শনিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৮

চেতনার ফেরিওয়ালাদের থেকে সাবধান

খুব সূক্ষ্মভাবে ধোঁকায় ফেলা হচ্ছে। আজকের দুপুরের নিউজে কিছুক্ষণ কান পাততেই ভারী হয়ে গেলো কান। কী সব খেজুরে যুক্তি দিয়ে মুসলমানকে বৈশাখের ভ্রষ্টতায় জড়ানোর আহবান জানানো হচ্ছে। এক ভদ্রলোক তো বললেন, ফেসবুক গুজবে কান না দিয়ে আমাদের জাতীয়তার চেতনায় প্রাণের উৎসবে অংশগ্রহণ করা উচিত। জাতীয় চেতনা কি পিকাপে চড়ে "শীলা কি জাওয়ানি"র তালে উন্মত্ত নৃত্য প্রদর্শন করা? আহ...

বড় পরিতাপে বিষয়, একদম বাজে ঠুনকো যুক্তির বলয়ে মুসলমান নারী-পুরুষের মানসিকতা নিয়ে চরকিবাজি খেলছে। "দলমত ও ধর্মমত নির্বিশেষে প্রাণের বৈশাখী উৎসব পালন করতে হবে। মৌলবী এখানে তুমি ধর্মকে কেন টানছো? বৈশাখ তো সামাজিক উৎসব। পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালী জাতীয়তার সাথে সম্বন্ধিত। ধর্মের গোঁড়ামি দিয়ে বাঙ্গালীর ঐতিহ্যকে রোখা যাবে না। সব বিষয়ে ধর্মকে টানা যাবে না। পহেলা বৈশাখ তো সাওয়াবের কাজ বলে পালন করা হয় না, সুতরাং ধর্মীয় চেতনা কেন আসবে? ইত্যাদি" এজাতীয় মুখরোচক কথার দ্বারা তারা একথাই প্রমাণ করতে চায় যে, এদেশের নাগরিকদের প্রধান ও সবচেয়ে বড় পরিচয় সে একজন বাঙ্গালী। দেশের প্রতিটা নাগরিকের অগ্রগণ্য ভূমিকা থাকবে বাঙ্গালী ভূমিকা। বাঙ্গালী সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে ও পালনের ক্ষেত্রে কোন আপোষ নেই। না ধর্মের সাথে, না কর্মের সাথে, না বর্ণের সাথে।

আসলেই কি একজন মানুষের বড় পরিচয় তার জাতীয়তা? মানুষের জন্যে অগ্রগণ্য কোনটা, ধর্মীয় মূল্যবোধ নাকি জাতীয়তা? এটা একটা বহুলালোচিত ধোঁয়াশাপূর্ণ প্রশ্ন। একদল মানুষ রয়েছে যারা ধর্মকে বাদ রেখে জাতীয়তার চেতনা ফেরি করে বেড়ায়, তাদের কথা হলো, মানুষের প্রাধান্যপূর্ণ পরিচয় হলো তার জাতীয়তা। ধর্মকে যেকোন সময় পরিবর্তন করা যায়। ধর্মের কার্যকারিতা হয় বুঝ শক্তি অর্জনের পর থেকে। কিন্তু জাতীয়তা মানুষের জন্মের পর থেকে প্রয়োজনীয় পরিচয় আর এটা এমন পরিচয় যা পরিবর্তন করা অসম্ভব।

অপরপক্ষে ধর্মীয় মূল্যবোধ যাদের কাছে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ তারা বলেন, মানুষের প্রধান পরিচয় তার ধর্মীয় পরিচয়। এককথায় আমরা সর্বাগ্রে আগে মুসলিম এরপর আমাদের জাতীয়তা। বাঙ্গালী পরিচয় আমাদের দ্বিতীয় স্তরের পরিচয় মাধ্যম। সুতরাং বাঙ্গালী পরিচয় দিতে গিয়ে কোন বিষয়ে যদি ধর্মীয় মূল্যবোধ জর্জরিত হয় তবে উৎকণ্ঠাহীনভাবে সেসব জাতীয়তাকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করতে আমাদের দ্বিধা নেই।

উপরোক্ত আলোচনা পড়ে থাকলে মনের বাতায়নে একটা বিষয় অবশ্যই উঁকি দিবে। তা হলো- আসলে কি আমাদের জীবনে ধর্মীয় পরিচয় অধিক গুরুত্বপূর্ণ? না কি জাতীয়তার পরিচয় বেশী গুরুত্বপূর্ণ? একজন মুসলমান নিজের জন্য কোনটিকে তার মূল পরিচয় হিসেবে অগ্রাধিকার দেবেন- আগে কি? মুসলমি না বাঙ্গালী?
একথার উত্তর অনেক বিস্তারিতভাবে দেয়া যেতে পারে, তবে এখানে আমি মাত্র কয়েকটি দিক তুলে ধরবো।
১. আমরা যারা মুসলমান তাদের এই আক্বিদা অবিশ্যই রয়েছে যে, পৃথিবীতে আগমনের পূর্বে মানুষের আত্মা বা রুহ দীর্ঘ এককাল ভিন্ন এক জগতে অবস্থান করে। যাকে আলমে আরওয়াহ বা রুহের জগত বলা হয়। আমার প্রশ্ন হলো, সেই আলমে রুহে আপনি কী ছিলেন?
কুরআন ও তাফসীর এর ভাষ্যে সেদিন সকল মানুষের একটাই পরিচয় ছিলো, সকলেই মুসলিম অর্থাৎ সমর্থনকারী।  সকল রূহকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ “আমি কি তোমাদের রব নই?” জবাবে আমরা সকলেই এ স্বীকৃতি দিয়ে এসেছি যে, بَلَى “নিশ্চয়ই (আপনি আমাদের রব)।” [সূরা আল আ'রাফ ১৭২ নং আয়াত]

তখন আমরা কেউই পৃথিবীর ভৌগলিক কোন সীমারেখার অধীনে ছিলাম না। বরং আল কুরআনের এ তথ্যের দ্বারা অকাট্য হলো যে, মানব জীবনের আদি বন্ধন রয়েছে ধর্মের সাথে তথা ইসলামের পরিচয়ের সাথে। কোন অবস্থাতেই জাতীয় পরিচয়ের সাথে নয়। তাহলে কিভাবে একজন মুসলমানের জন্য মুসলিম পরিচয়ের আগে বাঙ্গালী পরিচয় প্রাধান্য পেতে পারে?

২. পৃথিবী থেকে চলে যাবার দিন বা তার পরবর্তী সময়ে মানুষের কোন পরিচয়টি কাজে লাগে বা লাগবে? বাঙ্গালী নাকি মুসলিম? আপনার লাশটি যখন কবরে শোয়ানো হবে, তখন কি বলে শোয়াবে সবাই? তখন বলবে-

بِسْمِ اللَّهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُولِ اللَّهِ

অর্থাৎ, "(আমরা এই লাশ) আল্লাহর নামে এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের উপর রাখছি।" [সুনানে আবূ দাউদ: 2798]

আর এ কথা সর্বজন বিদিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ হলো শুধুমাত্র ইসলাম। সুতরাং আপনি সারাজীবন যে মতাদর্শ পালন করে থাকেন, মৃত্যুর পরেই কিন্তু মুসলমান হিসেবে আপনার পরিচয় চলে আসে। এমনকি আখিরাতের অনন্তকাল আপনাকেই এই মুসলিম পরিচয়েই কাটাতে হবে। সেখানে না বাঙ্গালী জাতীয়তা থাকবে, না বৈশাখী চেতনা থাকবে না। এখন চিন্তা করুন, যেই পরিচয় নিয়ে অসীমকাল কাটাতে হবে সেই মুসলিম পরিচয়কে সামান্য বাঙ্গালী পরিচয়ের উপর কীভাবে প্রাধান্য দিতে পারেন। আপাতত আখিরাতে বিশ্বাসী হলে কখনোই তা পারবেন না।

৩. জন্ম ও মৃত্যু মধ্যবর্তী এই সময়ে  মুসলিম পরিচয়ের আগে বাঙ্গালী পরিচয় দানের দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে প্রকারান্তরে ইসলাম বিদ্বেষী বিশ্বাস লালন করছেন না তো? আমি বলবো অবশ্যই। আপনি যদি বলেন, আগে আমার জাতীয়তার পরিচয় পরে আমার ধর্মীয় বিশ্বাস। তাহলে আমি বলবো আপনি রাসূল সা. এর আদর্শের বিপরীত কাজ করছেন। কারণ রাসুল সা. দ্বীনকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে প্রিয় জন্মভূমিকে ত্যাগ করেছিলেন। মক্কার ধূলোবালিতে যার বেড়ে ওঠা তিনি কিনা একমাত্র দ্বীনের স্বার্থে আপন দেশ ত্যাগ করলেন। সাহাবায়ে কেরাম আপন দেশ ও জাতী ত্যাগ করে সিরিয়া, মিশর, আবিসিনিয়াসহ বিভিন্ন দেশে হিজরত করেছেন। আপন জাতীয়তা ত্যাগ করে ইসলামকে সমুন্নত করেছেন। অথচ আপনার সামনে বাঙ্গালী জাতীয়তা বড় হয়ে গেলো। মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ বাঙ্গালী বিভিন্ন কালচার আপনার কাছে গুরুত্ববহ হয়ে গেল। স্পষ্টত ইসলাম বিরোধী হওয়া সত্বেও সামাজিক কালচারের বুলি আওড়িয়ে আপনি সেসব পোগ্রামে নির্দ্বিধায় অংশ নিচ্ছেন। এবার চিন্তা করুন, আপনার কাছে কি সামাজিক পরিচয় বড় না মুসলিম পড়িচয় বড়?
যদি কোন ব্যক্তি মুসলিম পরিচয়ের উপর তার সামাজিক পরিচয়কে প্রাধান্য দিয়ে থাকে, তবে নিঃসন্দেহে সে আখেরাতের অনন্ত জীবনের তুলনায় দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনকে প্রাধান্য দিয়েছে। কেননা, আলোচনার দ্বারা সুস্পষ্টভাবে বুঝা গেছে যে, মুসলিম পরিচয় শুধুমাত্র একটি পরিচয় নয়; বরং এর সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছে ব্যক্তির পৃথিবীপূর্ব রূহের জগৎ এবং পৃথিবী পরবর্তী অনন্ত জীবনের শান্তি কিংবা শাস্তি। মহান রাব্বুল আলামীন বলেন,

وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَلَلدَّارُ الْآَخِرَةُ خَيْرٌ لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ أَفَلَا تَعْقِلُونَ

অর্থাৎ, “পার্থিব জীবন ক্রীড়া ও কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়। আখেরাতের আবাস মুত্তাকীদের জন্যে শ্রেষ্টতর। তোমরা কি বুঝ না?” [সূরা আল-আন'আম: ৩২]

অতএব ভাবুন ও বুঝুন। পরিষেশে আরো একটি কথা। আজকের এই আলোচনাকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। কেননা, এদেশে বেশ কিছু উর্বর মস্তিষ্কের লেখক রয়েছে, যারা তাদের লেখালেখির মাধ্যমে মানুষকে আখেরাতমুখী হওয়া থেকে সরিয়ে নিয়ে দুনিয়া বিলাসীতে পরিণত করার অতি সূ্ক্ষ্ম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে তাদের বড় হাতিয়ার হলো দেশ ও জাতীয়তাকে ব্যবহার করা

সত্যি বলতে কি, আমরা যখন দেশে কথা শুনি বা আমাদের সামনে যখন দেশের প্রসঙ্গ আসে মনটা ভিজে উঠে। দেশের প্রতি এমন ভালবাসা ভাল, অবশ্যই দরকারী। কিন্তু এক্ষেত্রে সতর্কতার খুবই প্রয়োজন রয়েছে। কেননা, এ পথ ধরেই শয়তান ও তার দোসররা একসময়  দেশ প্রেমের অসিলায় মুসলমানদেরকে ধর্মবিরোধী কাজে জড়িয়ে ফেলে। আজকাল তো এমন  অহরহ হচ্ছে যে, দেশ ও জাতীয়বাদের বুলি আওড়ে ধর্মীয় অনেক বিষয়কে পরিবর্তন, পরিবর্ধন কিংবা রহিত করা হচ্ছে। ভাবসাব যেন, দেশ ও জাতীয় চেতনার ঊর্ধ্বে কিছু নেই। ধর্মীয় চেতনাই যে সবচেয়ে ঊর্ধ্বে এই বাক্যটাকে সুকৌশলে জনতার মন থেকে মুছে ফেলার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত একদল কুচক্রি।
সময় থাকতে সাবধান ওহে নওজোয়ান!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নাভীর নীচের অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা

নাভীর নীচের অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা হলো : পায়ের পাতার উপর ভর করে বসা অবস্থায় নাভী থেকে চার পাঁচ আঙ্গুল পরিমাণ নীচে যে ভাঁজ বা রেখা সৃষ্টি হয় ...