রবিবার, ৪ মার্চ, ২০১৮

মাথার চুল মুণ্ডন করা কি হারাম?


এক বন্ধু ইনবক্সে ঢুঁ মেরে জিজ্ঞেস করলেন, মাথার চুল মুণ্ডান হারাম? সহজ উত্তরে বললাম, না। হারাম নয়। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, যদি কাউকে উৎসর্গ করে মাথার চুল মুণ্ডন করে? এবার আমি সোজা উত্তর না দিয়ে বললাম 'গুরু যবেহ কি হারাম? তিনি বললেন, না। বললাম, যদি পীর বাবার নামে জবেহ করে তাহলে? এখন তিনিই বললেন, তবে তো হারাম হবে। এই ছিল সংক্ষিপ্ত বোলচাল। বন্ধুবরের কথা মাথার চুল মুণ্ডন নিয়ে কিছু মুতালাআ করেছিলাম। সে প্রেক্ষাপটে আজকের এই লেখা।
মাথার চুল মুণ্ডনের ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরামের অভিমত অনুসন্ধান করলে দেখা যায় যে, এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি মত রয়েছে। নিম্নে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলঃ
১. চুল মুণ্ডানো সাওয়াবের কাজ। এর মোট চারটি ক্ষেত্র আছেঃ
     (ক) হজ্বের সময়
     (খ) উমরার সময়
     (গ) নবজাতকের জন্মের সপ্তম দিনে
     (ঘ) কাফের যখন ইসলাম গ্রহণ করে। আবু দাউদ শরীফের এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক নবমুসলিমকে বলেন। "তুমি কুফুর অবস্থার চুলকে মুণ্ডন করে ফেল এবং খাতনা কর।" ( দেখুনঃ আবু দাউদ শরীফ হাদীস নং- ৩৬৫, আল মুগনী ১/২৭৬, শারহুল উমদাহ ১/৩৫০)
(২) চুল মুণ্ডানো শিরকের অন্তর্ভুক্ত। এর ক্ষেত্র হল মানুষ যখন মাথা মুণ্ডন করে গাইরুল্লাহের প্রতি সম্মান করে। যেমন কোন কোন পীরের মুরীদেরা তাদের পীরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন মাথা মুণ্ডিয়ে থাকে। এটা শিরকের পর্যায়। কেননা কারো সম্মান প্রদর্শনপূর্বক মাথা মুণ্ডানো প্রকারান্তরে তার ইবাদত করার মতই। এজন্যে হজ্বের মত মহান ইবাদতের পরিপূর্ণতা পায় মাথা মুণ্ডনের দ্বারা। ( দেখুনঃ যাদুল মাআদ ৪/১৫৯)
(৩) মাথা মুণ্ডন করা বিদআতঃ এর ক্ষেত্র হল মাথা মুণ্ডন কে যখন সুফিবাদ বা আত্মশুদ্ধির পরিচায়ক বা চিহ্নরূপে নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। অথবা বলা হবে যে, মাথা মুণ্ডন করার দ্বারা আত্মশুদ্ধির পূর্ণতা অর্জন হয়। যেমন মতাদর্শ খারেজী সম্প্রদায়ের লোকেরা অবলম্বন করে থাকে। তারা এটাকে দুনিয়াবিমুখতার নিদর্শন বলে থাকে। ( বিস্তারিত দেখুনঃ শারহুল উমদাহ ১/২৩১, মাজমুউল ফাতাওয়া ২১/১১৮)
(৪) মাথা মুণ্ডন করা হারাম। এর ক্ষেত্র হল, মসিবতের সময় বা কারো মৃত্যুর কারণে শোকে বা দুঃখে মাথা মুণ্ডন করা। মুসলিম শরিফের হাদীসে এসেছে হযরত আবু মুসা আশ'আরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দায়ভার মুক্ত ঘোষণা করেছেন ওই মহিলা থেকে যে কারো মৃত্যুতে মাথার চুল মুণ্ডন করে, উঁচু আওয়াজে বিলাপিনী ও বক্ষবিদারণ করে ক্রন্দন করে। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ১৪৯)
(৫) মাথা মুণ্ডন করা মুবাহ বা জায়েয। এর ক্ষেত্র হলঃ কোন অসুখ হলে বা উঁকুনের উৎপাত থেকে মুক্তি পেতে ইত্যাদি। এ সুরতে মাথা মুণ্ডান সর্বসম্মতভাবে জায়েয। (দেখুনঃ মাজমুউল ফাতাওয়া, ১২/১১৭)
মাথা মুণ্ডনের এই নম্বরে আরেকটি ক্ষেত্র উল্লেখ না করলেই নয়। সেটা হল উপরোল্লিখিত কোন কারণ ছাড়া এমনিতেই মাথা মুণ্ডন করা। এ বিষয়ে ইমামগণের কিছুটা মতপার্থক্য দেখা যায়। ইমাম মালেক রাহ. কোন কারণ ছাড়া শুধু শুধু মাথা মুণ্ডন করাকে মাকরুহ বলেছেন। যেহেতু এটা খারেজী ও বিদ'আতিতের নিদর্শন আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। তবে অন্যন্য উলামায়ে কেরাম কোন কারণ ছাড়া এমনিতেই মাথা মুণ্ডনকে মুবাহ বা জায়েয হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাদের দলীল হল, আবূ দাউদ শরীফে উল্লেখিত একটি হাদীস। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বাচ্চাকে দেখলেন যে, সে মাথার কিছু চুল মুণ্ডন করেছে আর কিছু করেনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আদেশ দিয়ে বললেন। "হয়ত পূর্ণ মাথা মুণ্ডন কর নাহয় পুরো চুলকেই রেখে দাও।" ( আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৪১৯৫) ইমাম নববী রাহ. বলেন, এ হাদিস দ্বারা মাথা মুণ্ডন করা মুবাহ বা জায়েয হওয়াটা স্পষ্টভাবে বুঝে আসে।
উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা একথাই বুঝে আসে যে বিনা কারণে মাথা মুণ্ডন করা জায়েয। অর্থাৎ যেমন হারাম বা মাকরুহ নয় তেমনি সুন্নাত বা মুস্তাহাবও নয়। আমাদের মধ্যে  অনেকেরই এ ভুল ধারণার আছে যে, মাথা মুণ্ডান সুন্নাত বা মুস্তাহাব। যা আসলে সঠিক নয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নাভীর নীচের অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা

নাভীর নীচের অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা হলো : পায়ের পাতার উপর ভর করে বসা অবস্থায় নাভী থেকে চার পাঁচ আঙ্গুল পরিমাণ নীচে যে ভাঁজ বা রেখা সৃষ্টি হয় ...