হয়েছে। ছেলেদের জন্য বের হয়েছে ধুতি পাঞ্জাবি সেট। নিচের অংশ একেবারে ধুতির লেংটির আদলে সেলাই করা। হঠাৎ দেখলে হিন্দু বলে ভ্রম হতে পারে, আসলে তারা হিন্দু নয়, আমাদেরই মুসলিম ভাই-বোন!

এই অবস্থাটা কতখানি দৈন্যের প্রমাণ বহন করে? এই অবস্থার পরিবর্তন কীভাবে হতে পারে তা আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখা উচিত।

শুক্রবার, ২৩ মার্চ, ২০১৮

আমরাই মধ্যপন্থী!

আমাদের চরমপন্থী বানানোর জন্য কত কিছুই না করা হল, কিন্তু আমরা মধ্যপন্থীই আছি, মধ্যপন্থীই থাকব। কারণ, আমরা ঐ জাতি, যাদেরকে ‘উম্মাতুন ওয়াসাতুন’-মধ্যপন্থী জাতি বলা হয়েছে। এ জাতির আকীদা-বিশ্বাস, আমল-ইবাদত, চিন্তা-চেতনা,সংস্কৃতি ও রাজনীতি সবকিছুতেই মধ্যপন্থা সদা বিরাজমান। না তারা মুশরিকদের মত বাহ্যপূজারী, না বৈরাগ্যবাদীদের মত দুনিয়া-বিমুখ। না ইহুদীদের মত নবীগণের অসম্মানকারী, না খ্রিস্টানদের মত নবীকে আল্লাহর পুত্র সাব্যস্তকারী।

না তারা যুদ্ধ-বিগ্রহকে মনে করে সকল বিবাদের একমাত্র সমাধান, না তীর-বন্দুককে অস্পৃশ্য মনে করে। না তারা দুনিয়াকে দ্বীনের উপর প্রাধান্য দেয়, না দ্বীনের কারণে দুনিয়া সম্পূর্ণ বর্জন করে। তাদের তো ভারসাম্য ও মধ্যপন্থার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। আর প্রতি যুগে এ শিক্ষাকে তারা নিজেদের কর্মপন্থা হিসেবে গ্রহণ করেছে।

মুসলিমদের উন্নতি-অগ্রগতি, সমৃদ্ধি ও বিজয়ের যুগ তো দূরের কথা, যে যুগকে তাদের অধঃপতন, অবক্ষয়, পরাজয়, ইসলামী আদর্শ ও দ্বীনী ইলম থেকে দূরে সরে যাওয়ার যুগ বলা হয়; সে যুগেও আপনি ঐ যুলুম দেখতে পাবেন না, যা পশ্চিমাদের পরিচয়-চিহ্ন; না লাশের সারি, না মাথার খুলির স্তুপ, না ইবাদতখানা ও পবিত্র কিতাবসমূহের অসম্মান, না নবীগণের অবমাননা। আর না ধর্ম-পরিবর্তনের জন্য জোর-যুলম।  অথচ মুসলিমদের চরমপন্থার দিকে ধাবিত করার জন্য উপরোক্ত সব কিছুই তাদের সাথে করা হয়েছে।

একটি বিড়ালের উপর যদি তার চেয়ে দশগুণ বেশি শক্তিধর কুকুর আক্রমণ করে, তো প্রাণরক্ষার জন্য ঐ দুর্বল বিড়ালও কঠিন মূর্তি ধারণ করে, নিজেকে রক্ষার জন্য যা করা প্রয়োজন করে। একে তো তার চরমপন্থা ও উগ্রপন্থা বলা যায় না। চরপন্থী তো সে যে দুর্বলের প্রতি যুলুম করে, অন্যায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে তাদেরকে ক্ষেপিয়ে তোলে, তাদের সন্তানদের উঠিয়ে নিয়ে যায়, তাদের নারীদের ইজ্জত-আব্রু ভূলুণ্ঠিত করে এবং নিজ ভূমিতে তাদেরকে উদ্বাস্তু বানিয়ে ফেলে।

যদি বিড়ালের মত দুর্বল এক প্রাণীরও নিজেকে ও নিজ সন্তানদের রক্ষা করার অধিকার থাকে তাহলে মুসলিমদের কেন থাকবে না আত্মরক্ষার অধিকার? আর একেই কেন আখ্যা দেওয়া হবে চরমপন্থা ও উগ্রপন্থা বলে?

চরমপন্থী তো তারা, যারা মুসলমানদের সমুদ্রপথ অন্যায়ভাবে দখল করে রেখেছে। যারা মুসলিম ভূখ-গুলোর খনিজ সম্পদ লুট করছে।

চরমপন্থী তো তারা, যারা বিভিন্ন ক্যাম্পে আটকেপড়া ফিলিস্তিনীদের মৃত ও হারাম প্রাণীর গোস্ত ভক্ষণ করতে বাধ্য করেছে। যারা ফিলিস্তিনীদের ভিটেমাটি হারা করেছে। জেলে বন্দী করে নির্যাতনের স্টীম রোলার চালিয়েছে।

চরমপন্থী তো তাদেরকে বলতে হবে, যাদের অন্যায় অর্থনৈতিক অবরোধের কারণে ১৫ লাখ ইরাকী শিশু ক্ষুধা ও চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরেছে। যাদের জ্বালানো আগুনে আজও জ্বলছে বসরা ও কূফা, কারবালা ও বাগদাদ।

যারা রাসায়নিক অস্ত্রের মিথ্যা অজুহাতে ইরাকের যমীনে হাজার হাজার টন বোমা বর্ষণ করেছে; তামা তামা করে দিয়েছে ইরাকের সবুজ ভূমি।

যারা ইরাকী জনগণকে সাদ্দামের গোলামী থেকে মুক্তি দিতে এবং ইরাকবাসীকে গণতন্ত্রের ‘নিআমতে’ সৌভাগ্যশালী করতে এক নাটকের অবতারণা করেছে। যা ছিল নিআমতের নামে আযাব এবং মুক্তির নামে গোলামীর পরওয়ানা।

সন্ত্রাসী তো তারা, যারা একজন ব্যক্তিকে বাহানা বানিয়ে গোটা আফগানিস্তানকে তছনছ করে দিয়েছে এবং আফগানিস্তান কবজা করার পর আফগানীদের সাথে ভেড়া-বকরীর চেয়েও নিকৃষ্ট আচরণ করেছে। পৈশাচিক নির্যাতন করেছে। তাদেরকে কন্টেইনারে ভরে তপ্ত মরুভূমিতে ছেড়ে দিয়েছে; যেখানের ভূমি উত্তপ্ত তাওয়ার চেয়েও গরম, সূর্য যেখানে আগুনের বৃষ্টি ঝড়ায়। উত্তপ্ত কন্টেইনারে বন্দী বনী আদম তাপ-যন্ত্রণায় গগণবিদারী চিৎকার করেছে, পানির পিপাসায় ছটফট করেছে। তড়পাতে তড়পাতে মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে; কিন্তু মাযলুমের আর্তনাদে সন্ত্রাসী-হৃদয় একটুকুও গলেনি।

চরমপন্থী তো তারা, যারা মুসলিম দেশগুলোকে কুকুরের সাথে উপমা দিয়েছে এবং তাদের পবিত্র ধর্ম-গ্রন্থের অবমাননা করেছে। আর এ তাদের জাতীয় ‘ঐতিহ্য’। কারণ, এ ধরনের অবমাননাকর ও উস্কানিমূলক কর্মকা- এ-ই  প্রথম নয়। বরং অনেকবার তারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে এবং ঘটিয়ে চলেছে। এমনকি মুসলিম মুজাহিদদের ক্ষেপিয়ে তোলার জন্য যাঁকে তারা পৃথিবীর সকল মানুষ থেকে, বরং নিজেদের প্রাণ থেকেও বেশি ভালোবাসে- তাঁকেও গালি দিয়েছে। কখনো সালাহুদ্দীন আইয়ূবীর মত মহান বীর মুজাহিদকে গালি দিয়েছে।

কখনো ইহুদী সৈন্য মুসহাফের উপর পা রেখে -নাউযু বিল্লাহ- মাযলুম মুসলিম বন্দীদের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করেছে আর বলেছে-ডাক তোদের রবকে, পারলে রক্ষা করুক তোদের!

ইহুদী-খ্রিস্টানরা নানা উপায়ে আমাদেরকে চরমপন্থার দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মুসলিমরা সে পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। না আমরা ইহুদী-খ্রিস্টানদের শিশুদের ক্ষুৎ পিপাসায় আক্রান্ত করেছি; না তাদের যুবকদের মৃত প্রাণী ভক্ষণে বাধ্য করেছি। না তাদের সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের গালি দিয়েছি; আর না তাদের ধর্ম-গ্রন্থের অবমাননা করেছি।

কারণ, সর্বাবস্থায় আমাদের মধ্যপন্থা অবলম্বন করেই চলার তাকীদ করা হয়েছে।

ইনশাআল্লাহ, আমরা আমরণ মধ্যপন্থা অবলম্বন করেই চলব।

নাভীর নীচের অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা

নাভীর নীচের অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা হলো : পায়ের পাতার উপর ভর করে বসা অবস্থায় নাভী থেকে চার পাঁচ আঙ্গুল পরিমাণ নীচে যে ভাঁজ বা রেখা সৃষ্টি হয় ...