রবিবার, ৪ মার্চ, ২০১৮

উস্তাদের হক বা শিক্ষকের প্রতি ছাত্রের দায়িত্ব

উস্তাদের জন্য ছাত্রের করনীয় তথা উস্তাদের হক রয়েছে। নিচে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলঃ
১। উস্তাদের আদব রক্ষা করাঃ কথা বার্তা, শব্দ প্রয়োগ, আচার-আচারন, উঠা-বসা, চলা-ফেরা ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই আদব রক্ষা করতে হবে। যেমনঃ উস্তাদের আগে বেড়ে কথা না বলা, উস্তাদের সামনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জোরে কথা না বলা, তাঁদের দিকে পিছন দিয়ে না বসা, এক সঙ্গে চলার সময় তাঁদের সামনে না চল, তাঁদের সামনে বেশি না হাসা, বৃথা কথা না বলা ইত্যাদি
২। উস্তাদের প্রতি ভক্তি রাখাঃ উস্তাদের সাথে ভক্তি সহকারে কথা বলা, ভক্তি সহকারে তাঁদের দিকে দৃষ্টি দেয়া এবং হাবভাব ভক্তি প্রকাশ করা কর্তব্য
৩। উস্তাদকে আজমত ও শ্রদ্ধা করাঃ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করে শ্রদ্ধা ও আজমতের সাথে তাঁদের সামনে হাজির হওয়া কর্তব্য
৪। উস্তাদের সাথে তাওয়াজু ও বিনয়ের সাথে থাকাঃ কথা-বার্তা ও আচার-আচরণ সবকিছুইতেই বিনয় থাকতে হবে। দুনিয়ার সব ক্ষত্রেই খোশমোদ তোষামোদ নিন্দনীয়; একমাত্র উস্তাদের বেলায় তা প্রশংসনীয়। 
৫। উস্তাদের খেদমত করাঃ এই খেদমতের মধ্যে উস্তাদ অভাবী এবং ছাত্র স্বচ্ছল হলে উস্তাদের বৈষয়িক সহযোগিতা করা এবং তাঁদেরকে হাদিয়া-তোহফা প্রদান করাও অন্তর্ভক্ত
৬।  উস্তাদে হক অনেকটা পিতার মত। বস্তুত উস্তাদ হলেন রুহানী পিতা, তাই পিতার ন্যায় উস্তাদের হকও তাঁর মৃত্যুর পরও বহাল থাকে। এ জন্যই উস্তাদের মৃত্যুর পরও সর্বদা তাঁর জন্য দুয়া করা কর্তব্য। উস্তাদের নিকটাত্নীয়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, তাঁদের খেদমত করা, এমনিভাবে উস্তাদের বন্ধু-বান্ধব ও সমসাময়িক অন্যান্য শিক্ষকদের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং প্রয়োজনে তাঁদের খেদমত করা কর্তব্য
৭। উস্তাদের খেদমতে লিপ্ত হলে আদব হল তাঁর অনুমতি ব্যতীত চলে না যাওয়া। (অনুমতি প্রকাশ্যে হোক বা লক্ষণ থেকে বুঝ হোক।)
৮। কোন কারনে উস্তাদ অসন্তুষ্ট হলে বা উস্তাদের মেজাযের পরিপন্থী কোনো কথা বলে ফেললে সাথে সাথে নিজের ত্রুটির জন্য ওজরখাহী করা এবং উস্তাদকে সন্তুষ্ট করা জরুরি
৯। ছাত্রের কোনো অসংগত প্রশ্ন বা অসংগত আচরনের কারনে উস্তাদ রাগ করলে, বকুনি দিলে বা মারধর করলে ছাত্রের কর্তব্য সেটা সহ্য করা। এমনকি অন্যায়ভাবে কিছু বললেও তাঁর নিন্দা-শেকায়েত না করা এবং মন খারাপ না করা উচিত
১০। ছাত্রের কর্তব্য মনোযোগের সাথে উস্তাদের বক্তব্য ও ভাষণ শ্রবন করা, অন্যমনষ্ক না হওয়া এবং উস্তাদের কথা ভাল করে ইয়াদ/মুখস্ত করা
১১। উস্তাদ কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করতে নিষেধ করলে তা মান্য করা উচিত এবং কখনো তাঁকে অসুবিধায় ফেলতে চেষ্টা না করা উচিত। কোনো বিভ্রান্তিমূলক প্রশ্ন করাও নিষেধ। নিজের মেধার গৌরব প্রদর্শনের জন্য প্রশ্ন করা বা সস্পষ্ট কিংবা অর্থহীন প্রশ্ন করাও উচিত নয়
১২। উস্তাদের কোনো বক্তব্য বোধগম্য না হলে সে জন্য উস্তাদের প্রতি কুধারনা পোষন করবে না বরং বুঝতে না পারাকে নিজের বোধশক্তির ত্রুটি মনে করবে
১৩। উস্তাদের মতের বিপরীত অন্য কারও মত তাঁর সামনে বয়ান করবে না
১৪। পাঠ দানের সময় সম্পূর্ণ নীরব থাকা উচিত। এদিক-সেদিক তাকানো, কথা-বার্তা বলা বা হাসি তামাশায় লিপ্ত হওয়া সম্পূর্ণ বর্জনীয়
১৫। নিজের কোন ত্রুটি হলে উস্তাদের সামনে অকপটে তা স্বীকার করে নেয়া কর্তব্য। অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমানিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত না হওয়া উচিত
১৬। উস্তাদের কোন ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে সে জন্য উস্তাদের প্রতি ভক্তি হারিয়ে না বসা বরং তার এমন কোন সুব্যাখ্যা বের করা, যাতে উস্তাদ রক্ষা পান। অবশ্য স্পষ্টতই উস্তাদ থেকে কোনো অন্যায় সংঘটিত হলে তার সমর্থন না করা চাই
১৭। মাঝেমধ্যে চিঠিপত্র যোগাযোগ ও হাদিয়া- তোহফা দ্বারা তাঁদের মন খুশি করতে থাকা কর্তব্য। সারাজীবন এটা করতে থাকবে। ছাত্রজীবন শেষ হয়ে গেলেই উস্তাদের হক বন্ধ হয়ে যায় না
১৮। নিজের দ্বারা উস্তাদের আসবাবপত্রের ক্ষতি সাধন হলে আদবের সাথে সেটা উস্তাদকে জানিয়ে দেয়া জরুরী। গোপন রেখে উস্তাদকে কষ্ট দেয়া অনুচিত
১৯। উস্তাদ রোগাক্রান্ত হলে অথবা দুর্বল হয়ে পড়লে কিংবা অসুবিধাজনক অবস্থায় থাকলে সবক পাঠ বন্ধ রাখা
২০। শাগরিদকে উস্তাদের খেদমতে হাজির হয়ে ইলম শিক্ষা করতে হবে। শাগরিদের নিকট পড়াবার জন্য আসার কষ্ট উস্তাদকে না দেয়াই উত্তম
২১। উস্তাদ যা পড়াবেন পূর্বাহ্নে তা মুতালা (আগেই পড়ে আসা) করাও উস্তাদের হকের অন্তর্ভুক্ত
২২। উস্তাদ কোনো ছাত্রের জন্য কোনো বিশেষ বিষয় বা বিশেষ বই পড়া ক্ষতিকর মনে করে নিষেষ করলে ছাত্রের পক্ষে তা থেকে বিরত থাকা উচিত
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ যাদের থেকে দ্বীনী মাসয়ালা মাসায়েল শিক্ষা করা হয় তারাও উস্তাদ বলে গন্য। এমনকি যাদের প্রণিত দ্বীনী কিতাবপত্র দ্বারা কেউ উপকৃত হয়ত, এ নিয়ম অনুযায়ী তাঁরাও উস্তাদ এবং সে তাদের ছাত্র বলে গন্য। উস্তাদের ন্যায় তাঁদেরকে হক রয়েছে
আল্লাহ আমাদেরকে বোঝার তাওফিক দান করুন।

৩টি মন্তব্য:

নাভীর নীচের অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা

নাভীর নীচের অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা হলো : পায়ের পাতার উপর ভর করে বসা অবস্থায় নাভী থেকে চার পাঁচ আঙ্গুল পরিমাণ নীচে যে ভাঁজ বা রেখা সৃষ্টি হয় ...