মুশাররফ করিমকে নাস্তিক বলা যাবে?
এই প্রশ্নের উত্তরের আগে জানতে কিছু কথা আবশ্যক। সর্বপ্রথম জানতে হবে নাস্তিক কাকে বলে। আজকাল তো নাস্তিক শব্দটা খুব পরিচিত একটা ধর্মীয় পরিভাষা। এই শব্দটার বহুল ব্যবহারের মাত্রা অতিরঞ্জনের পর্যায় পৌঁছে গেছে। তিল পরিমাণে ধর্মীয় অপরাধেও নাস্তিক শব্দ প্রয়োগ করা হচ্ছে যা মারাত্মক অন্যায় ও গুনাহের কাজ। আসলে অতিউৎসাহী এক শ্রেণীর বাঙ্গালী আছে যাদের দ্বারা সর্বক্ষেত্রে শুধুই অস্থিরত্ব তৈরী হয়। হাজার হাজার লোকের শান্তিপূর্ণভাবে মিছিলে দু চারজন গিয়ে একটা গাড়িতে আগুন দিবে আর এই সহস্র লোকের শ্রম পন্ড করে দিবে। ধর্মীয় ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনি। তরমুজের গায়ে "আল্লাহু" অংকন করার মাধ্যমে ইসলাম সত্যিকার ধর্মের প্রমাণ দিয়ে মুক্তমনাদের ট্যাগ করবে আর ইসলামকে হাসির পাত্রে পরিণত করবে। বড় দুঃখ লাগে এসব ভোদর মার্কা ইসলামী সৈনিকদের কাণ্ড দেখে। আসি মূল কথায়।
নাস্তিক কাকে বলে?
নাস্তিকতা বা এথিজম হল স্রষ্টার অস্তিত্বহীনতা। তথা একথার বিশ্বাস করা যে, স্রষ্টা বলতে কিছু নেই। আসমান, জমিন, গ্রহ-তারা সবই এমনিতেই প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে। এগুলোর কোন স্রষ্টা নেই। এক কথায় স্রষ্টার অস্তিত্বহীনতার বিশ্বাসের নাম নাস্তিক্যতা।
নাস্তিকতার অর্থ বুঝলে আমাদের অনেক বিষয় বুঝে আসবে।
নাস্তিক মানেই কাফের। কারণ কাফের হওয়ার জন্য ইসলামের জরুরি বিষয়ের যে কোন একটি আবশ্যকীয় বিষয় অস্বিকার করলেই হয়। আর সেখানে নাস্তিক সেতো কোন কিছুই মানে না, তাই সে যে কাফের এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এবার আসি মুশাররফ করিম কি মুসলমান? আমি যতদূর জানি সে একজন মুসলমান ঘরের সন্তান। পিতা মাতা ও তার ধর্মীয় বিশ্বাস হিসেবে সে একজন মুসলমান। যদিও সে টিভি মিডিয়ায় নাটকের কাজ করার কারণে গুনাহগার। সে হিসেবে সে একজন গুনাহগার মুসলমান। সম্প্রতি নারীদের পোশাক নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় নিন্দার তোপে পড়েছেন। অতিউৎসাহী কেউ কেউ তাকে নাস্তিক বলে আখ্যায়িত করে ফেসবুকে বিভিন্ন পোষ্ট দিচ্ছেন। তিনি কি আসলেই নাস্তিক হওয়ার মত কিছু বলেছেন? তার বক্তব্য পুরোটা আমি শুনেছি। তাতে তিনি নারীদের পোশাক স্বাধীনতায় বলতে গিয়ে যদিও পর্দার বিধানের বিপরীত কিছু বলে ফেলেছেন কিন্তু একজন মুসলমানকে নাস্তিক বা কাফের বলার জন্যে কি এইটুকু কারণই যথেষ্ট? কখনোই না।
এখানে দুইটি জিনিষ লক্ষণীয়। ১. মুশাররফ করিম পর্দার বিধানকে অস্বীকার করেননি। কথার সত্যতা যাচাইয়ে ভিডিও ক্লিপটি দেখুন। ২. তিনি পর্দার নারীদের পোশাক স্বাধীনতা নিয়ে যাকিছু বলেছেন সে ব্যাপারে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চেয়েছেন।
এবার ফলাফলে আসি। উপরোক্ত তথ্যানুযায়ী মোশাররফ করিমকে কখনোই নাস্তিক বা কাফের বলা যায় না। কারণ তিনি ধর্মের জরুরি কোন বিধানকে অস্বীকার করেননি। আবার এথিজম নাস্তিকতার কোন কারণও বিদ্যমান নেই। আমরা বড়জোর তাকে গুনাহগার মুসলমান বলতে পারি। এখন একজন গুনাহগার মুসলমানকে কাফের বলা যাবে কি? উত্তর হবে - কোন মুসলমানকে কাফের বলা জায়েজ নয়। বরং যে বলবে তার মারাত্মক গুনাহ হবে। এই কাজটা হারাম। কুরআন ও হাদীসে এ ব্যাপারে কড়া ধমকী এসেছে।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا ضَرَبْتُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَتَبَيَّنُوا وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ أَلْقَىٰ إِلَيْكُمُ السَّلَامَ لَسْتَ مُؤْمِنًا تَبْتَغُونَ عَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فَعِنْدَ اللَّهِ مَغَانِمُ كَثِيرَةٌ ۚ كَذَٰلِكَ كُنْتُمْ مِنْ قَبْلُ فَمَنَّ اللَّهُ عَلَيْكُمْ فَتَبَيَّنُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا [٤:٩٤]
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন আল্লাহর পথে সফর কর,তখন যাচাই করে নিও এবং যে,তোমাদেরকে সালাম করে তাকে বলো না যে, তুমি মুসলমান নও। তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদ অন্বেষণ কর,বস্তুতঃ আল্লাহর কাছে অনেক সম্পদ রয়েছে। তোমরা ও তো এমনি ছিলে ইতিপূর্বে; অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। অতএব, এখন অনুসন্ধান করে নিও। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কাজ কর্মের খবর রাখেন। {সূরা নিসা-৯৪}
হাদীসে রাসূল সাঃ যে ব্যক্তি কাফের না তাকে কাফের বললে, সেই কুফরী তার দিকে প্রত্যাবর্তন করে মর্মে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন-
عن أبي ذر رضي الله عنه أنه سمع النبي صلى الله عليه و سلم يقول ( لا يرمي رجل رجلا بالفسوق ولا يرميه بالكفر إلا ارتدت عليه إن لم يكن صاحبه كذلك
হযরত আবু জর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসুল সাঃ বলেছেন যে, তোমাদের কেউ যদি কাউকে ফাসেক বলে, কিংবা কাফের বলে অথচ লোকটি এমন নয়,তাহলে তা যিনি বলেছেন তার দিকে ফিরে আসবে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৬৯৮}
কত মারাত্মক হুশিয়ারী, তাই কাউকে কাফের, মুশরিক, নাস্তিক বলার ক্ষেত্রে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
কাউকে কাফের বলার ক্ষেত্রে সতঃসিদ্ধ নিয়ম সম্পর্কে আল্লামা মোল্লা আলী কারী রহঃ শরহে ফিক্বহুল আকবারে বলেন-
ان المسئلة المتعلقة بالكفر اذا كان له تسع وتسعون احتمالا للكفر واحتمال واحد فى نفيه فالاولى للمفتى والقاضى ان يعمل بالاحتمال النافى، لان الخطا فى ابقاء الف كافر اهون من الخطاء فى افناء مسلم واحد، (شرح الفقه الاكبر-199
কুফরী সম্পর্কিত বিষয়ে, যখন কোন বিষয়ে ৯৯ ভাগ সম্ভাবনা থাকে কুফরীর, আর এক ভাগ সম্ভাবনা থাকে, কুফরী না হওয়ার। তাহলে মুফতী ও বিচারকের জন্য উচিত হল কুফরী না হওয়ার উপর আমল করা।
কেননা ভুলের কারণে এক হাজার কাফের বেচে থাকার চেয়ে ভুলে একজন মুসলমান ধ্বংস হওয়া জঘন্য। {শরহু ফিক্বহুল আকবার-১৯৯}
সুতরাং কারো কোন কাজে সন্দেহ হলেই বা সামান্যতম গুনাহের কাজ করলেই তাকে কাফের, মুরতাদ, নাস্তিক ইত্যাদি বলে প্রচার করা জায়েজ নয়। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। মনে রাখা উচিৎ অন্যকে কাফের বা নাস্তিক বললে কিন্তু নিজের কোন লাভ নেই। পক্ষান্তরে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই এসব জিনিস থেকে বেঁচে থাকাই শ্রেয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন