রবিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৮

মসজিদের ভূমিকা কী কী?

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মসজিদের প্রয়োজনীয়তা কেন? এই শিরোনামে বিশিষ্টজনের লেখা পড়েছিলাম। অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ছিলো। হযরত লেখা শুরু করেছিলেন একজনের সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে, এভাবে...
" আপনারা ওখানে কী কাজ করছেন?
: আমরা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছি..।
: মসজিদ করেছেন? মসজিদের কী দরকার? তারা নামায তো নিজ নিজ ঘরেও পড়তে পারবে।"
জানি না কোন কোন ধূর্ত লোকের সাথে হযরতের কথোপকথন হয়েছিল, কিন্তু সেই ধূর্ত লোকের কিছু অনুসারী সারাদেশেই যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তা জানা হয়ে গেলো গতকাল। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সম্প্রতি শাইখুল হাদীস রহ. মসজিদকে শহীদ করে দেওয়ায় উলামায়ে ইসলামের প্রতিবাদে অন্তর্দাহের জ্বালায় প্রলাপ করতে দেখা গেলো আরেকবার। আবারো বলে উঠলো নামধারী এক মুসলিম, "নামায কি মসজিদে গিয়েই পড়তে হবে? মসজিদ নিয়ে রাজনীতি না করে অন্যান্য সমস্যার প্রতি দৃষ্টি দিন।"

অসুস্থ মানসিকতার শিকার এই সব নামধারী মুসলমানের কথায় একটা বিষয় স্পষ্ট ফুটে ওঠে যে, মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয় একমাত্র নামায আদায়ের উদ্দেশ্য। মসজিদে গিয়ে ইমামের পিছনে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা ছাড়া মসজিদের আর কোন ভূমিকা নেই। আসলেই কি তাই?

এর উত্তর জানার জন্যে কুরআন, হাদীস ও ইসলামী ইতিহাসের স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায়গুলো মন্থন করলে দেখা যায় নামায আদায়ের পাশাপাশি আরো বিভিন্ন কাজ মসজিদের মাধ্যমে আঞ্জাম দেওয়া হতো। ইসলামের প্রাথমিক যুগে সমাজ পরিবর্তনে মসজিদের ভূমিকাই ছিল প্রধান। মসজিদ ছিল একই সাথে দাওয়াতী কাজের প্রাণকেন্দ্র এবং রাষ্ট্রীয় ভবন। দাওয়াতী কার্যক্রম এখান থেকেই পরিচালনা করা হতো। বিভিন্ন বিষয়ের পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ এখানেই সম্পাদন করা হতো। বিভিন্ন দেশ ও এলাকা থেকে আগত প্রতিনিধি ও মেহমানদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম মসজিদেই স্বাগত জানাতেন। সাহাবায়ে কিরামের সাথে মসজিদেই তিনি মিলিত হতেন এবং তাদের শিক্ষাদান করতেন। এক কথায় : মসজিদ ছিল তৎকালীন মুসলিম সমাজের যাবতীয় কাজের কেন্দ্রস্থল।

এক হাদীসে এসেছে, যখন কিছু লোক আল্লাহর কোনো ঘরে একত্রিত হয়ে তাঁর কিতাব তিলাওয়াত করে, এর ইলম অর্জন করে এবং তা পরস্পর আলোচনা করে তখন তাদের উপর ‘সাকীনা’ নাযিল হয়, রহমত তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে, ফিরিশতারা তাদের বেষ্টন করে ফেলে এবং আল্লাহ তাঁর কাছে যারা থাকেন তাদের সাথে তাদের আলোচনা করেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৯৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯২৭৪) 
এই হাদীসের দ্বারা  মসজিদভিত্তিক তালিমের সিদ্ধিতা বুঝা যায়। বর্তমানে তালিমের জন্য স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হলেও মসজিদে তালিমের প্রয়োজন একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি এবং তা সমীচীনও নয়। কারণ মসজিদে উপস্থিতি এক স্বতন্ত্র আমল (দৈনিক অন্তত পাঁচবার)। তাই এর আগে বা পরে কিছু তালীম হওয়া শুধু সহজই নয়, অনেক ক্ষেত্রেই তা প্রয়োজনীয়। বিশেষকরে তাদের জন্যে যারা মাদ্রাসায় গিয়ে দ্বীন শিক্ষার কাজে শরিক হতে পারে না।

আজ আমরা মসজিদের প্রয়োজনকে শুধু নামায আদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে রেখেছি। এজন্যে মসজিদের প্রয়োজনও আমাদের কাছে অনেক কমে এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সামান্য ঝড়-বাতাসের নিদর্শন দেখলে দ্রুততার সাথে মসজিদে গমন করতেন। যেকোন পেরেশানিতে বা বিপদের আবহ দেখলে মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কাছে আশ্রয় কামনা করতেন। কিন্তু আমরা ছোট বড় যেকোন বিপদাপদে ছুটে যাই বাড়িঘরে বা বন্ধুবান্ধব ও পরিবারে। দুর্যোগের সময় মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কাছে আশ্রয় কামনার আদর্শ ভুলেই গেছি। এভাবেই মসজিদের প্রয়োজনীয়তা সীমিত করে ফেলেছি। যার করুণ দশা আজ মুসলিম সমাজে প্রতিফলিত।

আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নাভীর নীচের অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা

নাভীর নীচের অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা হলো : পায়ের পাতার উপর ভর করে বসা অবস্থায় নাভী থেকে চার পাঁচ আঙ্গুল পরিমাণ নীচে যে ভাঁজ বা রেখা সৃষ্টি হয় ...