বাংলাদেশে একজন লেখক আছেন, আসলে তার মতো অনেক লেখকই আছেন কিন্তু তার বিশেষত্ব আলাদা। তিনি নাকি পাক বাহিনিকে মুরগি সরবারহ করতেন। লোকটা নিউজের ফ্রন্ট পেজে থাকার জন্যে মাঝে মধ্যেই আবোল তাবোল বকেন। সম্প্রতি হিন্দু বোদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্য পরিষধে গিয়ে পাবনার যাওয়ার উপযুক্ততা যাচাই করে এসেছেন। তাতে তিনি লেটারমার্ক নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার সেই বক্তব্যকে ঘিরে আজকের লেখা।
লোকটা বলেছে, "একাত্তরে কী আমরা যুদ্ধ করেছি স্বাধীন বাংলাদেশে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ রাখার জন্য? এখনো যদি রাষ্ট্রধর্ম থাকে তাহলে পাকিস্তান ভাঙ্গার কী দরকার ছিল?" এই কথা দ্বারা বুঝা যায় একাত্তরের যুদ্ধ মূলত পাকিস্তানের যুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে ছিলো না। ছিলো এদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ বানাতে বা প্রকারান্তে ইসলামকে এদেশ থেকে মুছে ফেলতে। আর এজন্যই হিন্দুপ্রধান ভারত সর্বান্তকরণে সহায়তা করেছে। অতএব ফলাফলে এলো, একাত্তরের যুদ্ধ ছিলো মুসলমান ও অমুসলিমদের মাঝে ধর্মযুদ্ধ!
তাহলে এবার আসি স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের হয়ে কারা যুদ্ধ করেছেন? ইতিহাস খুঁজে দেখুন, শহীদদের নামগুলো পড়ে দেখুন; স্বাধীনতার জন্যে বুকের তাজা রক্ত যারা নিঃসংশয়ে উৎসর্গ করেছেন তাদের বেশিরভাগ ছিলো মুসলমান। হিন্দুরা তো টোপলা বেধে দাদাদের দেশে পাড়ি জমিয়েছিলো। "শরণার্থী-১৯৭১" উল্লেখ করা হয়, "১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত শরণার্থীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে ৯৮ লাখ ৯৯ হাজার ৩০৫ জনে এসে দাঁড়ায়। শরণার্থীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ছিল হিন্দু। আগস্ট ১৯৭১ পর্যন্ত হিন্দুদের সংখ্যা ছিল ৬৯ লাখ ৭১ হাজার এবং মুসলিম ও অন্য ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ছিল প্রায় ছয় লাখ।"
যেসব মুসলমানের রক্তে রচিত হলো স্বাধীনতার গল্প, সেই তারা তাদের ধর্মকেই বিলিন করতে নাকি এদেশ স্বাধীন করেছেন। কী অযৌক্তিক প্রলাপ!
আমি বলবো, স্বাধীনতার চেতনাকে নিয়ে যারা ব্যবসা করছে হয়ত তাদের মনে ছিলো এই ঘৃণ্য অভিপ্রায়। যারা তামার উত্তপ্ত বুলেট বুকে ধারণ করেছে তাদের উদ্দেশ্য কখনোই ছিলো না।
২. লোকটা আরো বলেছে, "সরকারিভাবে কখনো মসজিদ-মাদ্রাসা হয় না। ইসলামে আছে মসজিদ করবে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী। সরকারের টাকায় দেশে মাদ্রাসা হতে পারে না। এটা সংবিধানেও নেই, ইসলামেও নেই।"
এই বক্তব্যের বিপরীতে বলতে চাই, কাণ্ডজ্ঞানহীন লোকটার এই বক্তব্য সরকার বিরোধী। ইসলামের কথা না হয় বাদই দিলাম। সে কীভাবে বলতে পারলো এ কথা সংবিধানে নেই? যদি তাই হয় তবে বাংলাদেশ সরকার কি সংবিধান বিরোধী কাজ করছে? কারণ প্রতিবছরই ধর্মমন্ত্রনালয় থেকে দেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। ধর্মমন্ত্রনালয় এর ওয়েবসাইটে লেখা আছে, "ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে প্রতি বছরের ন্যায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের প্রত্যেক মাননীয় সংসদ সদস্যের নির্বাচনী এলাকার মসজিদ সংস্কার/মেরামত/পুনর্বাসনের জন্য ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা ও মন্দির সংস্কার/মেরামত/পুনর্বাসনের জন্য ৪০,০০০/- (চল্লিশ হাজার) টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং মহিলা আসনে নির্বাচিত প্রত্যেক মাননীয় সংসদ সদস্যের নির্বাচনী এলাকার মসজিদ সংস্কার/মেরামত/পুনর্বাসনের জন্য ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা ও মন্দির সংস্কার/মেরামত/পুনর্বাসনের জন্য ২০,০০০/- (বিশ হাজার) টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।"
আমার কথা হলো সরকারের অর্থায়নে মসজিদ করা যদি সংবিধান বিরোধী হয় তাহলে প্রতি বছর বাংলাদেশ সরকার কেনো এই কাজ করছেন? সরকারের প্রতি আবেদন, হয় এই অনুদান বন্ধ করুন, না হয় মুরগি ব্যবয়ায়ীকে ডিম থেরাপি দিয়ে সংবিধানের ধারা বুঝিয়ে দেন। খেয়ে দেয়ে আমাদের অনেক কাজ আছে। এসব ফালতু লোকের আবোল তাবোল শোনার সময় নেই।
৩. শাহরিয়ার কবির খোলস ছেড়ে আরো বলেছে, সরকারের টাকায় মসজিদ হতে পারে না। এটি নাকি ইসলামেও নেই। আদার ব্যাপারী জাহাজের খবর নেওয়ার মতো কাণ্ড। প্রথমত আমার মনে হয় লোকটা সরকারী ফান্ডের উৎসই জানে না। সরকার কি মাটি খুঁড়ে অর্থ সংগ্রহ করে নাকি জনগণের উপার্জনে ভাগ বসিয়ে দেশ চালায়, এ বিষয়ে তাকে অধ্যায়ন করতে বলছি।
লোকটা বলেছে, ইসলামে আছে মসজিদ করবে ব্যক্তি বা গোষ্ঠি। অথচ সে বুঝতেই পারছে না যে, এই ৯০% মুসলমান থেকে বিভিন্ন উপায়ে আদায়কৃত অর্থ দিয়েই সরকার মসজিদ মাদ্রাসা করছে। অতএব সরকারী ফান্ড প্রকারান্তে ব্যক্তি বা গোষ্ঠিরই টাকা। এই সহজ কথাটা বুঝার ক্ষমতা যার নেই সে "বিশিষ্ট লেখক বা কলামিস্ট" উপাধিতে ভূষিত হয় কীভাবে? আশ্চর্য!
আবার এই বেকুবটা ইসলাম সম্পর্কে লেখে! সে কি জানে, হযরত নূহ আ. এর মহাপ্লাবনে ধ্বংসপ্রাপ্ত পৃথিবীতে পূণরায় মানব সভ্যতার যাত্রা শুরু হয়েছিল আল্লাহর নবী হযরত ইবরাহীম আ. কর্তৃক পবিত্র মসজিদুল-আকসা ও কাবা শরীফ পূণঃনির্মাণের মাধ্যমে। পরিপূর্ণ দ্বীন-ইসলামের অগ্রযাত্রাও শুরু হয়েছিল মহানবী সা. কর্তৃক মদীনায় প্রতিষ্ঠিত ‘মসজিদে-নববী’ থেকে। মহানবী সাঃ কি তৎকালীন সময়ে মদীনার সরকার প্রধান ছিলেন না?
এরই ধারাবাহিকতায় খোলাফায়ে-রাশেদার পর বনী উমাইয়া খেলাফতের সময়ে সরকারী অনুদানে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে প্রতিষ্ঠিত হয় জামে আল উমাওরী আল কাবীর বা বৃহৎ উমাইয়া জামে মসজিদ। অতঃপর উমাইয়া খেলাফতের বর্ণাঢ্য হাজার বছরের শাসনামলে আফ্রিকায় জামে আল কাইরুয়ান, স্পেনের কর্ডোভায় জামে আল কুরতুবাসহ অসংখ্য মসজিদ নির্মাণ হয় সরকারী অনুদানে।
প্রাচীন সভ্যতার দেশ মিশরে দ্বিতীয় খোলাফায়ে রাশেদা হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাবের (রা.) শাসনামলে সাহাবী হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) কর্তৃক মিশর জয়ের পর ইসলামের কর্মকেন্দ্ররূপে সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠা করা হয় জামে আমর ইবনুল আস (রা.) মসজিদ। অতঃপর জামে আল আযহার মসজিদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফাতেমীয় খেলাফতের সূচনা হয় এবং তৎপরবর্তী মামলুকীয় সুলতানগণ জামে ইবনে তুলুন মসজিদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মিশরে তাদের শাসনকালের সূচনা করেন। এমনিভাবে উসমানী খলিফাগণ কনষ্টান্টিনোপল জয়ের পর সর্বপ্রথম সাহাবী হযরত আবু আইয়ুব আল আনসারী (রা.)-এর কবর সংলগ্ন আইয়ুব সুলতান মসজিদ ও তৎপরবর্তী জামে সুলতান আহমদ ও জামে সুলায়মানী মসজিদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাঁদের গৌরবময় ইসলামী খেলাফতের সূচনা করেন।" (দেখুন ইসলামী খেলাফতের স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাস।)
এসব ইতিহাস থেকে কেবল সরকারী অনুদানে মসজিদ নির্মাণের কথা নয়, তৎকালীন সময়ে সরকারী শাসন ব্যবস্থাই মসজিদ কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছিলো তার সুস্পষ্ট ধারণা মেলে। অথচ এক্সপাইরি মগজের অধিকারী লোকটা কি বললো!
৪. রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিয়ে শাহরিয়ার বলেছে, "রাখাইনে গণহত্যা হয়েছে এটা সত্য। কিন্তু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মৌলবাদের বিষবাস্প ছড়াচ্ছে জামায়াত ও হেফাজত। সেখানে তারা এক হাজার মাদ্রাসা করেছে। তাদের লক্ষ্য এক লাখ রোহিঙ্গাকে জেহাদি বানাবে। এটাতে শুধু বাংলাদেশ নয় সারা দক্ষিণ এশিয়া ঝুঁকিতে পড়বে।”
এবার তো তাকে পাগল বলতেই হয়। এ বিষয়টা একবার নয়, বারবার প্রামণিত হয়েছে যে, মাদ্রাসায় জঙ্গী বানানো হয় না। সরকারের প্রধান নেতৃবৃন্দও বহুবার সাফাই গেয়েছেন। দেশের জঙ্গীবাদের ইতিহাসও জনতা দেখেছে। আজ পর্যন্ত একটা জঙ্গী কার্যক্রম মাদ্রাসায় খুঁজে পেলো না কেউ। অথচ এই পাগলটা ডাহা মিথ্যা কথা বার বার বলে যাচ্ছে।
আসলে এটা শুধুই মিথ্যাচার নয়। মিথ্যাচারের আড়ালে এরা দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ঈমানী জযবাতে আঘাত হানার অপচেষ্টা করছে। খুব প্রচ্ছন্নভাবে সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিচ্ছে। এদের এসব অবান্তর কথা সরলমনা মুসলমানগণ সইতে না পেরে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু করুক তাই তারা চাচ্ছে।
আসলে এরাই দেশের আইন শৃঙ্খলতার ব্যাঘাত ঘটায়। এরা চায় না দেশের শান্তিপ্রিয় মুসলমানরা শান্তভাবে জীবন যাপন করুক। সর্বদা কোনো না কোন উস্কানীমূলক কথা বলে অস্থিরতা তৈরী করেই যাবে।
আমি প্রশাসনকে বলবো, প্রয়োজনে পাবনার মেন্টাল হসপিটালের পরিধি বাড়ানো হোক আর এদেরকে সেখানে আবদ্ধ রাখা হোক। দেখবেন দেশের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা খুব সহজ হয়ে যাবে।
০৯০৪১৮, সিরাজগঞ্জ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন