রবিবার, ১১ মার্চ, ২০১৮

স্বেচ্ছামৃত্যু কী? স্বেচ্ছামৃত্যু জায়েয আছে কি?

সম্প্রতি ভারতের আদালত স্বেচ্ছামৃত্যুর ব্যাপারে অনুমতিসূচক রায় প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন গুণীজন এটাকে আদালতের ঐতিহাসিক রায় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। খবরটা আমাদের দেশের জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ করায় স্বভাবতই মুসলমানদের জনমনে স্বেচ্ছামৃত্যুর ব্যাপারে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি জানার আগ্রহ হতে পারে, সেই জন্যেই আজকের লেখা
স্বেচ্ছামৃত্যু কি?
জীবন যখন মৃত্যুর চেয়ে যন্ত্রণাদায়ক তখনও যেভাবে হোক বেঁচে থাকতে হবে। তাঁকে বাঁচিয়ে রাখতে ভেন্টিলেশন, অক্সিজেন ও আরো নানা উপকরণসহ লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমের ব্যবস্থা করা। এক জীবন্মৃত এই শরীরকে বাঁচিয়ে রাখার খরচ মেটাতে ঘটিবাটি সর্বস্ব বেঁচে ক্রমশ নিঃস্ব হতে থাকে পরিবার ও ঘনিষ্ঠ আপনজন। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বাঁচানো সম্ভব নয় এমন রোগী থেকে লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলার দরুন রোগীর ইহকালের জীবন সমাপ্ত করার নাম স্বেচ্ছামৃত্যু। এর দ্বারা বুঝা গেল, স্বেচ্ছামৃত্যু আর আত্মহত্যা এক নয়
স্বেচ্ছামৃত্যুর উৎপত্তিঃ
বলা হয় ভারতে মুম্বাইয়ের কেইএম হাসপাতালের প্রাক্তন নার্স অরুণা শানবাগের মৃত্যু থেকেই  স্বেচ্ছামৃত্যুর বিষয়টা সবার সামনে জোড়দার হয়ে ওঠে। ২০১৫ সালের ১৮ মে মৃত্যু হয় অরুণার
কী হয়েছিল অরুণার? ১৯৭৩ সালের ২৭ নভেম্বর থেকে ব্রেন-ডেড অবস্থায় ছিলেন অরুণা। সেই সময় তাঁর ওপর নৃশংস যৌন নির্যাতন চালিয়েছিল ঐ হাসপাতালেরই এক ওয়ার্ড বয়। শারীরিক অত্যাচার করার সময় কুকুর বাঁধার শিকল দিয়ে অরুণার গলায় পেঁচিয়ে ধরেছিলো সে। ঐ ঘটনায় অরুণা মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাথায় রক্ত সংবহনও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এমনকী অন্ধও হয়ে যান অরুণা। এই অবস্থায় ৪২ বছর বেঁচে থাকতে হয়েছিল অরুণাকে। কেইএম হাসপাতালের চিকিৎসকরা জীবন্মৃত অরুণাকে বাঁচিয়ে রাখার কর্তব্য সম্পাদনে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সমাজের বিভিন্ন দিক থেকে বারবার প্রশ্ন উঠেছে যে, এ রকম বাহ্যজ্ঞানরহিত, শারীরিকভাবে বিধ্বস্ত, মৃত্যুপথযাত্রী কোনো ব্যক্তিকে দিনের পর দিন কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখা বাস্তবে কতখানি মানবিক কাজ। বছরের পর বছর কোমায় থাকা রোগীর জন্য অন্য ব্যবস্থা কী হতে পারে? এর থেকেই ভারত স্বেচ্ছামৃত্যুর ব্যাপারে পদক্ষেপগ্রহণ
স্বেচ্ছামৃত্যুর ব্যাপারে ইসলাম কী বলে?
এই প্রশ্নের উত্তর জানার আগে কিছু কথা জানা জরুরী। তা হল, অসুখ হলে অষুধ গ্রহণের ব্যাপারে ইসলামের কী ভাবধারা? আমরা জানি কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা গ্রহণ করাটা শরীয়তসম্মত। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘যখন আমি রোগাক্রান্ত হই তখন তিনি আমাকে আরোগ্য দেন।’ (সূরা শুআরা : ৮০)। চিকিৎসার বহু উপকরণ এ পৃথিবীতে আল্লাহতায়ালা দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে চিকিৎসার উপকরণ বাতলে দিয়েছেন। যেমন মধু সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে- তার (মৌমাছির) পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় বের হয়। যাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। (সূরা নাহল : ৬৯)
বিভিন্ন হাদীসের আলোকেও চিকিৎসা করার বৈধতা প্রমাণীত হয়। । যেমন নবী করীম সা. বলেন, হে আল্লাহর বান্দাগণ তোমরা চিকিৎসা করবে। কারণ আল্লাহতায়ালা এমন কোনো রোগই সৃষ্টি করেননি যার তিনি প্রতিষেধকও রাখেননি (বুখারি শরীফ, ২/৮৪৭), তিরমিজি শরীফ, ২/২৪১), (আবু দাউদ শরীফ ২/৫৪১)
রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও চিকিৎসা নিয়েছেন। সাহাবিগণও চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি তার সমর্থন দিয়েছেন। তবে চিকিৎসা গ্রহণ, ওষুধ সেবন ইসলামের দৃষ্টিতে জরুরি যেমন ফরজ বা ওয়াজিব কোনো বিষয় নয়। বিভিন্ন হাদিস থেকে এরও সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, আমার উম্মতের মধ্য থেকে ৭০ হাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা হল যারা ঝাড়ফুঁক ও কুলক্ষণ নির্ধারণ করে না বরং তারা তাদের প্রতিপালকের ওপর ভরসা করে। (বুখারি শরীফ ২/৯৫৮)। মুসলিম শরিফের ব্যখাদাতা আল্লামা নববী রাহ.  বলেন, প্রতিটি রোগেরই ওষুধ আছে... এই হাদিসে ইঙ্গিত পাওয়া যায় চিকিৎসা করা মুস্তাহাব।
এখানে চিকিৎসার বিষয়ে আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে বলা যায়, শারীরিক যে কোনো সমস্যা দূর করার উপায় উপকরণ তিন ধরনের
এক. এমন উপকরণ যা সমস্যা দূর হওয়া নিশ্চিত। যেমন পানি পান করায় পিপাসার কষ্ট দূর হওয়া। আহার করলে ক্ষুধার কষ্ট দূর হওয়া। নিশ্চিত বিষয়। যদি এমন পরিস্থিতি হয় যে, পানি পান না করলে অথবা আহার না করলে মারা যাওয়ার আশংকা আছে। তখন পানি পান করা বা আহার করে জীবন বাঁচানো ফরজ। না করলে হারাম হবে।
দুই. সন্দেহযুক্ত উপকরণ। যা ব্যবহার করলে সমস্যা দূর হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে। যেমন রোগীকে ঝাড়ফুঁক করা। এতে রোগীর সুস্থ হওয়ার বিষয়টি সন্দেহযুক্ত। এ ধরনের উপকরণ ব্যবহার না করাই উত্তম
তিন. সম্ভাব্য উপকরণ। স চিকিৎসাব্যবস্থা এর অন্তর্ভুক্ত। বিভিন্ন বৈধ চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ, ওষুধ সেবন ইসলামের দৃষ্টিতে মুস্তাহাব। জরুরি নয়, সুতরাং সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা গ্রহণ না করা, ওষুধ সেবন না করা, হারাম কাজ নয়। তবে অনুত্তম। ( দেখুনঃ ফাতাওয়ায়ে আলমগীরি ৫/৩৫৫)
উপরিউক্ত লোচনার পর আসি স্বেচ্ছামৃত্যুর কারণ নিয়ে। দেখা গেলে স্বেচ্ছামৃত্যুর অন্যতম কারণ হল অনন্যোপায় অবস্থায় রোগীর লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলা। বস্তুত লাইফ সাপোর্ট তেমন কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা নয় যার দ্বারা রোগীর বেঁচে থাকা নিশ্চিত। এটি একটি অনুমানভিত্তিক সম্ভাব্য উপকরণের অন্তর্ভুক্ত। এটা একজন আশংকাজনক রোগীকে সারিয়ে তোলার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। কিন্তু এ চেষ্টার শেষ পর্যন্ত সে সম্পূর্ণ সেরে উঠবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অনেকে লাইফ সাপোর্টে থেকে মারাও যান। খুব কম লোকই সেরে ওঠেন। উপরন্তু এটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। যে চিকিৎসায় সাধারণত ানুষ সুস্থ হয় তাও যদি কেউ গ্রহণ না করে,  তবুও সে গোনাহগার হয় না। তাহলে লাইফ সাপোর্টে যখন সুস্থ হওয়ার খুব সম্ভাবনা কম। আবার এর জন্যে লাগে কাড়ি কাড়ি টাকা,  তখন তা অবলম্বন না করলে গোনাহ না হওয়ারই কথা।  অতএব বাঁচানো সম্ভব নয় এমন রোগী থেকে লাইফ সাপোর্ট খুলে নেয়ার মাধ্যমে বা আর্থিক অসঙ্গতির দরুন অত্যন্ত ব্যায়বহুল চিকিৎসা না করার ফলে কারো স্বেচ্ছামৃত্যু  শরীয়ত বিরোধী কাজ না হওয়াই বাঞ্চনীয়। তারপরেও কারো সামর্থ থাকলে এবং স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্যে আবশ্যিক কারণ না থাকলে স্বেচ্ছামৃত্যু না ঘটানোই ভাল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নাভীর নীচের অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা

নাভীর নীচের অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা হলো : পায়ের পাতার উপর ভর করে বসা অবস্থায় নাভী থেকে চার পাঁচ আঙ্গুল পরিমাণ নীচে যে ভাঁজ বা রেখা সৃষ্টি হয় ...