ধর্ষণ নিয়ে আগেও দুইবার লিখেছি। আজ বিশেষ এক পয়েন্ট নিয়ে বলবো ; তাও এক ভদ্রলোকের আর্টিকেল পড়ে এই লেখা।
ধর্ষণের কারণ নিয়ে তোলপাড় সোস্যাল জগত, বাদ নেই মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের মাথা খাটানো ও কলামিস্টদের কলম ঘোরানো। আজ নতুনভাবে একজনকে লিখতে দেখলাম। লেখক অনেক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলতে চাইছিলেন একটি কথা, যার সারমর্ম হলো, ধর্ষণ বন্ধে পতিতালয়ে বিশেষ ভূমিকা থাকতে পারে বা আছে। শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জের টানবাজারের পতিতালয়টি উচ্ছেদ করেছেন বলে লেখক ক্ষিণ আক্ষেপ জাহির করে লিখেছেন ,
"সমাজপতিরা নিজেদের ঠুনকো জনপ্রিয়তার জন্য যা করেছেন তাতে সমাজ উপকৃত হয়নি। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। এখন সরকারকে কঠোর থেকে কঠোরতর হতে হবে এ উঠতি প্রবণতা থেকে দেশকে বাঁচানোর জন্য।"
ভদ্রলোক পতিতালয়ের ফায়দা নিয়ে বলেন,
" দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় সবচেয়ে বেশি বিদেশি সৈন্যের সমাবেশ ঘটেছিলো কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে। এইসব সৈন্যদের প্রয়োজনে কুমিল্লা শহরের পতিতালয় ছোট বলে দাউদকান্দির গৌরিপুর বাজারের পার্শ্বে আরেকটা পতিতালয় স্থাপন করা হয়েছিল। যখন পতিতালয় ছিল তখন জোর করে মেয়ে তুলে নিয়ে ধর্ষণের কথা আজকের মতো তেমনভাবে কেউ শোনেনি।"
এবার আসি ভদ্রলোকের কথার পর্যালোচনায়। তিনি ধর্ষণ বন্ধে পতিতালয় স্থাপনের কথা না বললেও পতিতালয়কে বৈধতা দিয়ে গেছেন। তার বক্তব্যকে সহজ করে বললে বলতে হয়, কামনার আগুনে দহিত পুরুষ নামক প্রাণী যখন কাম বাসনা পূরণ করতে গিয়ে সহজেই একজন পার্টনার পেয়ে যাবে (হোক সে পতিতা) তখন সে ধর্ষণের পথে বা বাড়াবে না। লজিকাল কথা।
কিন্তু সব লজিক বাস্তবায়ন কি আদৌ সম্ভব? জ্যামের শহর ঢাকায় গাড়িতে বসে বসে আপনি ভাবছেন, যদি গাড়িতে পরীদের মতো ডানা থাকতো তবে নির্বিঘ্নে অফিসে পৌঁছা যেতো। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয়, আরে এতো পাগলের প্রলাপ। ঠিক ভদ্রলোকের সহস্র শব্দের লজিকটাও আমার কাছে পাগলের প্রলাপ লেগেছে। চোর যাতে জুতা চুরি করে মুসল্লিদের কষ্ট দিতে না পারে তাই চোরের চুরি করার সুবিদার্থে কিছু জুতা অতিরিক্ত রেখে দিলেন আর ভাবলেন চোরের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে। সে আর সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিবে না। আমি বলবো আপনি একটা ভোদরমার্কা বুদ্ধির মালিক।
এবার আমি তার বক্তব্যের কিছু ভিন্ন দিক তুলে ধরি।
১. ধর্ষণ বন্ধে পুরুষ নামক প্রাণীকে কোন পরিবর্তন হতে হবে না। তার ভাষায় "প্রাকৃতিক নিয়মের বাহিরে যাওয়া সম্ভব নয় বলে নারী পুরুষের মিলন ঘটে। সে মোহন্তই হোক কিংবা ধর্ষকই হোক- মিলন জরুরি।" সুতরাং পুরুষকে মানসিকতা পরিবর্তনের শ্লোগান দেওয়ার কোন ফায়দা নেই। কীভাবে সেই মিলন হিংস্রতা ছাড়া হয় তারই আঞ্জাম দেওয়া। এজন্য লেখক পতিতালয় বৈধ রেখেছেন। আমি বলবো, জ্বনাব! প্রাকৃতিক নিয়মের বাহিরে যাওয়া সম্ভব নয় বলেই তো স্রষ্টা বিবাহের বিধান দিয়েছেন। মিলন যখন জরুরি তখন হোক না সে মিলন পবিত্র, সমাজবৈধ ও প্রতিটি নারীর আত্মমর্যাদাপূর্ণ। নারী-পুরুষের কাঙ্ক্ষিত মিলনের সর্বজন স্বীকৃত পন্থা বিবাহকে এড়িয়ে গিয়ে বিকৃত পন্থার পিছে পড়ার কী অর্থ? বিবাহকে কঠিণ থেকে কঠিণ বানানো হচ্ছে। ১৮,২৩ এর নিচে বিয়ে করা যাবে না। অথচ ১৮,২৩ এর নিচে চুটিয়ে প্রেম করা যাবে। পরস্পরের সম্মতিক্রমে যৌনাচার করা যাবে। এটা কোন দোষণীয় নয়। কিন্তু এই বয়সের নিচে পরস্পরের সম্মতিক্রমে বিবাহ করে মিলন করা অপরাধ। কি অসম লজিক! থুতু দিতে মনে চায় এসবে।
২. লেখক বলেছেন, কলকাতার সোনাগাছি পতিতাপল্লী না থাকলে কলকাতায় মেয়েলোক লুট হতো।” পতিতালয় হওয়ায় বুঝলাম কলকাতায় আর মেয়ে লুট হতো না। কিন্তু সেই সোনাগাছির অসহায় পতিতা কারা? দাউদকান্দির গৌরিপুর বাজারের পার্শ্বে আরেকটা পতিতালয় স্থাপন করা হয়েছিল। সেই পতিতালয়ে কাদেরকে নেয়া হয়েছিল? কীভাবে?
“প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২০০ থেকে ৪০০ নারী ও শিশু বাংলাদেশ থেকে পাচার হয় পাকিস্তানে। অপরদিকে ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষ প্রতি বছর ভারতে পাচার হচ্ছে। [অপরাধ বিজ্ঞান পরিচিতি, ড. বোরহান উদ্দিন খান,পৃ- ২৭৯]”
এবং এইসব পাচারকৃত নারীদের বাধ্যতামূলক পতিতাবৃত্তি,অশ্লীল ছবি নির্মাণ ও ভিক্ষাবৃত্তিতে ব্যবহার করা হয়।
‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)’ এর তথ্য মতে, এখনো প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশী পাকিস্তানের পতিতালয়ে রয়েছে। আর কলকাতার পতিতালয়ের ১৪% নারী বাংলাদেশী। ‘কলকাতার সোনাগাছি পতিতালয়ে প্রায় ৪ হাজার বাংলাদেশি মেয়ে রয়েছে। (যায়যায়দিন)।’
লেখক কি বলতে চাইছেন যে, এরা আগ্রহী হয়েই ঘৃণ্য পথ অবলম্বন করেছে? নাকি পতিতাবৃত্তি একটি সম্মানিত পেশা যার জন্যে হাজারো নারী উন্মুখ হয়ে আছে। নাকি লেখক মনে করেছেন, পতিতারা সোফিয়ার মত না হলেও এক ধরণের রোবট, তারা কি মানুষ না? তাদেরও রাষ্ট্রে সম্মান নিয়ে বাঁচার অধিকার আছে। তাদের কে কতিপয় লোভী পুরুষের মুখে ঠেলে দিয়ে ধর্ষণ রোধের চিন্তা অবান্তর। নারীদের পতিতা বানিয়ে সম্ভোগ করা যদি সভ্যতা হয়, আপনি তাহলে নারী স্বাধীনতার বিরোধী ও পরোক্ষ ধর্ষণের পক্ষেই বলা চলে।
লেখা লম্বা হবে বিধায় আর লিখলাম না। আসলে এসব অকার্যকর মস্তিষ্কের লোকেরা চায় ভিন্ন কিছু। এদেশের পুরুষের মানসিক পরিবর্তন না হোক। ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগরূক না হোক। দেশের নারীরা পোশাকের নামে যাচ্ছে তাই পরিধান করুক। পর্নোগ্রাফি আর অশ্লীল ছবির ব্যবসা রমরমিয়ে চলুক। "প্রাকৃতিক নিয়মের বাহিরে যাওয়া সম্ভব নয়। নারী পুরুষের মিলন ঘটবেই। সে মোহন্তই হোক কিংবা ধর্ষকই হোক- মিলন জরুরি।" এজন্যে পতিতালয়ের বৈধতা ও প্রসার চাই।
নষ্ট গর্ভ থেকে হলেই এত নষ্টামিপ্রিয় হয় মানুষ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন