শনিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৮

বিবাহকে ত্বরান্বিত করি।

আগে গ্রাম দেশে একটা কথা প্রচলিত ছিলো, এমনকি এর প্রয়োগও ছিলো অনেকাংশে।
“বাদাইম্মা পোলারে বিয়া দাও, দেখবে সব ঠিক হইয়া যাইবো”।
দেখা যেত, যারা সমাজ সংসারে বা কাম কাজে অমনোযোগী ছিলো, বিয়ের পর সংসার বাচ্চা নিয়ে বেশ দায়িত্বশীল হয়ে ওঠে। সে তুলনায় আজ বড় অসমতা বিরাজ করছে জগত সংসারে।

নিম্নবিত্তের কথা না হয় বাদই দিলাম। বর্তমানের উন্নয়নশীল বাংলাদেশের একজন মধ্যবিত্তের সন্তানকে বিবাহ মালা গলায় দিতে ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশটা বছর অপেক্ষা করতে হয়। পঁচিশ থেকে ত্রিশ বছর যায় লেখা পড়া আর চাকরীর খোঁজে। এরপর দু চার বছর যায় বিয়ের খরচ আর সংসার গোছাতে। উপরোন্তু যদি হয় সে বাপের বড় ছেলে তবে তো কথাই নেই। ছোটদের পড়ালেখার গুরুদায়িত্বও বর্তায় তার কাঁধে। এভাবেই বড় ছেলেটিকে বিয়ের পিঁড়িতে পঁয়ত্রিশের ঝুনা হাড় নিয়ে বসতে হয়।

অথচ একটা ছেলে সাবালক হয় পনের বছরেই। এরপর তাকে আরো পনের বিশ বছর শারীরিক চাহিদা হয় পুষে রাখতে হয়, না হয় অবৈধ পন্থায় মেটাতে বাধ্য। আজ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ছেলের প্রতি কেন এই অবিচার? তার অপরাধ কী এটাই যে সে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চেয়েছে। অথচ তার সমবয়সী অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত সহপাঠিরা অনেক আগেই বিয়ে করে দুই সন্তানের জনক হয়ে গোঁফে তা দেয়।

এডুকেশন পদ্ধতির এই বলির শিকার বহু শিক্ষার্থী রয়েছে যারা না পারে কিছু করতে। না পারে কিছু বলতে, না পারে পিছু হটতে।। এডুকেশন সিস্টেমটা কি আরো শর্ট করে আনা যায় না? ১৮-২০ বছরে জরুরী পড়ালেখা শেষ, চাকুরী পাবে ২২ বছরে, সবগুছিয়ে বিয়ে করবে ২৫ বছরে, আর যার সামর্থ আছে, সে সুযোগ পেলেই বিয়ে করে ফেলবে।

এখানে বিয়ের ব্যাপারটা গুরুত্ব পাচ্ছে কয়েকটা কারণে।
১. ধর্মীয় কারণ। হ্যাঁ, একটা ছেলের যখন পঁচিশ বছর বয়স হয়ে যায় স্বভাবতই সে তার জৈবিক চাহিদা নিবারণে কার্যকরী হয়ে পড়ে। দীর্ঘ এক সময় তার শারীরিক চাহিদাকে দাবিয়ে রাখলেও নির্দিষ্ট সময়ের পর আর সম্ভব হয় না। তখন সে বৈধ পন্থার অবর্তমানে অবৈধ উপায়ে চাহিদা নিবারণ করে। এজন্যই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহের প্রতি উৎসাহিত বলেন, হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মাঝে যারা বিয়ে করতে সক্ষম তারা যেন বিয়ে করে নেয়। কারণ বিয়ে দৃষ্টি অবনত রাখতে এবং গুপ্তাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষায় অধিক সহায়ক আর যে বিয়ে করতে সক্ষম নয় সে যেন রোযা রাখে। কেননা রোযা তার যৌনক্ষুধাকে দমিত করবে। [বোখারি:২/৭৫৮,মুসলিম:১/৪৪৯, ইবনে মাজা:১৩২]
রাসূলুল্লাহ সা. আরও ইরশাদ  করেন- তিন শ্রেণীর লোককে আল্লাহ অবশ্যই সাহায্য করবেন-১. স্বাধীন হওয়ার চুক্তিতে আবদ্ধ গোলাম, যে নিজ মুক্তিপণ আদায়ের ইচ্ছা রাখে, ২. চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার উদ্দেশ্যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ব্যক্তি, ৩. আল্লাহর পথে জিদাহকারী। [তিরমিযী:২/২৯৫;৪; নাসায়ী:২/৫৮;ইবনে মাজা;১৮১]
অন্য এক বর্ণনায় আনাস রা. বলেন, মহানবী সা. ইরশাদ করেছেন- কোন ব্যক্তি যখন বিয়ে করল তখন সে যেন দ্বীনের অর্ধেকটা পূর্ণ করে ফেলল। এখন সে যেন বাকী অর্ধাংশের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে। [মিশকাত:২/২৬৮]
উপরোক্ত হাদীসগুলো দ্বারা বুঝা যায় একজন মুসলিম যুবকের ঈমান ও আমলের হেফাজতের জন্যে বিয়ে অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপায়। অশ্লীলতায় ভরপুর সমাজের রন্ধ্র রন্ধ্র যখন কামনার অগ্নিবেড়ায় আবদ্ধ তখন তেজস্বান কোন্ নরের সাধ্য আছে তা এড়িয়ে চলার? অতএব এটাই কি ভাল নয় যে, সে আগুন নির্বাপিত হবে বিবাহ নামক শুদ্ধ জলে!

২, যৌক্তিক ও বাস্তব অভিজ্ঞতা দাবী। হ্যাঁ, বাস্তবতার দাবীও বিবাব বিধানকে ত্বরান্বিত করা। বহমান এ কুরুচিপূর্ণ সময়ে যৌন সামগ্রী সহজলভ্যতার সূত্রধরে আজ অনেক যুবকই সেক্সুয়াল ফ্রাস্টেটেড। প্রেম ভালোবাসাসহ  উল্টাপাল্টা কিছু করতে গিয়ে পড়ালেখায় মনযোগ হারাচ্ছে। মনযোগ আনতে এখন মোটিভেশনাল স্পিচ নিচ্ছে। আজকাল মোটিভেশনাল স্পিচ এত মার্কেট পাচ্ছে কাদের কারণে?
এখন যদি শিক্ষাব্যবস্থায় এমন পরিবর্তন আনা যায়, যা দ্বারা মূল শিক্ষাটা আরো সংক্ষিপ্ত সময় লাগবে, প্রফেশনাল ক্ষেত্রে আরো কম বয়সে ঢুকতে পারবে। একইসাথে বিয়ে সুবিধামত করতে পারবে, কোন ধরাবাধা থাকবে না, তবে পুরো সমাজ ব্যবস্থায় আরো অনেক গতিশীলতা আনা সম্ভব।

৩. কিছু দিন আগে তুলনামূলক অল্পবয়সে বিয়ে কিছু ফায়দা পড়েছিলাম। আমার কাছে বেশ ভালই লেগেছিল। আমি বলবো, যদি বিয়েকে ত্রিশের পরে না নেওয়া যায় তবে নিম্নবর্ণিত কিছু উপকারিতাও বোনাস হিসেবে পাওয়া যায়। যেমনঃ

০১. আপনি যদি ৩০ পার করে বিয়ে করেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আপনার বয়সের কারণে আপনার মধ্যে যে গাম্ভীর্য চলে আসবে তার জন্য সম্পর্ক খুব বেশি মধুর ও ঘনিষ্ঠ হবে না। ব্যাপারটি বরং এমন হবে যে, বিয়ে করা উচিত তাই বিয়ে করেছি। এ কারণে আগেই বিয়ে করা ভালো। যখন আবেগ কাজ করে অনেক।

০২. বেশি বয়সে বিয়ে করলে স্বামী-স্ত্রী নিজেদের জন্য কতটা সময় পান? বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সন্তানের দায়িত্ব এসে পড়ে। আর সন্তান হয়ে গেলে দু'জনের একান্ত সময় কাটানো খুব বেশি হয়ে ওঠে না। কিন্তু অল্প বয়সে বিয়ে করলে সঙ্গীর সাথে অনেকটা সময় পাওয়া যায়। এতে সম্পর্ক অনেক ভালো ও মধুর থাকে।

০৩. 'একজনের চেয়ে দু'জন ভালো' -বিষয়টি নিশ্চয়ই না বোঝার কথা নয়। একাই সুখ-দুঃখ ভোগ করার চেয়ে দু'জনে ভাগাভাগি করে নিলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। অল্প বয়সে বিয়ে করলে জীবনের সবকিছু ভাগ করে নেয়া যায়। ফলে মানসিক চাপটাও কম পড়ে।

০৪. সন্তানের জন্য খুব ভালো মাতা-পিতার উদাহরণ হতে পারবেন যদি বিয়ে আগে করে ফেলেন। আপনি দেরিতে বিয়ে করলে সন্তান মানুষ করার বিষয়টিও পিছিয়ে যাবে। আর আপনার মানিসকতাও কিন্তু দিনকে দিন নষ্ট হতে থাকবে।

০৫. দুর্ভাগ্যবশত অনেকেই বিয়ের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তাই এখন ডিভোর্সের সংখ্যাও বাড়ছে। জলদি বিয়ে করার কিন্তু এই দিক থেকেও সুবিধা রয়েছে। যদি অল্প বয়সে বিয়ে করার পর, আল্লাহ না করুন কোনো কারণে যদি সম্পর্ক ভেঙেও যায়, তারপরও জীবনটাকে নতুন করে গুছিয়ে নেয়ার দ্বিতীয় সুযোগ পাওয়া যায়।

০৬. আগে বিয়ে করলে আপনার কাছে এসে কেউ ‘কেন বিয়ে করছ না’, ‘কবে বিয়ে করবে’, ‘বয়স বেড়ে যাচ্ছে।' ‘কাউকে পছন্দ কর কি’ ইত্যাদি বিরক্তিকর কথা শোনার হাত থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।

অতএব, আসুন শ্লোগান ধরি,
"পঁচিশের মধ্যেই বিয়ে করি, সমৃদ্ধশালী উম্মত গড়ি।"
😎😎😎😎😎😎😎😎

২৮০৪১৮, সিরাজগঞ্জ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নাভীর নীচের অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা

নাভীর নীচের অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা হলো : পায়ের পাতার উপর ভর করে বসা অবস্থায় নাভী থেকে চার পাঁচ আঙ্গুল পরিমাণ নীচে যে ভাঁজ বা রেখা সৃষ্টি হয় ...